1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্পোরেট-রাজনৈতিক চক্রে মিডিয়া, বের হওয়ার পথ নেই

গৌতম হোড়
৮ মে ২০২১

কর্পোরেটই তো চালায় মিডিয়াকে৷ ভারতে অবশ্য কর্পোরেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক নেতারা৷ তারাও প্রচুর চ্যানেল বা কাগজের মালিক৷

Indien Patna | Gupteshwar Pandey gestikuliert zu Medienvertretern
ছবি: A P Dube/Hindustan Times/Imago Images

সংবাদপত্র, নিউজ চ্যানেল, পত্রিকা, ডিজিটাল নিউজ প্ল্যাটফর্ম সবই হলো ব্যবসা, নিখাদ ব্যবসা৷ আর পাঁচটা ব্যবসার মতো এখানেও মন্ত্র একটাই, প্রডাক্ট বেচতে হবে৷ বিজ্ঞাপন পেতে হবে৷ লাভের কড়ি ঘরে আনতে হবে৷ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য কেউ বড় আকারে খবরের কাগজ করেন না৷ সাংবাদিকতাও নয়৷ তবে অন্য ব্যবসার সঙ্গে ফারাকটা হলো, মিডিয়া জনমত গঠন করতে পারে, কোনো একদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে, যেটা আর পাঁচটা ব্যবসা পারে না৷ আর তাই কর্পোরেট, রাজনৈতিক নেতাদের নজর পড়েছে মিডিয়ার উপর৷ এই সব কর্পোরেটের কাছে মিডিয়া প্রধান ব্যবসা নয়, এটা হলো সহায়ক ব্যবসা৷

এখন ভারতের মিডিয়ার জগতে বাস্তব ছবিটা হলো, বেশিরভাগ মিডিয়া সংস্থার মালিক হয় কর্পোরেট বা রাজনৈতিক নেতা৷ ভারতে নিউজ টেলিভিশনের সব চেয়ে বড় চেইন হলো টিভি১৮৷ প্রায় প্রতিটি প্রধান ভাষায় টিভি১৮-র নিউজ চ্যানেল আছে৷ তার মালিক মুকেশ আম্বানির গোষ্ঠী রিলায়েন্স৷ নিজেদের টিভি চ্যানেল ছাড়াও প্রচুর মিডিয়া গোষ্ঠীর শেয়ার কিনে রেখেছে আম্বানির রিলায়েন্স৷

দিল্লির অন্যতম প্রধান ইংরাজি সংবাদপত্র হিন্দুস্তান টাইমস, যার মালিক বিড়লা শিল্পগোষ্ঠীর শোভনা ভারতীয়া৷ উত্তর প্রদেশে তাদের বড় কারখানা আছে৷ তার ও তার স্বামী অনেক শিল্প সংস্থার মালিক৷

দেশের অন্তত ছয়টি ভাষায়  খবরের কাগজ, পত্রিকা, নিউজ টেলিভিশন চ্যানেল, পডকাস্ট, ডিজিটাল নিউজ, অনলাইন গানের প্ল্যাটফর্ম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মিলিয়ে বিশাল ব্যবসা বেনেট কোলম্যান অ্যান্ড কোম্পানির, যার মালিক জৈন পরিবার৷ তারা এখন সংবাদপত্র জগতের সব চেয়ে বড় কর্পোরেট সংস্থা৷ তবে তাদের কাছে সংবাদপত্রের ব্যবসাই প্রধান৷ এছাড়া তারা শিক্ষা সংস্থার মালিক৷

হিন্দি সংবাদপত্রের জগতে অন্যতম বড় নাম দৈনিক জাগরণ, যার মালিক বিজেপি-র সাংসদ ছিলেন৷  তাদেরও সুগার মিল সহ অন্য নানা ধরনের ব্যবসা আছে৷ পাইয়োনিয়ারের সাবেক সম্পাদক ও সাবেক মালিক চন্দন মিত্র বিজেপি-র সাংসদ ছিলেন, পরে অবশ্য তিনি তৃণমূলে যোগ দেন৷ ওড়িশায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী শতপথির ছেলে তথাগত শতপথি কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিজেডি-র সাংসদ ছিলেন৷ তিনি একটি সংবাদপত্র চালান৷ দক্ষিণ ভারতের এক মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার একটি বড় সংবাদপত্র গোষ্ঠীর মালিক৷

তামিলনাড়ুতে ডিএমকে নেতা মুরোসলি মারান রাজ্যের প্রধান টিভি নেটওয়ার্কের মালিক৷ সাবেক কংগ্রেস সাংসদ রাজীব শুক্লার স্ত্রী অনুরাধা প্রসাদ নিউজ ২৪-এর মালিক৷ তিনি আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের বোন৷ ইন্ডিয়া নিউজের মালিক আবার কংগ্রেস নেতার ছেলে৷ মহারাষ্ট্রের লোকমতের মালিক কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত৷

কর্পোরেটের হাতে, রাজনৈতিক নেতার হাতে মিডিয়ার মালিকানা থাকা মানে, ক্ষমতায় যে দল থাকবে, সেই দলের হয়েই সেই সব মিডিয়া কথা বলবে৷ কর্পোরেটের পক্ষে অসুবিধাজনক কোনো খবর দেখানো বা ছাপা হবে না, হলেও গুরুত্বহীনভাবে হবে৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

বছর কয়েক আগে দেশের অন্যতম প্রধান ইংরেজি টিভি চ্যানেল থেকে আমার বন্ধু অকাল অবসর নিল৷ ইনপুট এডিটরের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে৷ কেন? বন্ধুর যুক্তি, ‘‘আর পারছিলাম না৷ মানসিক চাপ এতটাই প্রবল হচ্ছিল যে, তার প্রভাব শরীরের উপর পড়ছিল৷’’ কেমন মানসিক চাপ? বন্ধুর ব্যাখ্যা, ‘‘ফতোয়া ছিল, দিনের আসল খবর অসুবিধাজনক হলে দেয়া যাবে না৷ অন্য চাঞ্চল্যকর খবরের খোঁজ করতে হবে৷’’  দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এই চাপ নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ তাই অবসর৷ এখন তার আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, কিন্তু মানসিক দিক দিয়ে পুরো চাঙ্গা৷

খবরের কাগজ বা চ্যানেল চালাতে প্রচুর অর্থ লাগে৷ আর সেই অর্থ আসে বিজ্ঞাপন থেকে৷ ১২ পাতার একটা রঙিন খবরের কাগজের প্রতিটি কপির জন্য অন্ততপক্ষে ছয়-সাত টাকা খরচ হয়৷ তা বিক্রি হয় চার টাকায়৷  হকারদের কমিশন বাদ দিয়ে হাতে থাকে দুই টাকা ২০ পয়সার মতো৷ ফলে ক্ষতি ছাপিয়ে লাভ করতে গেলে বিজ্ঞাপন চাই৷ ভারতে বেসরকারি বিজ্ঞাপন তো আছেই৷ আর আছে বিপুল পরিমাণে সরকারি বিজ্ঞাপন৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিজ্ঞাপন৷ অভিযোগ, যে সরকারের বিরুদ্ধে লেখালিখি হবে বা টিভিতে খবর হবে, সেই সরকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়৷ এটা না কি মোটামুটি সব সরকারের ক্ষেত্রেই সত্যি৷ রাহুল গান্ধী কেঁদে ভাসিয়ে দেন, কংগ্রেসের খবর টিভিতে দেখানো হয় না বলে৷ খবরের কাগজে ছাপা হয় না বলে৷ তিনি একটা সময় প্রতিটি সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করতেন, বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে না কি এই অবস্থা৷ তিনি স্লোগান দিলেন, ডরো মত৷

কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর দেখা গেল,  তার স্লোগান এবং তিনি দুটোই  ভেসে গেছে৷ লক্ষীলাভের পিছনে না ছুটলে বাঁচবে কেমন করে? বাণিজ্যে বসত করে লক্ষ্মী৷ সেই বানিজ্য করতে গেলে সরকারি বিজ্ঞাপন দরকার৷ কর্পোরেটের স্বার্থ, রাজনৈতিক দলের স্বার্থ দেখা দরকার৷ এই চক্র থেকে মিডিয়ার বেরিয়ে আসা কঠিন, প্রায় অসম্ভব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ