বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র কর্মকর্তারা শুধু ভ্রমণবাবদই ১৯ কোটি ডলারের বেশি খরচ করেছেন এক বছরে৷ সংস্থাটির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও৷ উদ্দেশ্য পূরণে যে অর্থ দরকার তা অনেক ক্ষেত্রেই পায় না সংস্থাটি৷ কিন্তু তাতে কর্মকর্তাদের বিলাসিতার ঘাটতি হয় না৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতে তারা নিয়ম ভেঙ্গে উড়োজাহাজে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেন, শেষ মুহূর্তে চড়া দামের টিকেট কেনেন, এমনকি ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেয়ার যথাযথ প্রক্রিয়াও অনুসরণ করেন না৷ ২০১৭ সালের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ডাব্লিউএইচও-র কর্মকর্তারা ভ্রমণ বাবদ মোট ১৯ দশমিক দুই কোটি ডলার বা প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন৷ বার্তা সংস্থা এপি এসব তথ্য প্রকাশ করেছে৷ এ নিয়ে ডাব্লিউএইচও-র পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, খরচের ৫৫ ভাগই ব্যয় হয়েছে সংস্থার বাহিরের বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন দেশের আবাসিক প্রতিনিধিদের পেছনে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠকে যোগ দিতে আসার কারণে এই খরচ করতে হয়েছে৷ তবে ভ্রমণ খরচ কমানোর জন্য গত বছর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
আবার ইবোলার হানা
২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ এ মাসের শুরুর দিকে কঙ্গোতে আবারো নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করা হয়৷ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অসুখ বনাম বিজ্ঞান
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়৷ সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়৷ ১৯৭৬ সালের পর এ নিয়ে নবমবারের মতো ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কঙ্গোতে৷ ভীষণরকম ছোঁয়াচে এই ভাইরাস রুখতে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের অভিযান৷ কঙ্গোর গবেষণাগারে চলছে ইবোলা সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
রোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা
কঙ্গোতে ইবোলার প্রাদুর্ভাব ‘ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা’ স্পষ্ট৷ কারণ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে৷ এর মধ্যেই রোগের মোকাবিলা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ ছবিতে কঙ্গোর জনৈক ব্যক্তির শরীরে ক্লোরিন স্প্রে করছেন স্বাস্থ্যকর্মী৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অন্যরকম স্বাগত জানাচ্ছে কঙ্গো
ইবোলা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ‘মহামারীর সময়ের’ মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগ মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়েছে যাচ্ছেন৷ এমনকি বিমানে করে যাঁরা কঙ্গোতে এসে নামছেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
নানারকম কর্মসূচি
কঙ্গোর শহরাঞ্চলেও বহু মানুষের শরীরে ইবোলা শনাক্ত করা হয়েছে৷ ইবোলার প্রাদুর্ভাব যাতে শহর এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সর্বত্র ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে৷ ছবিতে বিকোরো হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/J. R. N'Kengo
ইবোলা রুখতে জোর
ইবোলাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এমনকি বিমানবন্দরেও সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
জরুরি
ইবোলা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ৷ তাই কোনোভাবেই ইবোলা ভাইরাস আটকাতে দেরি করা যাবে না৷ সাধারণভাবে পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় যে কোনো সংক্রমণ ঠেকাতে৷ তাই কঙ্গোতেও ইবোলা রুখতে জরুরি পদক্ষেপ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
বিষাদ
কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকোরো শহর এবং ইবোকো নামের একটি গ্রামে নতুন করে দু’জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ইবোলায় আক্রান্ত৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই দু’জন নিয়ে মোট ৩১ জন ইবোলা আক্রান্ত রোগীকে সন্দেহের তালিকায় থাকা ৫২ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ ছবিতে কঙ্গোর একটি হাসপাতালের ব্যালকনিতে ইবোলা আক্রান্ত রোগীরা দাঁড়িয়ে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
দরকার টিকা
কঙ্গো নদীর তীরের জনপদ, অর্থাৎ বন্দর নগরী বানডাকা থেকে রাজধানী কিনশাসায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ তাই চিকিৎসা বা সেবাকর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনও চালু হয়েছে ইতিমধ্যে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
আপৎকালীন পরিস্থিতি
আক্রান্ত রোগীর শরীর নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ থেকে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ তাই কঙ্গোর সরকারকে এ মুহূর্তে রীতিমত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সজাগ থাকতে হচ্ছে, যাতে ইবোলা মহামারি না হয়ে দাঁড়ায়৷ ছবিতে উপযুক্ত সুরক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেওয়ার আপৎকালীন কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
ইবোলা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কঙ্গোর পার্শ্ববর্তী ন’টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে তারা৷ টিকাদানের জন্য কঙ্গোতে অস্থায়ী শিবিরও তৈরি হচ্ছে তাদের উদ্যোগে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
10 ছবি1 | 10
বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মোট বাজেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার, যার বড় অংশই সদস্য দেশগুলোর সরকারের দেয়া সহায়তা থেকেই আসে৷ চলতি সপ্তাহে সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে৷ সেখানে দাতাসংস্থা ও সদস্য দেশগুলোর কাছে ইবোলা-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় আরো বড় অঙ্কের অর্থ চাওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা৷
শুধু ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই ৫ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও৷ ঠিক এই সময়ে কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয়ের হিসাব ফাঁস হওয়ায় এই টাকা পাওয়াটা এখন কঠিন হতে পারে৷
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোফি হারম্যান বলেন, তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় খরচ কমাতে না পারায় তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে৷ এ কারণে নতুন করে অর্থ সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়বে৷ ‘‘ইবোলার জন্য আমাদের আরো অর্থ প্রয়োজন– এটি বলার আগে ডাব্লিউএইচওকে নিজেদের নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক করতে হবে,'' বলেন হারম্যান৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭০ বছর
কয়েকদিন আগেই ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র৷ গত ৭০ বছরে বিশ্বকে কী দিয়েছে ডাব্লিউএইচও ? চলুন দেখে নেয়া যাক....
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত
১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ সেদিন ছিল ৭ এপ্রিল৷ সেই হিসেবে এ মাসেই পালিত হলো জন্মদিন৷ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অংশগ্রহণে প্রথম বিশেষ সংস্থা এটি৷
ছবি: picture-alliance/akg/P. Almasy
মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানো
দুই দশক আগেও সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল৷ ১৯৯০ সালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেতো৷ ২০১৬ সালে মারা যায় ১৫ হাজারের মতো৷ মাতৃমৃত্যুহারও কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/B. Stirton
গড় আয়ু বেড়েছে
গড় আয়ু বৃদ্ধিতেও ভূমিকার রেখেছে ডাব্লিউএইচও৷
যদিও ইউরোপীয়দের তুলনায় আফ্রিকানদের আয়ু এখনও কুড়ি বছর কম , কিন্তু ১৯৯০ সালের তুলনায় আফ্রিকার জনগণের গড় আয়ু আট বছর বেড়েছে৷
এইডসে মৃত্যুহার কমছে
১৯৯৭ সাল থেকে এইচআইভিতে সংক্রমণের হার কমছে৷ তবে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বার্ষিক মৃত্যু সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছিল৷ ওই সময়ে প্রতিবছর প্রতি দুই লাখ মানুষ এইডসের কারণে মানা যেতো৷ বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৩৬ মিলিয়ন৷
ছবি: DW/Amós Zacarias
পরিষ্কার খাবার পানি পাচ্ছে অনেক বেশি মানুষ
কলেরা বা ডিপথেরিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখার মূল চাবিকাঠি-ই হচ্ছে হচ্ছে পরিস্কার পানীয় জল৷ গত ৩০ বছরে অনিরাপদ পানি পানের কারণে মৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী হ্রাস পেয়েছে৷ তবে ভারতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এখনো স্যানিটেশন ব্যবস্থার আরো উন্নতি প্রয়োজন৷ আগামীতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷
ছবি: AP
জীবন বাঁচায় পোলিও টিকা
একসময় বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনের জন্য বড় হুমকি ছিল পোলিও৷ তবে পোলিও টিকা আবিষ্কারের পর থেকে চিত্র ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে৷ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের অনেক দেশই এখন একেবারে পোলিওমুক্ত৷ ১৯৮৮ সালে সারা বিশ্বে মোট সাড়ে তিন লাখ পোলিও রোগী ছিল, ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা কমে ৩৭ হয়েছে৷