সবসময় এবং সব জায়গায় নাগালের মধ্যে থাকা, একই সঙ্গে অনেক কাজ করা, শিফটে কাজ করা – এ সব কিছুই মানসিক চাপ বাড়ায়৷ কিন্তু এ সব কি আদৌ পরিমাপ করা যায়?
ছবি: Fotolia/Pfluegl
বিজ্ঞাপন
কর্মক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা, ক্লান্তি, উত্সাহ হারানো – এ সব নিয়ে দীর্ঘ দিন তেমন মাথা ঘামানো হয়নি৷ ইতোমধ্যে কর্ম ক্ষেত্রে ‘মানসিক চাপ' একটা পরিচিত শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ‘‘প্রযুক্তির উন্নয়ন এত দ্রুত হচ্ছে যে, আমরা এখন বলতেই পারবো না, পেশা ক্ষেত্রে দশ বছর আগে অবস্থাটা কেমন ছিল৷'' বলেন মনস্তত্ত্ববিদ হিলট্রাউট পারিডোন৷
হাঁপ ছাড়ার সুযোগ থাকে না
মোবাইল টেলিফোনের সাহায্যে কর্মীরা সর্বক্ষণ কর্মদাতাদের আয়ত্তের মধ্যে থাকেন৷ অফিস ছুটির পর কিংবা সপ্তাহান্তে, যখন তখন৷ কিছুটা হাঁপ ছেড়ে নতুন করে শক্তি অর্জন করার সুযোগই থাকে না৷
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ চিনুন, জীবন বাঁচান
জার্মানির হার্ট ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর আনুমানিক তিন লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় জার্মানিতে৷ কিছু নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা যায়, সেরকম কিছু টিপস থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
হার্টের অসুখ মানেই মৃত্যু নয়!
সারা বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়৷ তবে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু অবধারিত নয়৷ জার্মানির হামবুর্গ শহরের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. টোমাস স্টাইন বলেন, ‘‘একটু সচেতন হলেই হার্ট অ্যাটাককে দূরে রাখা সম্ভব৷ অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক কিন্তু কখনো কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে হয় না৷’’
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
পেশাগত চাপ নয়
‘‘আজকের এই প্রতিযোগিতার যুগে যেসব মানুষ নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে, অর্থাৎ পেশাগত কারণে চাপের ভেতর থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি৷ তাই কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করতে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে’’, বলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্টাইন৷
ছবি: Fotolia/Pfluegl
হার্ট অ্যাটাক কি জানিয়ে আসে?
অনেকের ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক একেবারে হঠাৎ করেই হয়৷ অর্থাৎ আগে থেকে কিছুই বোঝা যায় না বা বোঝার উপায়ও থাকে না৷ কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য দেখা যায় যে, আগেরদিন বা কয়েক ঘণ্টা আগেই শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ যেমন বুকে ব্যথা হচ্ছে, আবার কারো বা মনে হয় দম বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী?
এক নাগাড়ে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে বুকের খাঁচা এবং পেটের ওপরের দিকটায় ব্যথা হয় এবং বমি হয়৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ টোমাস বলেন, ‘‘হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার সময় অনেক রোগীকেই বলতে শুনেছি, ‘আর সহ্য করতে পারছি না, বুকে প্রচণ্ড কষ্ট, ব্যথা আর অসম্ভব জ্বালা হচ্ছে’৷’’
ছবি: Max Tactic - Fotolia.com
হার্ট অ্যাটাকের কারণ বা ঝুঁকিগুলো কী?
অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, কম হাঁটা-চলা, ডায়বেটিস ইত্যাদি৷ তাছাড়াও বংশগত কারণেও হৃদরোগ বা স্ট্রোক হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance / Sven Simon
কিভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিগুলো থেকে সাবধান থাকলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব৷ এ জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, অর্থাৎ অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, মাংস থেকে দূরে থাকা৷ ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা উচিত৷ জীবনযাত্রার মান অনেকক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সক্ষম৷
ছবি: lunamarina/Fotolia.com
হার্ট অ্যাটাক মানেই মৃত্যু নয়!
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা গেলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো উচিত৷ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন
পেশাগত দায়িত্ব, পরিবার, সন্তান এবং অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে আজকের যান্ত্রিক জীবনে ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ স্ট্রেস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে৷ তাই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসতে হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা, নাচ, গান, বাগান করা বা অন্য কোনো সখকে বেছে নিন, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
8 ছবি1 | 8
এছাড়া একসাথে অনেক কাজ করতে হয় কর্মীদের৷ মাঝে মাঝে কাজে বাধা পড়ে৷ যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনোজগতে৷ শারীরিক ও মানসিক অসুখ বিসুখ দেখা দেয়৷ ‘‘যেমন হার্ট ও পেশির অসুখ, অবসন্নতা ইত্যাদি৷ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷ উত্সাহ স্তিমিত হয়৷ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়৷'' বলেন মনস্তত্ত্ববিদ পারিডোন৷ এরফলে অনেকেই পেশাগত জীবন থেকে বিদায় নেন৷ ২০১২ সালে প্রায় ৭৫ হাজার কর্মী মানসিক অসুস্থতার কারণে কাজে অপারগ হয়ে পড়েন৷
পরিমাপ করা কঠিন
কর্মজগতে মানসিক চাপ পরিমাপ করাটা বেশ কঠিন৷ এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই৷ অবশ্য গত বছর পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি দূর করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷ ‘‘জৈবিক, রাসায়নিক কিংবা যান্ত্রিক ঝুঁকির সঙ্গে এখন যুক্ত হলো মানসিক চাপও, যদিও তা ঠিকমতো মাপা যায় না৷'' জানান পারিডোন৷
এক্ষেত্রে কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে৷ কাজের চাপ সম্পর্কে তাঁদের বাস্তবানুগ ও প্রকৃত তথ্য দিতে হবে৷ চাপের মাত্রাটা বুঝতে হবে৷