নিম্নগামী জন্মহার ও বার্ধক্যে জর্জরিত জাপান এখন নজর দিচ্ছে প্রযুক্তি শিল্প ও অভিবাসনের দিকে, যাতে করে দক্ষ কর্মীর সংকট কিছুটা কমানো যায়৷
বিজ্ঞাপন
নার্সিং ও বয়স্ক মানুষের দেখাশোনার খাতে বড় সংকট দেখা দিচ্ছে জাপানে৷ এই সংকট রয়েছে নির্মাণ খাত ও ডেলিভারি ব্যবসাতেও৷ বড় ধরনের সংকট রয়েছে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদেরও৷
গত বছর শিক্ষা খাতে দক্ষ কর্মী টানতে পাঁচশ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (৩৭ কোটি বাংলাদেশি টাকা) বিনিয়োগ করে জাপান সরকার৷
সমাধানে অভিবাসন
আগের তুলনায় কম নারীরা কাজে ঢুকছেন, ফলে সেই দিকেও সংকট দেখা যাচ্ছে৷ জাপান সরকার একারণে নানা ধরনের সমাধানে গেলেও সম্প্রতি তারা নজর ঘুরিয়েছে বিদেশি কর্মীদের আকর্ষণ করতেও৷ একইসঙ্গে অভিবাসন নীতিকেও সহজ করার চেষ্টা করছে তারা৷
২০১৯ সালে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হয় যার মাধ্যমে যে খাতে সবচেয়ে চরম কর্মী সংকট, তাতে পাঁচ বছরের জন্য কাজ করতে আসতে পারবেন বিদেশিরা৷ এছাড়া, যারা ‘উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন’ কর্মী, তাদের কাছে সুযোগ থাকবে স্থায়ীভাবে জাপানে থেকে যাবার৷
টোকিওর রিকশাওয়ালিরা
টানা রিকশার দেখা আজকাল খুব কমই মেলে৷ খুবই পরিশ্রমসাধ্য কাজটি এতদিন জাপানের রাজধানী টোকিওর রাস্তায় পুরুষরাই করতেন৷ তবে এখন নারীরাও আসছেন৷ শুধু তাই নয়, সামাজিক মাধ্যমে তাদের ফলোয়ারও হয়েছে অনেক৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
টোকিওর রাস্তায় ওরা
জাপানের রাজধানী টোকিওর রাস্তায় ১৯ বছর বয়সি আকিনা সুজুকির মতো রিকশাওয়ালিদের দেখা মেলে৷ তিনি পর্যটকদের টানা রিকশায় করে ঘুরিয়ে দেখান শহর৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
টিকেট কাটতে হয়
এই রিকশায় চড়তে টিকেট কাটতে হয়৷ সেজন্য রয়েছে বুথ৷ ছবিতে নতুন রিকশাওয়ালি রিহো আরাইকে দেখা যাচ্ছে৷ ক্লান্ত এই তরুণী একটু বিরতি নিতে যাচ্ছেন৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
কঠিন প্রশিক্ষণ
রিকশা টানা এত সহজ কাজ না৷ এর জন্য প্রচুর শক্তি ও একাগ্রতা দরকার৷ সেই কাজটিই শিখছেন ২০ বছর বয়সি ইউমেকা সাকুরাই৷ চার মাস প্রশিক্ষণ নিতে হবে তাকে৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
সামাজিক মাধ্যমে প্রচার
এই পেশায় আসতে ইয়েমুকার আগ্রহ জন্মেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে৷ সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে অনেকে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন৷ তারা বেশ জনপ্রিয়ও হচ্ছেন৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
‘পুরুষের পেশা’
রিকশা চালানো শিখলেই যে কোম্পানিগুলোতে চাকরি মিলবে তার নিশ্চয়তা নেই৷ ৩০ বছর বয়সি মিসাটো অটোশি বলেন, এই পেশাকে এখনো পুরুষদের পেশা বলে মনে করা হয়৷ ‘‘আমি ভাবলাম যদি আমি এই পেশায় আসি তাতে মজাই হবে,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
পর্যটকদের জন্য
শিওরি ইয়োশিদা একজন রিকশাওয়ালি৷ তিনি পর্যটকদের ডাকছেন তার রিকশায় চড়তে৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
পর্যটকদের মনোরঞ্জন
তাইওয়ানের এক পর্যটক পরিবার চড়েছেন আকিনার রিকশায়৷ তাদের শুধু টোকিও ঘুরিয়েই দেখাচ্ছেন না আকিনা, ছবিও তুলে দিচ্ছেন৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
পরিশ্রমের কাজ
পর্যটকদের ঘুরিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ইউকা আকিমোতো৷ একেকটি রিকশার ওজন ২৫০ কেজি৷ ইউকা বলেন, প্রথমদিকে কাজটি আরো কঠিন লাগতো৷ প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার রিকশা টানেন প্রত্যেক রিকশাচালক৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
আয় ভালো
পরিশ্রমের কাজ হলেও আয় ভালো এই রিকশাচালকদের৷ টোকিওর গড় আয়ের চারগুণ আয় তাদের৷
ছবি: Issei Kato/REUTERS
9 ছবি1 | 9
টোকিও আশা করেছিল যে এই ব্যবস্থা চালু হবার পর অভিবাসী কর্মীদের ভিড় নামবে৷ অন্তত সাড়ে তিন লাখ কর্মীর আগমন আশা করেছিল তারা৷ কিন্তু প্রথম বছরের প্রথম মাসে, আসে তিন হাজার কর্মী, যার পর করোনা অতিমারিকালীন কড়াকড়ি অভিবাসীদের আগমন আরো কঠিন করে দেয়৷
সম্প্রতি আবার অভিবাসীদের টানতে সচেষ্ট হয়েছে জাপান৷ সোমবার তারা ঘোষণা করে যে, দক্ষ কর্মী আসতে পারবে এমন খাতের তালিকায় আরো চারটি কাজকে যুক্ত করা হয়েছে৷ সাথে, বাস, ট্রেন বা ট্রাকচালক হিসাবে আসার ভিসার সংখ্যাও বাড়াচ্ছে তারা৷
প্রযুক্তিখাতেও নজর দিচ্ছে জাপান
উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকায়, বিশেষ করে অটোমেশন, রোবোটিক্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়৷ জাপানের জনসংখ্যা প্রতি বছর কমছে৷ জার্মানির শহর প্রাংকফুর্টের জনসংখ্যার সমান জনবল হারাচ্ছে জাপান প্রতি বছর৷
এখন কর্মী সংকট মেটাতে রেস্টুরেন্টসহ নানা জায়গায় কাজে লাগানো হচ্ছে রোবটদের৷
প্রযুক্তি যেভাবে মানুষের কাজের জায়গা নিচ্ছে, তাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন না জাপানের জনতা ও শ্রম বিভাগও৷
জুলিয়ান রায়াল (টোকিও)/এসএস
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷