1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় অবৈধভাবে আসা ২১ বাংলাদেশিকে ঘিরে প্রশ্ন

১৭ ডিসেম্বর ২০২১

কলকাতায় এসে মানবপাচার চক্রের হোতাকে ধরেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ৷ এক খারিজি মাদ্রাসায় চোখের আড়ালে মানবপাচারের কাজ চলতো বলে তদন্তে উঠে আসছে৷

ছবির ডানের বাড়িটি থেকে ২১ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশছবি: Subrata Goswami/DW

কলকাতার আনন্দপুর থানা এলাকায় ১২ ডিসেম্বর ধরা পড়ে  এক মানবপাচার চক্রের পান্ডা৷ পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি একজন বাংলাদেশি, নাম মাহফুজুর রহমান৷

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের গুলশান কলোনিতে অভিযান চালায়৷ কলকাতা পুলিশ ও আনন্দপুর থানার সহযোগিতায় তারা একটি অধুনালুপ্ত মাদ্রাসায় হানা দিয়ে ২১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে৷ মাহফুজুরকে ইতিমধ্যে ট্রানজিট রিমান্ডে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে গিয়েছে সেখানকার পুলিশ৷

সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ

পুলিশ জানাচ্ছে, যে জায়গা থেকে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, লকডাউনের আগে সেখানে একটি খারিজি মাদ্রাসা চালু ছিল৷ পুলিশের দাবি, বছর দেড়েক ধরে মাহফুজুরের পরিকল্পনায় মানবপাচার চলছিল৷ মাহফুজুরের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযাগ ছিল বলেও দাবি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের৷ মাহফুজুর বাংলাদেশ থেকে চাকরিপ্রার্থী তরুণদের অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসে৷ কারো কাছেই বৈধ নথিপত্র থাকে না৷ ওই ঘিঞ্জি এলাকায় মূলত অবাঙালি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস৷ বাংলাদেশিদের সেখানে হিন্দি ভাষা শেখানো হতো৷ সেখান থেকে এক সময় তাদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ এর বিনিময়ে মাহফুজুর মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন অভিযোগ। এই পাচার চক্রে তার সঙ্গে আর কে কে আছে, তার খোঁজ চলছে৷

এটা পুলিশের ব্যর্থতা নিশ্চয়ই: সন্ধি মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

‘পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে অনেক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব’

খোদ কলকাতার বুকে বিদেশি নাগরিকের তৎপরতায় কীভাবে দিনের পর দিন চলে মানবপাচার? এ বিষয়ে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা পুলিশের ব্যর্থতা নিশ্চয়ই। এখন পুলিশের হাতে যে পরিকাঠামো রয়েছে, তা দিয়ে এ ধরনের অপরাধ রোখা সম্ভব।” তা হলে কি পুলিশে দক্ষতার অভাব? অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তার জবাব, ‘‘এর পিছনে রয়েছে রাজনীতি৷ প্রশাসন পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে অনেক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ এই লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা আছে৷ কিন্তু কোনো রাজ্যের সরকার তা কার্যকর করে না৷’’

অনুমোদিত মাদ্রাসা ৬১৪টি,  অননুমোদিত চার হাজার

এই ঘটনার পর ফের খারিজি মাদ্রাসা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ ভারতের সংবিধান সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি ও শিক্ষাদানের অধিকার দিয়েছে৷ তাই অনেক মাদ্রাসা সরকারি অনুমোদন ও অনুদান ছাড়া চলে৷ পশ্চিমবঙ্গে খারিজি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার৷ ৬১৪টি মাদ্রাসা সরকারি অনুমোদন ও অনুদানপ্রাপ্ত৷ বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর যে জঙ্গি মডিউলের খোঁজ মিলেছিল, তার অন্যতম কেন্দ্র ছিল শিমুলিয়া মাদ্রাসা৷ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আড়ালে দেশবিরোধী কাজ হয়- এমন অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠেছে৷ এ প্রসঙ্গে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত সমাজকর্মী, শিক্ষক কাজি মাসুম আখতারের মন্তব্য, ‘‘খারিজি মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষা দেওয়া হয় না৷ মূলত ধর্মাশ্রিত শিক্ষা দেওয়া হয়৷ এখানে যারা পড়ে, তাদের যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনা না থাকায় সহজে প্ররোচিত করা যায়৷’’

মাসুম আখতার জানান, এক মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাওয়াতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছিলেন, ‘‘মেটিয়াবুরুজের একটি মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়ানোর চেষ্টা করায় আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল৷ আমি এককভাবে লড়াই চালিয়েছি৷ বাংলার তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীদের কেউ আমার পাশে দাঁড়াননি৷ কারো মাদ্রাসার সংস্কার নিয়ে মাথাব্যথা নেই৷’’

মাদ্রাসা বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আধিকারিক বলেন, ‘‘এরকম কিছু কিছু মাদ্রাসা গড়ে ওঠে৷ আমরা কিছু জানি না৷ বলতেও পারবো না৷ মাদ্রাসা বোর্ড খারিজি মাদ্রাসাকে নিয়ন্ত্রণ করে না৷ তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে কোনো তথ্য নেই বোর্ডের কাছে৷’’

নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মাদ্রাসা শিক্ষা মন্ত্রী আব্দুস সাত্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খারাপ মানুষ যে কোনো জায়গাতেই খারাপ কাজ করতে পারে৷ সেজন্য খারিজি মাদ্রাসার দিকে আঙুল তোলা উচিত নয়৷ সরকারি অনুমোদন না-ই থাকতে পারে৷ বিষয়টা আইন-শৃঙ্খলার যখন, তখন সরকারের নজরদারি নিশ্চয়ই আছে৷’’

‘জাতীয় সংগীত গাওয়ানোর চেষ্টায় আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল’

This browser does not support the audio element.

প্রশ্ন যখন নিরাপত্তায়?

 মানবাধিকার কর্মী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র মনে করেন এ ধরনের ঘটনায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়া স্বাভাবিক এবং তা দূর করায় প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগী হওয়া উচিত, ‘‘আমাদের সুরক্ষিত থাকার অধিকার আছে। পুলিশ-প্রশাসন সজাগ না থাকলে সেই অধিকার রক্ষিত হবে না৷’’

পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে আসা বিদেশি নাগরিক ধরা পড়া নতুন ঘটনা নয়৷ ধরা পড়লেই এর দায় রাজ্য প্রশাসনের, নাকি কেন্দ্রের, রাজ্য পুলিশের, নাকি বিএসএফের- এসব প্রশ্নে মূল ঘটনা আড়ালে চলে যায়  বলে মনে করেন সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘একটা এলাকায় অপরিচিত কিছু মানু্য বসবাস করলে, তাদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়৷ তবে এটাকে যেমন শুধু পুলিশি অদক্ষতা বলা যায় না, তেমনি পুরো দোষ বিএসএফ-এর ঘাড়ে দিয়েও লাভ নেই৷ আমাদের সীমান্ত এত দীর্ঘ যে নিশ্ছিদ্র নজরদারি চালানো কঠিন৷ তাছাড়া মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আমাদের থেকে এগিয়ে৷ সেখান থেকে এত তরুণ এ দেশে কেন এলেন, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ