আরো একটা অস্ত্র কারখানা তৈরির পরিকল্পনা ছিল জামাত জঙ্গিদের। সম্প্রতি কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তিন জামাত জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের সঙ্গে আল-কায়দার যোগাযোগের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির অফিসাররাও তাদের জেরা করতে পারে বলে পুলিশ সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে।
নানা মত, নানা পথকে পাথেয় করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো৷ বাংলাদেশে মসজিদ থেকে আদালত, মেলা থেকে সিনেমা হল- কিছুই বাদ যায়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর থাবা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
ছবি: bdnews24.com২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
ছবি: DW/ISPR২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
ছবি: bdnews24.com২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
ছবি: APবিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
ছবি: Robert Richter২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
ছবি: bdnews24.com২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munirকিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com দক্ষিণ কলকাতা শহরতলির জমজমাট অঞ্চল হরিদেবপুর। গত কয়েকমাস ধরে চার জামাত জঙ্গি সেখানে গা ঢাকা দিয়েছিল বলে জানা গেছে। তারা ফেরিওয়ালা সেজে এলাকায় ঘুরে বেড়াত। কেউ ছাতা সারানোর কাজ করত, কেউ মশারি বিক্রি করত। স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা খবর পেয়ে সেখানে তাদের নজরে রাখতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পারে। ধৃতদের নাম নাজিউর রহমান ওরফে জোসেফ, মিকাইল খান ওরফে শেখ সাবির এবং রবিউল ইসলাম। বছর আড়াই আগে কলকাতায় ঘাঁটি গাড়া জোসেফ। মিকাইল আছে বছরতিনেক। মাস দেড়েক আগে বসিরহাট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে রবিউল। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বোমা তৈরির কারখানা তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জেরায় নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তিন ধৃত। সেলিম মুন্সি নামে আরো এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। মনে করা হচ্ছে, শনিবার বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে সে। সেলিমই এই তিনজনকে পরিচালনা করত বলে ধৃত জঙ্গিরা জানিয়েছে।
এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, বছরকয়েক আগে জেএমবির ১৫ জনের একটি দল পশ্চিমবঙ্গে এসে গা ঢাকা দেয়। এরপর একটি দল চলে যায় জম্মু-কাশ্মীরে। ওড়িশাতেও কয়েকজন ঘাঁটি গেড়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুরো দলটির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কলকাতায় বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলে জঙ্গিরা জানিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
বছরকয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় থেকে কয়েকজন জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেখানেও একটি বড়সড় বোমা তৈরির কারখানা তারা তৈরি করেছিল। ওই একই মডেলে কলকাতার হরিদেবপুরে তারা বোমা তৈরির কারখানা তৈরি করছিল বলে পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, আনন্দবাজার)