প্রায় অর্ধ শতক দক্ষিণ কলকাতায় থাকার পর, ঠিকানা বদলে এবার মধ্য কলকাতায় চলে যাচ্ছে জার্মান সংস্কৃতি কেন্দ্র গোয়েটে ইন্সটিটিউট৷
বিজ্ঞাপন
কলকাতায় জার্মান ভাষাচর্চা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গোয়েটে ইন্সটিটিউট বলতেই বোঝাতো ৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ঠিকানায়, চমৎকার এক টুকরো উঠোন আর বাগানে ঘেরা তিনতলা বাড়িটি৷ মাক্সমুয়েলার ভবন৷ নোবেলজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে পাঠকের সাক্ষাৎ, বিশ্ববিখ্যাত নৃত্যশিল্পী-কোরিওগ্রাফার পিনা বাউশের অনুষ্ঠান, বের্টোল্ট ব্রেশটের বহু নাটকের বাংলা মঞ্চায়ন, এছাড়াও বছরভর নানা ধরনের অনুষ্ঠান, প্রদর্শনীর সুবাদে কলকাতার সাংস্কৃতিক মহলে বিশেষ কদর ছিল এই বাড়ির৷
SunandaBasu - MP3-Stereo
মাক্সমুয়েলার ভবনের প্রাঙ্গনে ওপেন এয়ার ক্যাফেটিও খুব জনপ্রিয় ছিল শহরের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে৷ শুধু আড্ডার জায়গা হিসেবে নয়, নিয়মিত সংযোগ রাখা, মত বিনিময়, বিতর্কের জন্যেও তাঁরা বেছে নিতেন এই ক্যাফেকে৷ এছাড়া জার্মান ভাষা শিখতে আসা ছেলে-মেয়েদের দিনভর আনাগোনা তো ছিলই৷
অবশ্য এখনই সবকিছু ‘ছিল' বলে অতীতে ঠেলে দেওয়ার কারণ নেই৷ আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় আছে৷ কিন্তু তার পরেই ইতিহাসের পাতায় চলে যাবে ৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড৷ ৭ মে গোয়েটে ইন্সটিটিউট তার ঠিকানা বদলে চলে যাবে মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট আর মির্জা গালিব স্ট্রিটের সংযোগস্থলে, কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ইমারত ‘পার্ক ম্যানসন'-এর একটি তলায়৷ অবস্থানগত দিক দিয়ে অনেক ভালো জায়গায় তো বটেই, পরিসরেও এখনকার থেকে অনেক বড় আয়তনের হবে কলকাতার সেই নতুন গোয়েটে ইন্সটিটিউট৷
জার্মান কনসুলেটে ক্রিসমাস মেলা
প্রতি বছরের মতো এবারও কলকাতার জার্মান কনসুলেটের বাগানে আয়োজন করা হয় বড়দিনের মেলার৷ সেখানে অংশ নেয় বেশ কিছু সমাজসেবী সংস্থা ও নারী কল্যাণ গোষ্ঠী৷ সঙ্গে ছিল জার্মান খাদ্য-পানীয়ের আয়োজনও, যা শুধু ক্রিসমাসের সময়ই পাওয়া যায়৷
ছবি: Colourbox
কনসুলেটের বাগানে
কলকাতার জার্মান কনসুলেট ভবনের বাড়িটি যেমন চমৎকার, বাগানটিও তেমনই সুন্দর৷ সেই বাগানেই বসেছিল ক্রিসমাসের মেলা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্বনির্ভর নারী
অনেক স্বনির্ভরতা গোষ্ঠী আছে পশ্চিমবঙ্গে, যারা মহিলা কারিগরদের হস্তশিল্প বিপণনে সাহায্য করে৷ ক্রিসমাস মেলায় ছিল এরকম কয়েকটি গোষ্ঠী, নিজেদের পশরা নিয়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হাতের কাজ
কাপড়, পাট, চামড়া, এরকম নানা উপকরণ ব্যবহার হয় হাতের কাজে. শুধু ঘর সাজানোর সরঞ্জাম নয়, টুকিটাকি অনেক কাজের জিনিসও আছে তার মধ্যে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পটচিত্র
তুলোট কাগজে হাতে আঁকা পটচিত্র...৷ দেব-দেবীর ছবি থেকে সামাজিক বিষয়, বা পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, সব নিয়েই আঁকা হয় ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
রান্নার স্কুল
স্কুলে আজকাল রান্নাও শেখানো হয়৷ এ রকম কিছু স্কুল থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরাও ছিলেন এই ক্রিসমাস মেলায়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
জিভে জল
জিভে জল আনা মাংসের পুর ভরা ‘কিশ’ থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের মিষ্টি রুটি, জার্মান ‘ব্রেৎসেল’ – সামান্য, কিন্তু আন্তরিক আয়োজন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ব্রাটভুর্স্ট
জার্মানদের মেলা, আর তাতে সসেজ থাকবে না, তাই কি হয়? অবশ্যই ছিল জার্মানদের অন্যতম প্রিয় খাবার ‘ব্রাটভুর্স্ট’-এর বিপুল সম্ভার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
এবং গ্লু-ওয়াইন
জার্মানিতে ক্রিসমাস মানেই গরম, ধোঁয়া ওঠা গ্লু-ওয়াইন৷ কলকাতার ক্রিসমাস মেলাতেও বাদ যায়নি সেই জার্মান পানীয়৷ খাদ্য-তালিকাতেই থেকে গেছে তার প্রমাণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্রিসমাস কুকি
আর ছিল বড়দিনের বিশেষ বিস্কুট, বা ক্রিসমাস কুকিজ৷ চমৎকার দেখতে ছোট ছোট বাহারি মোড়কে ভরা৷ কিছু বিদেশ থেকে আমদানি, কিছু ঘরে বানানো৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ক্রিসমাস ক্যারল
ক্রিসমাসের উদযাপন গান ছাড়া হয় না৷ তাই তারও আয়োজন ছিল৷ পিয়ানো থেকে গিটারে সুর বাজল ক্রিসমাসের ক্যারল গানের৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নবীন আগ্রহ
যে কোনো প্রথাগত উৎসবই আসলে একটা সংস্কৃতিকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা৷ কনসুলেটের ক্রিসমাস মেলায় সেই নবীনদের আগ্রহ ছিল দেখার মতো৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
11 ছবি1 | 11
কলকাতার গোয়েটে ইন্সটিউট ভারতের প্রথম জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র, যার পত্তন হয়েছিল ১৯৫৭ সালে, ভারতের স্বাধীনতার ১০ বছর পরে৷ আজ থেকে ৬০ বছর আগে৷ প্রথমে কলকাতার ডালহৌসি, অধুনা বি-বা-দী বাগ এলাকার একটি বাড়িতে, সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স এলাকার একটি বাংলো বাড়িতে এবং ১৯৬৮ সালে এই বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ঠিকানায়৷ পরের প্রায় ৫০ বছর ধরে এই বাড়িই ছিল জার্মান ভাষাশিক্ষা, জার্মান ফিল্ম, থিয়েটার, সেমিনার, কনসার্টসহ অজস্র অনুষ্ঠান, প্রদর্শনীর প্রাণকেন্দ্র৷
গোয়েটে ইন্সটিটিউট কলকাতার বর্তমান ডিরেক্টর ফ্রিজো মেকার সেই দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ধারাকেই মনে করলেন এই পুরনো বাড়িকে বিদায় জানানোর সময়৷ বললেন, গুন্টার গ্রাস বা পিনা বাউশের মতো বিখ্যাত নামের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ সংস্কৃতিমোদী মানুষজন মাক্সমুয়েলার ভবনকে সজীব রেখেছেন৷ অজস্র আগ্রহোদ্দীপক আলোচনা, বিভিন্ন বিষয়ের কর্মশালা, কনসার্ট, প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র উৎসব হয়েছে এখানে৷ অনুষ্ঠান ছোট হোক বা বড়, একই আবেগ নিয়ে তার উদ্যোগ, আয়োজন হয়েছে৷ নতুন ঠিকানাতে গিয়েও একইরকম থাকবে কলকাতার গোয়েটে ইন্সটিটিউট৷ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারার, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের মেলামেশা আর মত বিনিময়ের জায়গা হয়ে থাকবে এই কেন্দ্র৷
SubhoranjanDasgupta - MP3-Stereo
তবে কলকাতার যাঁরা দীর্ঘদিন মাক্সমুয়েলার ভবনের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সবারই মন খারাপ এই ঠিকানা বদলে৷ যেমন সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রাক্তন কর্মী শুভরঞ্জন মনে করেন, এটা খুব ভুল একটা সিদ্ধান্ত৷ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ওই বাড়ি কলকাতার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক আইকনিক ল্যান্ডমার্ক৷ নতুন বাড়ি সেই স্বাতন্ত্র রক্ষা করতে পারবে কি না, সে নিয়ে শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত রীতিমতো সন্দিহান৷
দীর্ঘ সময় এই বাড়িতে জার্মান ভাষা শিখিয়েছেন সুনন্দা বসু৷ তিনিও দুঃখিত, কারণ, জীবনের বহু আনন্দময় অভিজ্ঞতার সাক্ষী ওই বাড়ি৷ তিনি অবশ্য মনে করছেন, নিশ্চয়ই কোনও উপায় ছিল না, তাই ঠিকানা বদল করতে হচ্ছে৷ তবে নতুন বাড়ি নিয়ে তাঁর গলাতেও সংশয়ের সুর৷ বিশেষ করে আক্ষেপ এখনকার মাক্সমুয়েলার ভবনের চমৎকার প্রেক্ষাগৃহটি নিয়ে৷
স্থাপত্যের শহর কলকাতা
সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত বহু বিষয় এবং আঙ্গিকের স্থাপত্য বসেছে কলকাতার পথঘাটে, বাগানে৷ এগুলোর শৈল্পিক গুরুত্ব তো আছেই, অধিকাংশই আবার ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্বাধীনতার পরে...
একটা সময় কলকাতায় ছড়িয়ে ছিল ব্রিটিশ শাসকদের স্মারক স্থাপত্য৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই সব স্থাপত্য সরিয়ে দিয়ে বসানো হয়েছিল দেশনেতাদের মূর্তি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অন্তরালে নির্বাসন
ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড উট্রামের এই মর্মর স্থাপত্য যেমন একসময় থাকত রাজপথে৷ এখন তাকে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বহাল আছেন রানি
ভিক্টোরিয়ার বাগানের ভিতরে থাকা একাধিক স্থাপত্যও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্যত্র৷ তবে নিজের সিংহাসনে বহাল আছেন রানি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
দেশনেতাদের গুরুত্ব
নতুন স্থাপত্য বসানোর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন দেশ নেতারা৷ এটি যেমন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিখ্যাত ভাস্কর্য
তবে সেই সুবাদে কয়েকজন বিখ্যাত ভাস্করের কাজ অলংকৃত করেছে শহর কলকাতাকে৷ মহাত্মা গান্ধীর এই ভাস্কর্য যেমন বিখ্যাত শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরির তৈরি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বামপন্থি পছন্দ
পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থি শাসনের সময় অবশ্য গুরুত্ব পেয়েছেন কমিউনিস্ট বিশ্ব নেতারা৷ এটি যেমন ভিয়েতনামের নেতা হো চি মিনের ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
রাজনৈতিক ভাস্কর্য
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বলাই বাহুল্য, গুরুত্ব পাচ্ছে অন্য ধারার রাজনীতির প্রসঙ্গও৷ একুশে জুলাইয়ের শহিদ স্মরণে এই ভাস্কর্যটি সম্প্রতি বসেছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
...এবং অরাজনৈতিক
সব ভাস্কর্য অবশ্যই রাজনৈতিক নয়৷ যেমন রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের এই মূর্তিটি কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে বহু বছর ধরে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সমাজজীবনের প্রসঙ্গ
বাংলার মন্বন্তর নিয়ে অসামান্য ভাস্কর্য সিরিজ করেছিলেন বিখ্যাত ভাস্কর সোমনাথ হোর৷ তারই কিছু স্থান পেয়েছে সংস্কৃতির অঙ্গনেও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাংলার সংস্কৃতি
রামকিঙ্কর বেজের বিখ্যাত ভাস্কর্য কলের বাঁশি, যা আসলে বাংলার গ্রামজীবনের কথা বলেছে, হয়ে উঠেছে বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়৷ মূল ভাস্কর্যের প্রতিরূপ এটি৷