খাস শহর কলকাতায় প্রকাশ্য জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক মুসলিম পরিবারের ১৪ জন সদস্যের ধর্মান্তরকরণ৷ তা নিয়ে ধুন্দুমার হলো৷ আক্রান্ত হলেন সাংবাদিকরাও৷
ছবি: Sudipto Bhowmik
বিজ্ঞাপন
মধ্য কলকাতার রানী রাসমনি রোড, যেখানে কলকাতার অধিকাংশ মিটিং-মিছিল, অবস্থান হয়, সেখানে ‘হিন্দু সংহতি মঞ্চ’ সংগঠনের মঞ্চ৷ পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের আধিক্য এবং দাপট ঠেকাতে নাকি তৎপর কলকাতাভিত্তিক এই সংগঠন হিন্দু সংহতি৷ এদিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাদের প্রতিষ্ঠা দিবস প্রতিবছরই দিনটি পালন করা হয়৷ এবারও প্রকাশ্য সভায় হিন্দুত্বের পক্ষে এবং অহিন্দুদের বিরুদ্ধে গরম গরম ভাষণ দিয়ে সেই উদযাপনই হচ্ছিল৷ একটা সময় মঞ্চে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো জনৈক হুসেন আলি ও তাঁর পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে, যাদের মধ্যে কয়েকটি বাচ্চাও ছিল৷ ঘোষণা করা হলো, এই হুসেন আলি সপরিবার ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হয়েছেন! এরপর ওদের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে রেখেই আরও কিছুক্ষণ চলল ভাষণ৷
সাংবাদিকদের ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়ছবি: Sudipto Bhowmik
কিন্তু কৌতুহলী হয়েছিলেন সভায় হাজির সাংবাদিকরা৷ যে কোনও কারণেই হোক, ওই হুসেন আলি, বা তাঁর পরিবারের লোকেদের আচরণ সংবাদ মাধ্যমের সন্ধানী নজরে সন্দেহজনক ঠেকেছিল৷ তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই কয়েকজন সংবাদকর্মী, যাঁরা স্থানীয় দু'টি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা এগিয়ে যান হুসেন আলি ও তাঁর পরিবারের দিকে৷ জানতে চান, তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন, পরিবারের বাকি সদস্যদের নাম কী, কেন তাঁরা হঠাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হলেন, ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন৷ কিন্তু তাতেই ক্ষেপে যান হিন্দু সংহতি মঞ্চের কর্মীরা৷ সাংবাদিকদের ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়৷ শুরু হয় ধ্বস্তাধ্বস্তি৷ হাতে বাঁশের লাঠি, মাথায় ‘জয় হিন্দু' ফেট্টি বাঁধা একদল লোক বেছে বেছে সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুরু করে৷ এমনকি মহিলা সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি৷ এই গন্ডগোল দেখে তৎপর হয় পুলিশ৷ গ্রেপ্তার করা হয় হিন্দু সংহতি মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তপন ঘোষ ও আরও ৩ নেতাকে৷ রাজ্যের বুদ্ধিজীবীরা নিন্দায় সরব হন৷ প্রশ্ন ওঠে, অন্য ধর্ম থেকে এভাবে কাউকে চাইলেই হিন্দু করা যায় কিনা?
‘এভাবে চাইলেই কাউকে হিন্দু করা যায় না’
This browser does not support the audio element.
গোটা ঘটনার পর ব্যাকফুটে চলে গেছে হিন্দু সংহতি মঞ্চ৷ সংগঠনের বর্তমান সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বোঝাতে চাইলেন, মারদাঙ্গার ঘটনা যতটা প্রচার করা হচ্ছে, ততটা ঘটেনি৷ একটা কথা কাটাকাটি, অল্প ঠেলাঠেলি হয়েছিল বটে, কিন্তু বাঁশ দিয়ে মারার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়৷ তবে কী নিয়ে বচসা শুরু হলো, সেটা তিনি জানেন না, খোঁজ নিয়ে জানাবেন৷ আর যাঁর, বা যাঁদের ধর্মীয় পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা, সেই হুসেন আলি, বা তাঁর পরিবার সম্পর্কেও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানাতে পারলেন না তিনি৷ অবাঙালি টানে বাংলা বলা হুসেন আলির বাড়ি কোথায়, সেটাও হিন্দু সংহতি মঞ্চের জানা নেই৷ তবে একটা কথা নিজেই স্বীকার করলেন মঞ্চের সভাপতি যে, এভাবে চাইলেই কাউকে হিন্দু করা যায় না৷তাঁর দাবি, তাঁরা কারও ধর্মান্তর করেননি, হুসেন আলি নিজেই, আইনি প্রক্রিয়া মেনে ধর্ম বদল করেছেন৷ এবার যেহেতু অন্য ধর্ম থেকে আসা লোকজনকে হিন্দু ধর্মে সরাসরি গ্রহণ করা হয় না, ওদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে হিন্দু সংহতি মঞ্চ৷ তবে দেবতনু ভট্টাচার্যের কথার অস্বস্তির মধ্যেই পরিষ্কার ছিল, এই হাঙ্গামা আর অশান্তির নেতিবাচক প্রচার তাঁরা চাননি৷
২০১৫ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন...
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷