ফিফার অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর এবার বসেছে ভারতে৷ তার মধ্যে গ্রুপ লিগের বেশ কিছু ম্যাচ এবং ফাইনাল খেলাটি হবে কলকাতায়৷ ফুটবল উন্মাদনায় মেতেছে গোটা শহর৷
বিজ্ঞাপন
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘নাথিং সাকসিড্স লাইক সাক্সেস'৷ সফল হওয়ার থেকে বড় সাফল্য আর কিছুতে নেই৷ ভারতের ক্রীড়াজগতের দিকে তাকালে কথাটার সারবত্তা প্রমাণিত হয়৷ ভারত ক্রিকেটে একাধিকবার বিশ্বসেরা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলে চলেছে বহু বছর ধরে৷ ফলে ক্রিকেট নিয়ে ভারতে সাধারণ মানুষের উত্তেজনা, বিজ্ঞাপনদাতাদের উৎসাহ, বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা অন্য যে কোনও খেলার থেকে বেশি৷ ক্রিকেট ছাড়া আর যে খেলায় ভারতের অতীত গৌরব আছে, তা হল হকি৷ কিন্তু হকি নিয়ে যেহেতু বাকি বিশ্বে খুব একটা শোরগোল নেই, এই খেলা নিয়ে সাধারণের উৎসাহ, উত্তেজনাও ক্রিকেটের তুলনায় নেহাতই স্তিমিত৷ সেখানে ফুটবল নিয়ে আসমুদ্রহিমাচল ভারতের উদ্দীপনা প্রায় চোখেই পড়ে না৷ ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, গোয়ার মতো হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্য৷ এই সব জায়গায় শুধু স্থানীয় ফুটবল নয়, আন্তর্জাতিক স্তরের লিগ এবং চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ফুটবলপ্রেমীরা৷
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফার ১৭ বছরের অনূর্ধ্ব খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপ ভারতে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, ফুটবল নিয়ে বাকি ভারতের আগ্রহ কিছুটা হলেও বাড়বে, মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা৷ কারণ, সাধারণ পরিস্থিতিতে ভারত কোনওদিন বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বই পেরোতে পারেনি৷ সেখানে আয়োজক দেশ হওয়ার সুবাদে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দল এবার যোগ্যতামান যাচাই ছাড়াই সরাসরি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে৷ দেশের দর্শকরা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, বিশ্বকাপ স্তরের ফুটবল খেলোয়াড়দের পাশে ভারতের খেলোয়াড়রা কতটা উজ্জ্বল, অথবা নিষ্প্রভ৷ কাজেই দেশীয় ফুটবল সম্পর্কে লোকের উৎসাহ যে কিছুটা হলেও বাড়বে, এই জুনিয়র বিশ্বকাপের সুবাদে, তা এখনই আন্দাজ করা যায়৷
কাশীনাথ ভট্টাচার্য
কলকাতার কাশীনাথ ভট্টাচার্য ফিফা অনুমোদিত ক্রীড়া সাংবাদিক, বিশেষত ইউরোপিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবলের অন্যতম বিশেষজ্ঞ৷ দিল্লি থেকে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, আরও একটি পরিকল্পনা আছে ভারতীয় ফুটবল নিয়ামক সংস্থার৷ জুনিয়র বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও এই অনূর্ধ্ব-১৭ দলটি না ভেঙে রেখে দেওয়ার এবং অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে মিলিয়ে, দুই দল থেকেই সেরা খেলোয়াড়দের বেছে নিয়ে একটি দল তৈরি করার, যে দল ভারতের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ ‘আই লিগ'-এ খেলবে৷ এখনকার যে পর্তুগিজ কোচ আছেন দলের, তাঁকেও রেখে দেওয়া হবে এবং অকারণ প্রীতি ম্যাচ খেলিয়ে খেলোয়াড়দের ধার নষ্ট না করে, তাদের টানা প্রতিযোগিতামূলক খেলার মধ্যে রাখা হবে, যাতে বিশ্বকাপ ফুটবলের যোগ্যতা যাচাইয়ের পর্বে কিছুটা সাফল্যের আশা থাকে৷
এছাড়া, অনূর্ধ্ব-১৭ হলেও এই আন্তর্জাতিক দলগুলোর থেকেই পরবর্তীতে এক একটি দেশের জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য বাছাই করা হবে৷ তাদের সঙ্গে খেলার এই সুযোগ ভবিষ্যৎ ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের ধার ও ভার যাচাই করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে৷ পাশাপাশি ফুটবল দর্শকরা পাবেন আগামী দিনের বিশ্ব ফুটবল তারকাদেরদক্ষতা চাক্ষুস করার সুযোগ৷ তাঁরা আগাম জেনে যাবেন, ভবিষ্যতের নজর থাকবে কাদের দিকে৷ এই রবিবারই যেমন কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দল দারুণ খেলে হারাল চিলির দলটিকে৷ ভাল খেলে, নিজে দুটি গোল করে ইংল্যান্ডকে জেতালেন জ্যাডেন স্যাঞ্চো৷ আর কদিন পরেই এই স্যাঞ্চো খেলবেন জার্মানির বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবের হয়ে এবং তাঁর খেলা দেখে রবিবার কলকাতা একবাক্যে মেনেছে, পরের ফুটবল বিশ্বকাপে সারা দুনিয়ার নজর থাকবে এই স্যাঞ্চোর ওপর৷ এটাও ভারতীয় ফুটবল দর্শকদের এক বিরাট প্রাপ্তি৷
২০১৭ সালের সবচেয়ে দামি দল
বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলার দলগুলোর বার্ষিক তালিকা ঘোষণা করেছে ফোর্বস৷ এক নজরে দেখে নেই কোন দল কোন দেশের, আর কী তাদের সাফল্যের রহস্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Steinman
১. ডালাস কাউবয়েজ – ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার
দলটি সবশেষ সুপার বোল জয় করেছিল ২০ বছর আগে৷ কিন্তু অ্যামেরিকান ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস কাউবয়েজ ঠিকই ধরে রেখেছে জনপ্রিয়তা৷ আর্লিংটনে ২০০৯ সালে তৈরি হওয়া দলটির স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টেডিয়ামগুলোর একটি৷ আর এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার (৯৫৯ মিলিয়ন ইউরো)৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Steinman
২. নিউ ইয়র্ক ইয়াংকিজ – ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার
বিশ্বের অনেক দলই এখন দল গড়তে প্রচুর টাকা খরচ করে৷ কিন্তু খেলায় বড় অংকের অর্থলগ্নি প্রথম শুরু করে বেসবল টিম নিউ ইয়র্ক ইয়াংকিজ৷ ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজের পর র্যাংকিংয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে দলটি৷ কিন্তু জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও৷
ছবি: picture alliance/Globe-ZUMA/J. Barrett
৩. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – ৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার
এই দলটিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়ে না৷ সাম্প্রতিক সাফল্য কিছুটা পড়তির দিকে থাকলেও দলটির বাণিজ্যিক মূল্য মোটেও কমেনি৷ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বেশিরভাগ দল টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে টাকা কামায়৷ ফোর্বস বলছে, ম্যানইউয়ের অধিকাংশ উপার্জন হয় স্পন্সরশিপ থেকে৷
ছবি: picture-alliance/IBL Schweden/P. C. Österberg
৪. বার্সেলোনা – ৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার
বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের আরেক সম্রাট স্পেনের এই ফুটবল দল৷ ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাওয়ার হাউজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দলটিকে৷ সবচেয়ে দামি দলের এই তালিকায় গত চার বছর ধরে শীর্ষ দশে আছে দলটি৷
ছবি: picture-alliance/AP/D. Ochoa De Olza
৫. রিয়াল মাদ্রিদ – ৩ দশমিক ৫৮ ডলার
২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তালিকার শীর্ষে ছিল স্পেনের আরেক ফুটবল জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ৷ কিন্তু এই বছর বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে দলটি৷ তবে ক্লাবটির সাফল্যের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ চ্যাম্পিয়নস লিগে পরপর দুই বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রথম দল হিসেবে নাম লেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski Livepic
৬. নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টস – ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার
কোচ বিল বেলিচিকের অধীনে এবং সর্বকালের সেরা কোয়ার্টারব্যাক টম ব্র্যাডির নেতৃত্বে গত দশকে ন্যাশনাল ফুটবল লিগের সেরা দল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে প্যাট্রিয়টস৷ এ বছর দলটি পঞ্চমবারের মতো সুপার বোল চ্যাম্পিয়ন হলো৷ এর সবকটিতেই ছিলেন বেলিচিক এবং ব্র্যাডি৷
ছবি: Getty Images/C. Cox
৭. নিউ ইয়র্ক নিকস – ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার
বাস্কেটবলে নিউ ইয়র্ক নিকসের টিকেটের সবচেয়ে বেশি চাহিদা৷ কিন্তু মধ্যমমানের খেলা এবং দলের বাজে পারফরমেন্স, অনেকদিন ধরেই মেটাতে পারছে না ভক্তদের চাহিদা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Gutierrez
৮. নিউ ইয়র্ক জায়ান্টস – ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার
নিউ ইয়র্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবলে বেশ ভালোই নাম কামিয়েছে দলটি৷ এনএফএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলগুলোর একটি জায়ান্টস৷ ১৯২৭ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে দলটি৷ এই শতকের তিনটিসহ সুপার বোল জিতেছে মোট চারবার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Tenally
৯. (টাই) সান ফ্র্যান্সিসকো ফোরটি নাইনারস – ৩ বিলিয়ন ডলার
দলটির শেষ সাফল্য এসেছে প্রায় এক দশক আগে৷ কিন্তু তারপরও বিশ্বের সবচেয়ে সফল দলগুলোর একটি বলে ধরে নেয়া হয় সান ফ্র্যান্সিসকো ফোরটি নাইনারসকে৷ ফোর্বসের তালিকায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ দশে এসেছে দলটি৷ গত বছরের মতো এবারও টাই হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার বাস্কেটবল দল লস এঞ্জেলেস লেকার্সের সাথে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/Al Golub
৯. (টাই) লস এঞ্জেলেস লেকার্স – ৩ বিলিয়ন ডলার
লেজেন্ডারি খেলোয়াড় কোবি ব্রায়েন্ট দল ছেড়ে দিলেও জনপ্রিয়তা ঠিকই ধরে রেখেছে লেকার্স৷ এখন পর্যন্ত মোট ১৬টি শিরোপা জয় করেছে দলটি৷