1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাট-মাঠ-ঘাটের শিল্প

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩

কথাটা বলতে বা শুনতে যতই অস্বস্তি হোক, শিল্প যদি জনপ্রিয় না হয়, লোকের কাছে তার যদি কদর না হয়, তাহলে সেই শিল্প অর্থহীন৷ সেখানে মহানগরীর ‘আর্ট ইন পাবলিক প্লেস’ প্রদর্শনী শিল্পকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার একটা সফল প্রচেষ্টা৷

An exhibition of street photography in a shopping mall in Kolkata: Close up of exhibition; Copyright: DW/S. Bandopadhaya
ছবি: DW/S. Bandopadhaya

গল্প-কবিতা লেখা, গান গাওয়া, ছবি আঁকা, ছবি তোলা বা সিনেমা তৈরি করা, এ সবই অন্য লোকের তারিফ আর হাততালির মুখাপেক্ষী৷ যিনি বলেন, তাঁর লেখা বা আঁকা অন্য কারও প্রশংসা বা সমালোচনার তোয়াক্কা করে না, তিনি সম্ভবত ঠিক বলেন না৷ অবশ্য সবাই যে নিজের জীবদ্দশাতেই স্বীকৃতি পেয়ে যান, তা নয়৷ যেমন ডাচ শিল্পী ভ্যান গঘ৷ বেঁচে থাকতে গঘের কোনো ছবিই প্রায় বিক্রি হয়নি, পরবর্তী সময়ে যা কোটি কোটি টাকার রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে৷ কিন্তু এমন নয় যে ভ্যান গঘ তাঁর ছবির এই বিক্রি, এই দুনিয়াজোড়া কদর দেখতে চাননি৷ চেয়েছিলেন৷ পাননি, সেটা আলাদা কথা৷

এবারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ধরন ছিল স্ট্রিট ফটোগ্রাফিছবি: DW/S. Bandopadhaya

মাঝেমধ্যে এরকমও হয় যে অনেকে নিজের দক্ষতা প্রকাশের কোনো মঞ্চ খুঁজে পান না৷ ধরা যাক যিনি ভালো ছবি আঁকেন বা ছবি তোলেন, তাঁর শিল্প কিন্তু অনেকটাই ব্যক্তিগত৷ নিজের উদ্যোগে কোনো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না করলে, নিজের অধিগত দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ারও উপায় তাঁর নেই৷ সেক্ষেত্রে তাঁর শিল্পচর্চাটা একেবারেই ব্যক্তিগত চেনা-পরিচিতির স্তরে, বা বড়জোর ফেসবুক-জাতীয় সামাজিক মেলামেশার ইন্টারনেট গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়৷

অন্যদিকে যে মানুষটা হয়ত নিজে শিল্পী না হয়েও শিল্প সম্পর্কে উৎসাহী, যিনি শিল্পের বিশেষজ্ঞ না হলেও সমঝদার, তিনি হয়ত সময়-সুযোগ পান না নিজের দৈনন্দিন ব্যস্ততা এড়িয়ে কোনো চিত্রকলার প্রদর্শনী দেখতে যাওয়ার৷ আবার এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা নিজে থেকে কোনো উৎসাহই বোধ করেন না এ ধরনের শিল্প প্রদর্শনীতে যাওয়ার৷ হতে পারে যে তাঁরা যান না বলেই বুঝতে পারেন না যে তাঁরা কী হারাচ্ছেন৷

‘আর্ট ইন পাবলিক প্লেস' বা জনবহুল জায়গায় শিল্প প্রদর্শনীর ধারণাটা ঠিক এভাবেই গড়ে উঠেছে৷ যেখানে শিল্পীরা প্রায় নিখরচায় নিজেদের প্রতিভা এবং কৃতিত্ব জাহির করার একটা জায়গা পাবেন এবং সেই শিল্পের সম্ভাব্য সমঝদারেরাও নিজেদের ব্যস্ত জীবনেই তা পরখ করার সুযোগ পাবেন৷ সম্প্রতি কলকাতা শহরের একটি বিলাসবহুল শপিং মল-সহ মোট ২২টি জায়গায় ফটোগ্রাফ বা আলোকচিত্রের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল সেটাই, ডয়চে ভেলেকে জানালেন উদ্যোক্তা সংস্থা বাংলা নাটক ডট কম-এর অরুণিমা নন্দী৷

এবারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ধরন ছিল স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে যে ছবি অনুসন্ধিৎসু ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ধরা দেয়৷ আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, কলকাতার ‘হেরিটেজ অ্যান্ড লাইফস্টাইল', এই শহরের ঐতিহ্য এবং জীবনচর্যা ছিল এই প্রদর্শনীর কেন্দ্রীয় বিষয়৷ ছবি টাঙানো হয়েছিল রাস্তার ধারে, পাড়ার ক্লাবে, পার্কে এবং শপিং মলে৷ লোকে চলতে ফিরতে সার দিয়ে টাঙানো ছবির দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে যাচ্ছিলেন৷ কেউ কয়েক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন বোঝার জন্য যে ব্যাপারটা ঠিক কী ঘটছে৷ আবার কেউ কেউ অনেকক্ষণ সময় দিয়ে, ধৈর্য ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন ছবিগুলো৷

‘আর্ট ইন পাবলিক প্লেস'ছবি: DW/S. Bandopadhaya

আলোকচিত্রী শুভ্রাংশু সরকারের ছবি নির্বাচিত হয়েছিল ফোরাম শপিং মলের প্রদর্শনীটির জন্য৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন, যে সাড়া তিনি পেয়েছেন দর্শকদের থেকে, তা অবাক করার মতো৷ একজন করে থাকছিলেন প্রদর্শনীর জায়গায়, যিনি দর্শকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছিলেন এবং তন্নিষ্ঠ কোনে কোনো দর্শককে জিজ্ঞেস করছিলেন, তাঁর বিচারে কোনটি প্রদর্শনীর প্রথম ছবি, কোনটি দ্বিতীয় আর কোনটি তৃতীয়৷ শুভ্রাংশুর অভিজ্ঞতা হল, প্রত্যেকেই কিন্তু নিজেদের মতো করে যুক্তি সাজিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ছবিগুলো তাঁদের কেন ভালো লেগেছে৷

ফোরাম মলে ঘুরে ঘুরে মন দিয়ে ছবি দেখছিলেন এক মহিলা৷ শিল্পী রাউথ৷ এসেছেন শপিং করতে, কিন্তু কলকাতার ছবিগুলো দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন৷ মন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন এক একটা ছবি৷ বললেন, কলকাতা তাঁর নিজের শহর নয়৷ বিয়ের পর এসেছেন৷ তাই কলকাতা নিয়ে তাঁর একটা স্বাভাবিক কৌতূহল আছে৷ শিল্পী এর পরেই যে কথাটা বললেন, সেটা রীতিমত বিবেচনার যোগ্য৷ তাঁর পরামর্শ, শুধু সিরিয়াস ফটোগ্রাফার নয়, যাঁরা শখে ছবি তোলেন, একেবারেই পেশাদার নন, তাঁদেরকেও এই ধরনের প্রদর্শনীতে সামিল করা উচিত৷ কে বলতে পারে, তাতে আরও নানা অদেখা দৃষ্টিকোণ ধরা পড়বে ছবিতে!

বাংলা নাটক ডট কম এর পরের পর্যায়ে, এই প্রদর্শনী থেকে বাছাই করা ১৫ জন শিল্পীর ছবি নিয়ে কোনো প্রদর্শনশালায় দেখাবে৷ আর ওদের পরবর্তী প্রদর্শনীর বিষয় হবে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য এবং জীবনযাত্রা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ