‘লাভ জিহাদ' আতঙ্ক এবার কলকাতায়৷ পাত্র মুসলমান ও পাত্রী হিন্দু হলে সেই বিয়েকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘লাভ জিহাদ' হিসেবে৷ ফেসবুকে তালিকা প্রকাশ করে এমন যুগলকে খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে৷ শুরু হয়েছে এর প্রতিরোধও৷
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় রাজনীতির সৌজন্যে ‘লাভ জিহাদ' শব্দবন্ধটি অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে৷ এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও কম হচ্ছে না৷ কিন্তু, ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতাকে কখনও লাভ জিহাদের প্রচার ঘিরে আতঙ্কে পড়তে হয়নি৷ বিক্ষিপ্ত ঘটনা সামনে এসেছে বটে, তবে তাতে খুব একটা হইচই হয়নি৷ এবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ভিন্ন ধর্মের একঝাঁক যুগলের তালিকা প্রকাশ করে খুনের হুমকি দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন পড়েছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ৬৮টি দম্পতির সেই তালিকা নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে৷
জানুয়ারি মাস থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে তালিকাটি— সেখানে যে দম্পতিদের নাম রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে স্বামী ধর্মপরিচয়ে মুসলমান ও স্ত্রী হিন্দু৷ পাত্রী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ নিয়েছেন নতুন নাম৷ একে কেন লাভ জিহাদ বলা হচ্ছে? কী-ই বা অর্থ এই কথাটার? এই শব্দবন্ধে ভালোবাসার সঙ্গে জিহাদ, অর্থাৎ ধর্মের জন্য সংগ্রামকে সুকৌশলে জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ কট্টরপন্থি হিন্দু সংগঠনগুলির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মুসলমান যুবকরা প্রেমের ফাঁদে বন্দি করছে হিন্দু মেয়েদের৷ এটা নিছকই প্রেম নয়, প্রেমের কৌশল৷ আসল উদ্দেশ্য হিন্দু মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে তাঁদের ইসলামের পক্ষে লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া৷ ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়ে যাওয়া তালিকাটিতে যে ৬৮টি যুগলের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে সব মুসলমান যুবককেই ষড়যন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ ‘হিন্দু বার্তা' নামে ফেসবুক গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রোফাইলের তালিকা প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘এই সূচিতে থাকা হিন্দু মেয়েরা লাভ জিহাদের শিকার হয়েছে বা হতে যাচ্ছে৷ সব হিন্দু সিংহের কাছে আর্জি, এই মহিলাদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শিকার করুন!''
গর্গ চট্টোপাধ্যায়
এই প্রোফাইল তালিকায় যে মহিলাদের নাম রয়েছে, এমন ফেসবুক পোস্টের পর তাঁদের আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক৷ ‘মিলনমেলা' নামের আর একটি ফেসবুক গ্রুপের পক্ষ থেকে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় একই ধরনের পোস্ট করেছেন৷ নিজেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য বলে দাবি করে বিপ্লবের আহ্বান, ‘‘হিন্দু মেয়েদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে লাভ জিহাদের উদ্দেশ্যে৷ হিন্দুরা জেগে উঠুন, নইলে হোমল্যান্ড ভারতকে হারাতে হবে৷'' এ ধরনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দম্পতি বা যুগলদের কাছে হুমকি আসতে শুরু করেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়াতেও শুরু হয়েছে হেনস্থা৷ এমনই এক দম্পতি কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগে অভিযোগ করেছেন৷ ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি তাঁরা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগও তুলেছেন৷
দম্পতির এই অভিযোগের সূত্রে ভারতীয় সমাজ-রাজনীতির বৃহত্তর সমস্যাটা উঠে আসছে৷ অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সব সম্পর্কের গায়ে কি এভাবে চক্রান্তের তকমা সেঁটে দেওয়া যায়? এটা কি নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও ভালোবাসা, যা ধর্ম-বর্ণ-জাতিভেদের ঊর্ধ্বে, তার প্রতি অসম্মান নয়? যেখানে এমন নমুনা মিলছে যে, লাভ জিহাদের অভিযোগ ওঠার পর হিন্দু মহিলাটিই বলে উঠছেন, তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করেছেন৷ সম্প্রতি ভারতে যে বিতর্কটি সবচেয়ে জোরালো, তার কেন্দ্রে কেরালার তরুণী অখিলা, যিনি বিয়ের পর হয়েছিলেন হাদিয়া৷ তাঁর স্বামী সাফিন জাহানের বিরুদ্ধে লাভ জিহাদের অভিযোগ উঠেছিল৷ অখিলার বাবা মামলা করেছিলেন৷ কিন্তু, আদালতে দাঁড়িয়ে হাদিয়া বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় সাফিনকে বিয়ে করেছেন৷ এই ঘটনা প্রমাণ করে, সব সম্পর্কের পিছনে চক্রান্ত খুঁজতে যাওয়ার অর্থ নেই৷ আদতে সেটাই একটা রাজনৈতিক কৌশল৷
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
হিন্দু মৌলবাদীরা ভারতে যে অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে – এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন হিন্দি ছবির সুপারস্টার শাহরুখ খান৷ তাতেই খেপে গেছেন বিজেপিসহ হিন্দু মৌলবাদী অন্যান্য দলের কতিপয় নেতা৷ শাহরুখকে বলছেন ‘পাকিস্তানের দালাল’!
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
কিং খানের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
গত ২ নভেম্বর ছিল ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন৷ জীবনের অর্ধ শতাব্দী পূরণ বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত এ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন এবং শুভকামনায় সিক্ত করেন শাহরুখকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
শাহরুখের সত্যি বয়ান
জন্মদিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শাহরুখ৷ সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু মৌলবাদীরা যে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর হয়না৷ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/F. Shamim
বিজেপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গব টুইটারে লিখে দেন,‘শাহরুখের হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’৷ সেই টুইট পরে প্রত্যাহার করে নিলেও বুধবার তিনি বলেছেন, ভারত অসহিষ্ণু হলে শাহরুখের মতো এক মুসলমান অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না৷’’ বিজেপির কয়েকজন নেতা শাহরুখকে ‘মুখ সামলে কথা বলা’র অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, মুখ না সামলালে শাহরুখের ছবি বয়কট করা হবে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
জঙ্গি নেতার সঙ্গে তুলনা
শাহরুখের সমালোচনা করতে গিয়ে বিজেপির আরেক সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘শাহরুখ এখন হাফিজ সাঈদের ভাষায় কথা বলছেন৷’’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা হাফিজ সাঈদের তুলনা ভারতের সাধারণ মানুষ এবং শাহরুখ ভক্তদের আহত করেছে৷ সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন সবাই৷
ছবি: AP
শাহরুখের ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে শাহরুখ খুবই উদার৷ তাঁর স্ত্রী গৌরির জন্ম হিন্দু পরিবারে৷ প্রেম করে বিয়ে করার পরেও শাহরুখ কখনো গৌরির ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্ম চর্চায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ ভক্তদের কাছে ‘এসআরকে’ নামেও পরিচিত মুম্বই মহাতারকা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে নামাজ পড়া এবং পূজা করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ছবিতে স্ত্রী গৌরির সঙ্গে শাহরুখ৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত লাভ জিহাদ ঘিরে দুই শিবির যুযুধান৷ ‘বাংলা পক্ষ' নামে একটি সংগঠন লাভ জিহাদের হুমকির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে৷ সেই সংগঠনের কর্তা গর্গ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গো বলয়ের সংস্কৃতি এখানে আমদানি করার চেষ্টা চলছে৷ এটা যে বড় আকারের ষড়যন্ত্র তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ বড় মদত না থাকলে সংগঠিতভাবে প্রচার চালানো সম্ভব হতো না৷ তবে এটা চেষ্টা মাত্র, এখানে এটা সফল হবে না৷''
বাংলার সংস্কৃতি তথা নাট্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও চিত্রাভিনেতা কৌশিক সেন লাভ জিহাদের তত্ত্ব খারিজ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও মুসলিম ছেলের হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করা মানেই ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়া, এই দাবিটা ঠিক না৷ লাভ জিহাদের পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই৷ আমার মনে হয়, এটা নিয়ে একটা স্বার্থসিদ্ধির খেলা চলছে৷''
তবে লাভ জিহাদনিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তাদের বক্তব্যে অনড়৷ হিন্দু সংহতির নেতা তপন ঘোষের মন্তব্য, ‘‘সমাজ ও ধর্মীয় সংগঠন থেকে মদত পেয়ে মুসলিমরা হিন্দু মেয়েদের ফুঁসলিয়ে বিয়ে করছে৷ এটা পুরোটাই পরিকল্পনামাফিক৷ বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ছবি মোবাইলে তুলে জোর করেও বিয়ে করছে ওরা৷ অনেক সময় মেয়েদের বিক্রিও করে দিচ্ছে৷ এই সমস্ত কাজের জন্য বিপুলভাবে মোটিভেট করা হচ্ছে মুসলিম যুবকদের৷ তাদের বিপথে চালিত করা হচ্ছে৷ আমরা এটা আটকানোর চেষ্টা করছি৷ নাবালিকাদের সঙ্গে এমনটা ঘটলে পুলিশের সাহায্য নিচ্ছি৷''
এ প্রসঙ্গে কৌশিক সেনের মত, ‘‘আমাদের দেশে মানুষের জন্য খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা বা আন্দোলন করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ তার বদলে যারা লাভ জিহাদ নিয়ে আলোচনা করছেন, তারা মানুষের বৃহত্তর স্বার্থ থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছে৷ ধর্মান্তরিত করার সন্দেহে এটাকে ব্যবহার করছে কিছু মানুষ৷''
ভালোবাসার মাসে প্রেমকে এভাবে আক্রান্ত হতে দেখে কী অনুভূতি? কৌশিক সেন বলেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই৷ ওটা স্রেফ বাণিজ্য৷ তবে আমি পছন্দ করি না বলে যারা ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করছেন, তাদের উপর চড়াও হবো না নিশ্চয়ই৷ অন্যের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোবাসা নিয়ে বলার অধিকার কতখানি, এটা কে ঠিক করে দেবে?''
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?