সমস্যায় পড়লে হোয়াটসঅ্যাপে জানালেই পৌঁছে যাবে সাহায্য৷ হায়দ্রাবাদে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর এমন এক গ্রুপ তৈরি করলেন কলকাতার মহিলারা৷
বিজ্ঞাপন
নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নিতে হবে- এমনই স্লোগান সামনে রেখে কলকাতায় নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করেছেন তাঁরা৷
হায়দ্রাবাদে এক পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা দেশ৷ দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গ সর্বত্রই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ উত্তাল সংসদও৷ কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট নন কলকাতার একদল নারী৷ তাঁদের বক্তব্য, দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের পরেও এভাবেই প্রতিবাদ হয়েছিল৷ কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির বদল হয়নি৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ ফলে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হবে৷ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুমেধা জানান, হায়দ্রাবাদের ঘটনা ঘটার পরেই তিনি ঠিক করেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করতে হবে৷ এলাকার মহিলাদের আহ্বান করা হবে সেই দলে যোগ দেওয়ার জন্য৷ সেই গ্রুপের কোনো মহিলা রাস্তায় সমস্যায় পড়লে হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশন পাঠিয়ে দেবেন৷ বাকি সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন৷ সুমেধার দাবি, তাঁদের আহ্বানে মাত্র ২ দিনেই আড়াই হাজারেরও বেশি মহিলা সাড়া দিয়েছেন৷ সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ কলকাতা ছাড়িয়ে শহরতলি এবং জেলাতেও গ্রুপ ছড়িয়ে পড়েছে৷
হায়দ্রাবাদের ঘটনার পরই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির চিন্তা করি: সুমেধা
গ্রুপের সদস্যদের বক্তব্য, তাঁদের নতুন ভাবনা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, মূল গ্রুপের বাইরে আরো ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক দল তৈরি করা হয়েছে৷ এর ফলে যে এলাকায় দলের সদস্যরা সমস্যায় পড়বেন, সেই অঞ্চলের এলাকাভিত্তিক গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেতে পারবে এবং পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নিতে পারবে৷
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পুলিশ প্রশাসনের উপর আর ভরসা রাখতে পারছে না নাগরিক সমাজ? কেন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে? পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করেন, যেভাবে এই গ্রুপ তৈরি হয়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ৷ এতে প্রমাণিত হয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে৷ তিনি জানান, পুলিশ অবশ্যই সাহায্য করবে ওই নারীদের৷
নাগরিক সমাজের একাংশের বক্তব্য, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ কোনোটা ধামাচাপা পড়ে যায়, কোনোটা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়৷ রাজনীতি হয়৷ কিন্তু মহিলাদের নিরাপত্তার কোনো উন্নতি হয় না৷ হায়দ্রাবাদের ঘটনার পরে কলকাতার মহিলারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, গোটা দেশে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া উচিত৷
গতবছরের জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷