কলকাতা থেকে ঢাকা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন ১৬ জন৷ ২১ ফেব্রুয়ারির উদযাপনে যোগ দিতে৷ ভাষার টানে, প্রাণের টানে৷
বিজ্ঞাপন
১৬ জন সাইকেল আরোহীর একটি দল৷ ‘হান্ড্রেড মাইলস্’ নামে অন্য ধারার একটি পর্যটন সংস্থার উদ্যোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি রওনা হয়ে গেলেন ঢাকার উদ্দেশে৷ প্রায় ৩২৫ কিলোমিটারের পথ পুরোটাই ওঁরা যাবেন সাইকেল চালিয়ে৷ সঙ্গে ৪ জন সহায়ক-কর্মীও থাকবেন৷ ওঁদের যাত্রাপথ হলো কলকাতা – হাবড়া – বেনাপোল – যশোর – মাগুরা – ফরিদপুর – মানিকগঞ্জ – ঢাকা৷ ওঁরা ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন ২০ তারিখ৷ পরের দিন অমর একুশে৷ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস৷ ওইদিন ওঁরা যাবেন সাভারের শহীদ স্মারকে শ্রদ্ধা জানাতে৷ ফুলে আর গানে শেষ হবে ওঁদের সাইকেল সফর৷
গত ৬ বছরে এটা হান্ড্রেড মাইলসের পঞ্চম ঢাকা – কলকাতা সাইকেল সফর৷ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে৷ তারপর ২০১৫ সাল বাদ দিয়ে প্রায় প্রতি বছরই ওঁরা গেছেন? ডয়চে ভেলে’র সঙ্গে ওঁদের প্রথম কথা হয় ২০১২ সালে৷ সেবার ওঁরা জানিয়েছিলেন, মানুষের কাছ থেকে এত ভালবাসা ওঁরা পেয়েছেন, যা অভাবনীয়৷ বিশেষ করে সীমান্তের ওপারে, বাংলাদেশে৷ সবাই কাগজে পড়েছেন, বা রেডিওতে শুনেছেন৷ সেই শুনেই মানুষ ভিড় করে এসেছেন রাস্তার ধারে৷ দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় থেকেছেন, কখন পড়শি দেশের সাইকেল সওয়ারিরা আসেন৷ তাঁদের হাতে ছিল পানীয় জল, চিঁড়ে, মুড়ি, গুড় জাতীয় শুকনো খাবার— যদি শ্রান্ত পথিকেরা ক্ষুধার্ত থাকেন৷ এমন ভালোবাসা বিশ্বের অন্য কোথাও মানুষের জন্যে সঞ্চিত থাকে কিনা জানা নেই, কিন্তু বাংলাদেশে আছে৷ ভালোবাসার সেই বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছেন ওঁরা৷ যে কারণে বারবার ফিরে যাওয়া৷ গত কয়েক বছর ‘উদীচি’ নামের সংস্থাটি বাংলাদেশে ওঁদের সঙ্গী হয়েছিল৷ এবার বাংলাদেশ পর্যটন স্বেচ্ছায়, সাগ্রহে বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত৷ আতিথেয়তার বন্দোবস্ত তারাই করছে৷ ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদ স্মারকে শ্রদ্ধা জানানোর সময়েও তারাই থাকবে সঙ্গে৷
গিনেসে বাংলাদেশের কয়েকটি রেকর্ড
‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এর ওয়েবসাইটে এসব রেকর্ডের কথা আছে৷ গিনেস বলছে, ওয়েবসাইটে যে রেকর্ডগুলোর তালিকা আছে, সেগুলো সব হালনাগাদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lukas Schulze
সবচেয়ে পাতলা দেশ
রাষ্ট্রতো আর পাতলা হতে পারে না, পাতলা হতে পারে তার মানুষ৷ সেই হিসেবে ২০১০ সালে বিশ্বের ‘সবচেয়ে পাতলা দেশ’ হিসেবে বাংলাদেশের নাম ওঠে গিনেস বইয়ে৷ সেই সময় মেয়েদের গড় বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) ছিল ২০.৫, আর পুরুষদের ২০.৪৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/ Md. M. Hasan
সবচেয়ে ভারি শিল
১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল গোপালগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই সময় যে শিল পড়েছিল তার কোনো কোনোটির ওজন ছিল প্রায় এক কেজি৷ ঐ দিন ৯২ জন নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: NWS Aberdeen/public domain
পাঁচ ভাই বিয়ে করেন পাঁচ বোনকে
১৯৭৭ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে নরেন্দ্র নাথ ও তারামনি রায় দম্পতির পাঁচ মেয়ের সঙ্গে তারাপদ কর্মকার ও খানা রানি রায় দম্পতির পাঁচ ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷
ছবি: guinnessworldrecords.com
ফুটবল শৈলী
রোলার স্কেটের উপর দাঁড়িয়ে মাথার উপর ফুটবল নিয়ে ২৭.৬৬ সেকেন্ডে ১০০ মিটার পার হয়েছেন আব্দুল হালিম৷ ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এই নৈপুণ্য দেখান তিনি৷
ছবি: prothom-alo.com
দীর্ঘতম মানববন্ধন
২০০৪ সালের ১১ ডিসেম্বর ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ একজন আরেকজনের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন৷ সরকারের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ প্রকাশের এই কর্মসূচির আয়োজনে ছিল আওয়ামী লীগ৷ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এই মানববন্ধন ১,০৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল৷
ছবি: guinnessworldrecords.com/
বন্যায় রেকর্ড সংখ্যক গৃহহীন মানুষ
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৫৭ শতাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছিল৷ সেই সময় প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল৷ ওপরের ছবিটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture alliance/Zumapress.com
সাইকেল চালিয়ে রেকর্ডবুকে
এক সারিতে একসঙ্গে ১,১৮৬ জন সাইকেল চালিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশে সাইক্লিস্টদের অন্যতম বড় সংগঠন ‘বিডিসাইক্লিস্টস’৷ বিজয় দিবসে সংগঠনটি এই সাইকেল চালনার আয়োজন করেছিল৷
ছবি: Guinness World Records
জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি
গিনেস বলছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২২ লক্ষ ২১ হাজার৷ দেশটির আয়তন ৫৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার৷ সেই হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ২,৯১৮ জন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত
২০১৪ সালের ২৬শে মার্চ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহায়তায় লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গাওয়ার ১৩ দিন পর গিনেসের রেকর্ডবুকে জায়গা হয়৷ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢোকার সময় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক গণনা অনুসারে লোক হয়েছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন৷ এতেই আগের বছরের ৬ই মে ভারতে সাহারা গ্রুপের আয়োজনে এক লাখ ২২ হাজার লোকের একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার রেকর্ডটি ভেঙে নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
হান্ড্রেড মাইলস্-এর এই সাইকেল দলটির যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই স্বরজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি যখন মোবাইল ফোনে কথা হলো, তখন ওঁরা সদ্য গিয়ে পৌঁছেছেন বেনাপোল সীমান্তে৷ পারাপারের আইনি কাজকর্ম সারছেন৷ যথারীতি খুশি এবং উত্তেজিত স্বরজিৎ৷ জানালেন, সেই রাতটা বেনাপোলেই কাটাবেন, বাংলাদেশ পর্যটনের আতিথ্যে৷ ১৭ সকাল থেকে আবার যাত্রা শুরু৷ গত ৬ বছরে ওঁদের অনেক বন্ধু হয়ে গেছে যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জে৷ তাঁদের সবার সঙ্গে আবার দেখা হবে, এই সম্ভাবনাতেই উত্তেজিত তাঁরা সবাই৷ আরও অনেক নতুন বন্ধ হবে, সেই সম্ভাবনাও ওঁদের চনমনে রাখছে৷
কলকাতা – ঢাকা এই সাইকেল যাত্রার নাম ওরা দিয়েছেন ‘ভাষাসূত্র’৷ অবশ্যই৷ ভাষাই তো একসূত্রে বেঁধে রেখেছে দুই বাংলার মানুষকে৷ এই সাইকেল সফর সেই সম্পর্কেরই উদযাপন৷
সাইকেলের পূর্ণ হলো ১৫০ বছর
যে বাহনে সবচেয়ে সহজে ও সস্তায় যাতায়াত করা যায় সেটা হচ্ছে দুই চাকার সাইকেল৷ সম্প্রতি যার বয়স ১৫০ বছর পূর্ণ হলো৷ শুভ জন্মদিন সাইকেল!
ছবি: picture-alliance/akg-images
সাইকেলের উদ্ভাবক কে?
ফ্রান্সের পিয়ের মিশো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ের লালেমেন্ট – এই দু’জন প্রথম প্যাডেল চালিত সাইকেল আবিষ্কার করেন৷ তবে দু’জনের কে আসল উদ্ভাবক তা কিন্তু আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি৷ যদিও ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট সাইকেল উদ্ভাবনের জন্য তাঁর দেশে স্বীকৃতি লাভ করেন৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
বিশেষ টায়ার
১৮৭০ সালের পরে ব্রিটেনে আরো দ্রুত, সুন্দর এবং উঁচু সাইকেল তৈরি করেন জেমনস স্টার্লি ও উইলিয়াম হিলম্যান৷ তবে সেগুলোর মান তেমন উন্নত না হওয়ায়, সেসময় কিছু গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে৷ যে কারণে পরে আর এগুলোকে রাস্তায় চলতে দেখা যায়নি৷ তবে ১৮৮৮ সালে সাইকেলে নিডাররাড ও ডানলপ কোম্পানির চাকা লাগানোর ফলে দুই চাকার বাহনের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ট্যুর দ্য ফ্রঁস ১৯০৩
১৯০৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথমারের মতো ফ্রান্সে ট্যুর দ্য ফ্রঁস শুরু হয়৷ আর ছয় রাউন্ডের এই প্রতিযোগিতায় মোট ২৪২৮ কিলোমিটার সাইকেল চলান প্রতিযোগিরা৷ তবে ট্যুর দ্য ফ্রঁস-এর প্রথম বিজয়ী হন ফরাসি চালক মরিস গাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Conservatoire du Patrimoine Sportif
মাউন্টেনবাইক অলিম্পিক
সাইকেল অলিম্পিক প্রথমবারের মতো স্থান লাভ করে ১৯৯৬ সালে৷ আর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মোট ৮৮জন প্রতিযোগী৷ সাইকেল অলিম্পিক প্রথম অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাটলান্টার কাছে, জর্জিয়া আন্তর্জাতিক হর্স পার্কে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Breloer
পরিবহন মাধ্যম
সারা বিশ্বে সাইকেল এখনো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন মাধ্যম৷ ছবিতে ভিয়েতনামের রাস্তায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সাইকেলে তাঁর পণ্য সামগ্রী পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Langley
স্বপ্নের সাইকেল টানডেম
একসাথে আনন্দ করার মজাই আলাদা! আর সেজন্য সাইকেলে যোগ হয় দু’টো সিট৷ তবে যিনি সাইকেল চালান, অর্থাৎ প্রথম সিটের চালককে বলা হয় পাইলট বা ক্যাপ্টেন৷ টানডেমে পেছনের সিটের সঙ্গীর পাইলটকে সঙ্গ দেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না৷