নির্বাচনের ঠিক আগে ই-মেল কেলেঙ্কারির থাবা থেকে আবার রেহাই পেলেন হিলারি ক্লিন্টন৷ কিন্তু এ ক'দিন তাঁর যে ক্ষতি হয়ে গেছে, ব্যালট বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটবে কি না, তা স্পষ্ট নয়৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল, হিলারি ক্লিন্টনের ব্যক্তিগত ই-মেল সার্ভার থেকে পাওয়া কিছু ই-মেল নিয়ে নতুন করে তদন্ত হতে পারে৷ বিরোধী রিপাবলিকান দলের বিপর্যস্ত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সুবর্ণ সুযোগ লুফে নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন, ‘‘এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা যায় না৷'' রবিবার এফবিআই জানিয়েছে, এই তদন্তের আওতায় ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ আনা হচ্ছে না৷
ই-মেল কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন করে জলঘোলা হবার পর গত ১০ দিনে কয়েক লক্ষ মার্কিন নাগরিক আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন৷ তাঁদের সিদ্ধান্তের উপর ঘটনাটি কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা কেউ জানে না৷ তবে কিছু মহল মনে করে, এর ফলে ক্লিন্টনের সুবিধাই হয়েছে৷
শেষ মুহূর্তে এফবিআই ক্লিন্টনকে রেহাই দিলেও বাকি ভোটাররা মনস্থির করে ফেলেছেন কিনা, তাও জানা নেই৷ জনমত সমীক্ষায় ক্লিন্টন এখনো ট্রাম্পের তুলনায় সামান্য এগিয়ে আছেন৷ তবে সেই ফারাক তাঁর জয়ের সম্ভাবনা মোটেই উজ্জ্বল করতে পারছে না৷
ক্লিন্টন শিবির অবশ্য আশাবাদী৷ ই-মেল কেলেঙ্কারির কালো ছায়া আপাতত সরে যাবার ফলে তাদের আশা, ভোটাররা এবার শুধু দুই প্রার্থীর যোগ্যতা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবেন৷
অন্যদিকে রিপাবলিকান শিবির এফবিআই-এর সোমবারের ঘোষণায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে৷ তদন্তে এত দ্রুত অগ্রগতি এবং তার এত সহজ পরিণতি নিয়ে তারা সন্দেহও প্রকাশ করেছে৷
ট্রাম্প আবার গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ‘রিগিং', অর্থাৎ ভোট কারচুপি নিয়ে তাঁর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন৷ তাঁর মতে, হিলারি ক্লিন্টনকে রক্ষা করতে গোটা প্রশাসন যন্ত্র কাজ করছে৷
দুই প্রার্থীই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বিশেষ করে যেসব রাজ্যের ভোট আগামী ৯ই নভেম্বর ভোটগ্রহণের গতি বদলে দিতে পারে, সেই সব ‘সুইং স্টেট'-গুলিকে তাঁরা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
ট্রাম্প আর ক্লিন্টন সম্পর্কে এখনও যা জানার আছে
দুই মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট পদপ্রার্থী সম্পর্কে সব কিছু জেনে ফেলেছেন বলে ভাবছেন? না, এখনও আপনাদের চমকে দেবার মতো কিছু তথ্য আছে...
ছবি: picture alliance/dpa/A. Filippov
মুখোশের আড়ালে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানে এলাহি কাণ্ড৷ প্রাক-নির্বাচন পর্ব চলে মাসের পর মাস ধরে, প্রার্থীদের মুখ দেখতে দেখতে যেন অরুচি হয়ে যায়৷ তা সত্ত্বেও কিছু মজার খবর নেপথ্যেই থাকে৷
ছবি: DW/M. Santos
রক্ষণশীল হিলারি
হিলারি ক্লিন্টন বড় হয়েছেন ইলিনয়ের এক কনজারভেটিভ পরিবারে৷ বাবা ছিলেন পর্দা তৈরির কারখানার মালিক৷ তরুণ বয়সে হিলারি ছিলেন রিপাবলিকান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যারি গোল্ডওয়াটার ও রিচার্ড নিক্সনের মতো কনজারভেটিভ প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন৷ তিনি ডেমোক্র্যাট হন পরে৷ সেই সঙ্গে তাঁর চুলের কেয়ারিও বদলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ron Sachs
উদারপন্থি ডোনাল্ড
গোড়ার দিকে ট্রাম্প যে কোন দলকে সমর্থন করেন – অথবা আদৌ কোনো দলকে সমর্থন করেন কিনা – তা বলা শক্ত ছিল৷ অতীতে তিনি বিল ও হিলারি ক্লিন্টন সহ ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের তাঁর সমর্থন দিয়েছেন, মাঝেমধ্যে রীতিমতো উদারপন্থি সব মন্তব্য করেছেন৷ ডোনাল্ড রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেন প্রৌঢ় বয়সে, যা তাঁর দলের সকলের খুব ভালো লাগেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. A. Clary
বিলকে গোড়ায় ‘হ্যাঁ’ বলেননি হিলারি
হিলারি ক্লিন্টনের নাম দুনিয়া প্রথম জেনেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে৷ অথচ বিল নাকি যখন প্রথম ‘প্রোপোজ’ করেন, তখন হিলারি তাঁকে ‘না’ বলেছিলেন৷ হিলারি তাঁকে বিয়ে করতে সম্মত হওয়ার আগে বিলকে বেশ কয়েকবার ‘প্রোপোজ করতে হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP/Greg Gibson
বিউটি কুইনদের সঙ্গে ট্রাম্প
১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল অবধি ট্রাম্প ছিলেন মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ বিউটি কনটেস্টগুলোর মালিক বা অংশীদার৷ সেই সূত্রে তিনি নাকি মাঝে মাঝে ড্রেসিং রুমে গিয়ে হাজির হতেন, এ কথা বলেছেন ট্রাম্প নিজেই৷ ছবিতে মিস ক্যালিফর্নিয়া যে ট্রাম্পকে কি বলছেন, তা জানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াল-মার্টের পরিচালকমণ্ডলীর প্রথম মহিলা সদস্য
ওয়াল-মার্ট ঠিক শ্রমিকবান্ধব কোম্পানি বলে পরিচিত নয়৷ তাদের প্রথম মহিলা বোর্ড মেম্বার হয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টন৷ এমনকি এর বহু বছর পরে হিলারি ওয়াল-মার্টের একটি শাখায় তাঁর আত্মজীবনী স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jim Lo Scalzo
অভিনেতা ট্রাম্প
রিয়াল এস্টেট দিয়ে শুরু করলেও, ট্রাম্প একাধিক ফিল্ম ও টিভি শো-তে আবির্ভূত হয়েছেন, তার মধ্যে সর্বাগ্রে ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ শো-টির নাম করতে হয়৷ তিনি স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ডের সদস্য ও ফিল্ম-টেলিভিশনে তাঁর কাজের জন্য বছরে এক লাখ দশ হাজার ডলার পেনশন পেয়ে থাকেন৷ হলিউড ওয়াক অফ ফেম-এ তাঁর ‘স্টার’ যোগ হয় ২০০৭ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Stern
গরু চেনেন হিলারি
ছবিতে বিল ক্লিন্টনকে দেখা যাচ্ছে গো-পরিদর্শক হিসেবে, কিন্তু হিলারিই আসলে গরু চেনেন৷ সত্তরের দশকের শেষে ‘ক্যাটল ফিউচার’ নিয়ে ফাটকা খেলে এক হাজার ডলারকে লাখ ডলারে পরিণত করেছিলেন হিলারি৷ কেউ কেউ এ-তে দুর্নীতির গন্ধ পেলেও, প্রসঙ্গটি নিয়ে হিলারির বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো অভিযোগ আনা হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Honda
কুস্তিগীরদের আখাড়ায়
ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের বস ভ্যান্স ম্যাকমেহনের সাথে নাকি দীর্ঘদিনের কাজিয়া ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ সেজন্য ট্রাম্পকে একাধিকবার রিং-এর ভিতরে দেখা গেছে৷ এমনকি রেসলিং-এর হল অফ ফেম-এও প্রবেশাধিকার পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
তেতাল্লিশ রকমের চুলের কেয়ারি
অ্যামেরিকার ফার্স্ট লেডি হিসেবে হিলারি তাঁর সাজগোজের স্টাইল নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন৷ ১৯৯৬ সালে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ম্যাগাজিন দাবি করে যে, হিলারি ক্লিন্টন হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ৪৩ রকমের হেয়ারস্টাইল দেখিয়েছেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মনিকা লিউইনস্কি সম্পর্কে কথা বলার সময় হিলারির কি হেয়ারস্টাইল ছিল৷ হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউইনস্কির সঙ্গে বিল ক্লিন্টনের অ্যাফেয়ার আজ ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Naltchayan
আসক্তি মাদকে নয়
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে থাকেন যে, তিনি কখনো মদ্যপান বা ধূমপান করেননি৷ কথাটা বিশ্বাসযোগ্য, কেননা যারা তাঁকে চেনেন ও তাঁর সঙ্গে যাদের সাক্ষাৎ হয়েছে, সকলেই জানিয়েছেন যে, ট্রাম্পের কোনো ধরণের নেশা নেই – এক ক্ষমতার নেশা ছাড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Betancour
দুনিয়াদারি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিন্টন তাঁর আগের যে কোনো সেক্রেটারি অফ স্টেটের চেয়ে বেশি দেশ সফর করেছেন, সাকুল্যে ১১২টি (অবশ্য ফ্লাইট মাইলের হিসেবে কন্ডোলিজা রাইস তাঁর থেকে এগিয়ে)৷ ২০১৩ সালে হিলারি যখন ঐ পদ ছাড়েন তখন তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা তাঁকে ১১২ নম্বর লেখা জার্সিটি উপহার দেন৷
ছবি: Getty Images/Department of State
শুচিবাই
ট্রাম্প আর ক্লিন্টন যে তাঁদের দ্বিতীয় বিতর্কের আগে হাত মেলাননি, তা নিয়ে অনেক কিছু বলা ও লেখা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তব সত্য হলো এই যে, ট্রাম্প কারো সঙ্গে করমর্দ্দন করতে পছন্দ করেন না, কেননা তাঁর জীবাণু সংক্রমণের ভয় আছে, যেমন ছিল হাওয়ার্ড হিউস, মাইকেল জ্যাকসন ও অ্যাডল্ফ হিটলারের৷
ছবি: picture alliance/AP Images/S. Walsh
গ্র্যামি বিজয়ী ক্লিন্টন
অনেকের কানেই ক্লিন্টনের কণ্ঠস্বর বিশেষ শ্রুতিমধুর নয়৷ তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘ইট টেকস এ ভিলেজ’ বইটির অডিও সংস্করণের জন্য ১৯৯৭ সালে বেস্ট স্পোকেন ওয়ার্ড পার্ফর্মেন্সের গ্র্যামি লাভ করেন৷ প্রসঙ্গত, সেলিন ডিয়ন সে-বছর সেরা অ্যালবামের গ্র্যামি লাভ করেছিলেন৷
ছবি: picture-lliance/dpa
আইন-আদালত
ট্রাম্পের সব কিছুই একটু অতিরঞ্জিত, কাজেই তাঁর বিচারবিভাগীয় কাহিনিই বা বাদ যাবে কেন? যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারাল ও প্রাদেশিক আদালতগুলি মিলিয়ে ট্রাম্প প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠার মতো নয়৷ তবে ডোনাল্ডও ছাড়বার পাত্র নন...৷