বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত গাড়ি কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করে৷ তবে তার জন্য চাই চার্জিংয়ের অবকাঠামো৷ কলম্বিয়ায় ভিন্টেজ গাড়িতে নতুন ইঞ্জিন বসিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ গোটা দেশে জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের উদ্যোগ চলছে৷
কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করছে বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত গাড়ি ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
১৯৫২ সালে তৈরি ফলক্সভাগেন কোম্পানির এই ভ্যানটি কোনো বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন না করে বোগোটার পথে ঘুরছে৷ বাইরের খোলস খাঁটি হলেও ভেতরের ইঞ্জিনটি বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে৷
কার্লোস আন্দ্রেস গার্সিয়া ভিনটেজ গাড়ির অনুরাগী৷ তিনি ‘এভকো' কোম্পানির অন্যতম কর্ণধারও বটে৷ প্রায় ৭,৭০০ ইউরোর বিনিময়ে এই কোম্পানি ভিন্টেজ গাড়িতে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসায়৷ আন্দ্রেস বলেন, ‘‘আমরা ভবিষ্যতেও ভিন্টেজ গাড়ি দেখে আনন্দ পেতে চাই৷ কিন্তু পরিবেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কম্বাসচন ইঞ্জিন ব্যবহার মোটেই দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় হতে পারে না৷ আমরা আরো ভালোভাবে বাঁচতে চাই৷''
ট্রাভেল ডায়েরি: ই-কারে চার দেশ
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক ওয়ারডা ইমরান এবং মেডেলিন পিট জার্মান ভাষাভাষী চারটি দেশ - জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন এবং অস্ট্রিয়া ভ্রমণ করেছেন ইলেক্ট্রিক কারে করে৷ তাদের দুই সপ্তাহের ভ্রমণের কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: privat
প্রথম দিন: যাত্রা শুরু!
নানা গবেষণা এবং ফোন কলের পর আমাদের যাত্রা শুরু করা সম্ভব হয়৷ প্রথমে ব্যাগ আর ভিডিও ইকুইপমেন্ট নিয়ে আমরা স্টুটগার্টে যাই ট্রেনে করে৷ সেখানে ই-কার ড্রাইভ করার জন্য প্রশিক্ষণ নেই৷ এবং সবশেষে বাডেন-ভ্রুটেমবের্গ রাজ্য থেকে গাড়ি নিয়ে থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করি৷
ছবি: Warda Imran/DW
দ্বিতীয় দিন: মন্ত্রমুগ্ধকর ব্লাওটফ
ডয়চে ভেলের দর্শকরা আমাদের প্রথম গন্তব্য ঠিক করে দিয়েছেন৷ জার্মানির দক্ষিণে জঙ্গলে বড় গাছের মধ্যে লুকিয়ে ছিল আমাদের গন্তব্য৷ নীল-সবুজ ব্লাওটফ লেক দেখে আমরা এতটাই মুগ্ধ হই যে কয়েক ঘণ্টা সেখানে কাটাই৷
ছবি: privat
তৃতীয় দিন: সুইজারল্যান্ডে গাড়ি চালানো
ডয়চে ভেলের ইন্সটাগ্রামে দর্শকদের ভোটে আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য নির্ধারিত হয় সুইজারল্যান্ডে৷ সেই গন্তব্যের কথা পড়ে জানাচ্ছি৷ দ্বিতীয় দিন আমাদের মূলত গাড়ি চালাতে হয়েছে জার্মান-সুইস সীমান্ত ধরে৷ কনস্টান্স থেকে বেরিয়ে লুকার্নের পথে আমাদের দীর্ঘসময় যানজটে থাকতে হয়েছিল৷
ছবি: Warda Imran/DW
চতুর্থ দিন: ট্রেনে চড়ে চূড়ায়
আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল একটি মাউন্টেন রেলওয়ে৷ লুকার্নে বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া কগহুইল ট্রেনের আমাদের যাত্রা বেশ রোমাঞ্চকর ছিল৷
ছবি: DW
পঞ্চম দিন: ঐতিহ্যবাহী সুইস মেন্যু
ঐতিহ্যবাহী সুইস খাবার পরখ করার জন্য আমরা জুরিখের সুইস রেস্টুরেন্টে যাই৷ সেখানকার চিজ বেশ বিখ্যাত৷ চিজে ডুবিয়ে রুটি খেতে বেশ ভালো লেগেছে৷
ছবি: Madelaine Pitt
ষষ্ঠ দিন: টারাস্প কাসেল
সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ের চূড়ায় এই কাসেলটি সত্যিই অনন্য৷ আপনি যদি রাজপ্রাসাদের ভক্ত হন তাহলে অবশ্যই এখানে আসতে পারেন৷
ছবি: Warda Imran/DW
সপ্তম দিন: লামা ড্রামা
এই দিন আমাদের ‘সারপ্রাইজ জেম’ ছিল চার পায়ের আর লম্বা গলার একটি প্রাণী৷ ছোট্ট দেশ লিখটেনস্টাইনে যাওয়ার পথে আমাদের পরিকল্পনা ছিল লামা এবং আলপেকাসের সঙ্গে হাইকিংয়ে যাওয়ার৷ আমাদের সঙ্গ দেয়া এই প্রাণীটির নাম এলভিস৷
ছবি: Warda Imran/DW
অস্টম দিন: পরিকল্পনায় অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন
আমাদের প্রিয় ই-কার হাইডি আর আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি হয়নি৷ তিনটি আলাদা দেশে চারবার আমরা সেটির ব্যাটারি চার্জ দেয়ার চেষ্টা করে বুঝলাম যে এটির কোনো যান্ত্রিক গোলোযোগ রয়েছে যা আমাদের পক্ষে ঠিক করা সম্ভব নয়৷ যদিও গাড়িটি চালানোর অভিজ্ঞতা চমৎকার ছিল, কিন্তু ই-কার আসলে পুরোপুরি ঝামেলামুক্ত নয়৷
ছবি: Madelaine Pitt/DW
নবম দিন: আবারো রাস্তায়
হাইডির বদলে নতুন আরেকটি গাড়ি পেয়েছি আমরা৷ সেটি নিয়ে অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি৷ সময় স্বল্পতার কারণে একটি গন্তব্য বাদ দিয়ে আমরা অসধারণ রেটেনবের্গে যাই৷ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে ছোট্ট এই শহরটিতে রঙিন বিভিন্ন ভবনের দেখা মেলে৷
ছবি: Madelaine Pitt
দশম দিন: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বরফের গুহা
পূর্বদিকে চার ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর একটি ক্যাবল কার ট্রিপ এবং তুষারের মধ্যে দিয়ে হাইকিংয়ের পর আমরা আইসরাইজেনভেল্টে পৌঁছাই৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বরফের এই গুহা এক কথায় অসাধারণ৷
ছবি: Madelaine Pitt/DW
একাদশ দিন: লেক লজ
অস্ট্রিয়া ত্যাগ করার সময় হয়েছে৷ আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য বাভারিয়া৷ মিউনিখের কাছে ইয়েৎসেনডর্ফে লেক লজ এবং ট্রিহাউস খুবই সুন্দর৷ সময় এবং সুযোগ থাকলে অবশ্যই আসতে পারেন এখানে৷
ছবি: privat
দ্বাদশ দিন: রোড ট্রিপের সমাপ্তি
আমাদের ভ্রমণের শেষদিন বাভারিয়ান আল্পসের বিভিন্ন ঐতিহ্যে পূর্ণ ছিল৷ আমরা অফটেনশোয়ানের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে একটি এল্পহর্ন বাজিয়েছি৷ আর এর মাধ্যমে আমাদের ভ্রমণের সমাপ্তি ঘটে৷ আমাদের এই ভ্রমণ সম্পর্কে আরো জানতে ডয়চে ভেলের ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট ডিডাব্লিউ_ট্রাভেল অনুসরণ করতে পারেন৷
ছবি: privat
12 ছবি1 | 12
বেশিরভাগ মালিকই তাঁদের ভিন্টেজ গাড়ির ভালো যত্ন নেন৷ সে কারণে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনে রূপান্তরের জন্য সেগুলি খুবই উপযুক্ত৷ আন্দ্রেস বলেন, ‘‘আমরা যানের ইঞ্জিন মাউন্ট, সব প্রযুক্তি ও জ্যামিতি কাজে লাগিয়েছি৷ তাই ইঞ্জিন বদলানোর পরেও সেটির আচরণ একই রকম থাকে৷''
বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই সব ঢোকানো এবং নতুন করে ইঞ্জিন বসানোর পরেও সবকিছু ঠিকমতো চালু রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডানিয়েল ওনার্দো সান্ডোভাল নিজের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত৷ তিনি মনে করেন, ‘‘প্রত্যেকটি যান নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে৷ আসলে কিন্তু প্রত্যেক ধরনের যানেই রূপান্তর ঘটানো সম্ভব৷ আমরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন আদর্শ রাখার চেষ্টা করি৷ সেইসঙ্গে গাড়ির বাইরের নান্দনিক ও মৌলিক রূপ অক্ষত রেখেই কার্যকারিতার উন্নতির চেষ্টা করি৷''
মূল যানে যে প্রযুক্তি যোগ করা হয়, তার ফলে মালিক আধুনিক গাড়ির অনেক সুবিধা পান৷ সেই নির্মল বৈদ্যুতিক শক্তি পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদিত হলে আরো ভালো৷ আন্দ্রেস জানান, ‘‘আমরা যে ব্যাটারি ব্যবহার করি, সেগুলি ৩,৬০০ বার চার্জ করা সম্ভব৷ অর্থাৎ কোনো গাড়ির রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার হলে ব্যাটারির আয়ু হয় সাত লাখ কিলোমিটার অথবা ১২ থেকে ১৫ বছর হতে পারে৷''
ইলেকট্রিক ইঞ্জিন কালো ধোঁয়া নির্গমন ও বিকট শব্দ দূর করে, যা যানজট ও শব্দ দূষণে জর্জরিত এই শহরের জন্য বিশাল উপকারী৷ তবে সাম্প্রতিক কালে কলম্বিয়ায় ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড যানের অনুমোদন বেড়ে চললেও গোটা দেশজুড়ে ইলেকট্রিক যান চালানোর অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠে নি৷ সান্ডোভাল বলেন, ‘‘কলম্বিয়ায় চার্জিংয়ের অবকাঠামোর অভাব বড় এক অন্তরায়৷ সে কারণে হয়তো আরো আন্তর্জাতিক পরিষেবা কোম্পানির আগমন দরকার৷ তখনই বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত গাড়ি সহজে চালানো যাবে৷''
কার্বন নির্গমন কমাচ্ছে বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত গাড়ি
04:41
This browser does not support the video element.
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ওমর ওরোস্তেগুইও সে বিষয়ে একমত৷ তিনি মনে করেন, ‘‘বিশেষ করে ব্যক্তিগত মালিকানার ইলেকট্রিক কারের ক্ষেত্রে সব ভবনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই৷ ফলে এমন গাড়ি সম্পর্কে উৎসাহ জাগাতে সময় লাগছে৷ তবে গোটা কলম্বিয়া তথা রাজধানী বোগোটা জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে৷ বোগোটায় তার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে৷ অনেক বাস ইতোমধ্যেই বিদ্যুতে চলছে অথবা কম বস্তুকণার ইঞ্জিন ব্যবহার করছে৷ এমন উদ্যোগ বাতাসের মানের উন্নতির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে৷''
ব্যক্তিগত মালিকানার যানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়৷ বোগোটায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জন্য বড়জোর ৪০টি চার্জিং স্টেশন রয়েছে৷ তবে এভকো কোম্পানির কর্ণধার আশাবাদী৷ ‘এভকো' কোম্পানির সহ-কর্ণধার কার্লোস আন্দ্রেস গার্সিয়া বলেন, ‘‘আমার মতে, আমাদের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারি৷ একটি মাত্র ইলেকট্রিক গাড়ি তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না৷ কিন্তু একটির বদলে ৫০০ বা এক হাজার গাড়ি পথে নামলে অবশ্যই আমাদের শহরগুলির জীবনযাত্রার মানের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷''
ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসানো ভিন্টেজ গাড়িতে অতীতের ডিজাইনের সঙ্গে আধুনিক যুগের নির্মল জ্বালানির মেলবন্ধন ঘটছে৷ এমন যান ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত৷