কলেরা জীবাণু, অথচ তা থেকে রোগ হয় না, কেননা তাদের রোগাক্রান্ত করার ক্ষমতা নেই৷ জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমন একটি ওষুধ তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যা কলেরা জীবাণুর ‘ভিরুলেন্স'-কে বেঁধে রাখবে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বহু দেশে কলেরা এক সুপ্রাচীন ব্যাধি৷ অপরিশুদ্ধ পানি থেকেই সাধারণত এই রোগ ছড়ায়৷ বোখুম-এর রুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ফ্রানৎস নার্বেরহাউস ও তাঁর সতীর্থরা আবিষ্কার করেছেন যে, এই ডায়রিয়া অর্থাৎ পেট নামার রোগের জীবাণুগুলি তাদের মানব শিকারকে চেনে তার শরীরের তাপমাত্রা থেকে৷ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছলে, তবেই কলেরা জীবাণুর প্রকোপ বা বিষময়তা সক্রিয় হয়৷ অধ্যাপক নার্বেরহাউস বলেন:
‘‘পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রা ২০/২৫ ডিগ্রি হলে, রোগাক্রান্ত করার জিনগুলো সক্রিয় হয় না৷ কিন্তু জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে, সেগুলি সক্রিয় হয় – অর্থাৎ জীবাণুগুলি যখন আমাদের পাকস্থলীতে ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পৌঁছায়, তখন সব ক'টি ভিরুলেন্স বা বিষময়তার জিন সক্রিয় হয়৷''
তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রণের প্রথম হদিশ পান গবেষকরা, যখন তাঁরা একটি রঙ ব্যবহার করে সক্রিয় জিন সিকোয়েন্সগুলি চিহ্নিত করেন৷ ৩৭ ডিগ্রিতে বিষময়তার জিনগুলি সক্রিয় হয়ে উঠলে, জীবাণুগুলি অতিবেগুনি রশ্মিতে আলোক বিচ্ছুরণ করে – কিন্তু ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নয়; কেননা তখন জিনগুলি নিষ্ক্রিয়ই থাকে৷ সক্রিয়তা অথবা নিষ্ক্রিয়তার কারণ হল জীবাণুটির আরএনএ বা রাইবো নিউক্লেয়িক অ্যাসিড-গত কাঠামো৷ আরএনএ ‘খোলা' থাকলে, জীবাণু থেকে রোগ ছড়ায়; আরএনএ ‘জোড়া' থাকলে, কোনো কিছু ঘটে না৷ আরএনএ খোলা না জোড়া, এক্সপেরিমেন্ট করার সময় সেটা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা এক ধরনের এনজাইম ব্যবহার করেন, যা শুধুমাত্র ‘খোলা' আরএনএ-কে কেটে ছোট ছোট অংশে ভাগ করতে পারে৷
বাংলাদেশে স্যানিটেশন কাভারেজ বাড়ছে, রয়েছে বিতর্কও
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ তবে এখনো অনেক মানুষের কাছে এই সুবিধা পৌঁছায়নি৷ ঠিক কত শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করছে তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক৷
ছবি: DW
বেড়েছে টয়লেটের ব্যবহার
একটা সময় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির কোনায় খোলা শৌচাগার দেখা যেত৷ খালের পাশে, পুকুরের কোনায় থাকতো মলত্যাগের স্থান৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে৷ সরকারি হিসাব বলছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করছে৷
ছবি: DW/K. James
শতাংশের হিসাব
বাংলাদেশে ঠিক কত শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন তার একটা হিসেব পাওয়া যায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় জানান, ‘‘আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ৯০ শতাংশ পরিবারকে স্যানিটেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে৷’’
ছবি: DW/A. Chatterjee
তবুও সমালোচনা
তবে অর্থমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেননি এসংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ৷ ওয়াটারএইড বাংলাদেশের ডা. মো. খায়রুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতায় লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে সবার জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল৷’’ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক অনেক বলেই মনে করেন খায়রুল৷
ছবি: Lalage Snow/AFP/Getty Images
প্রতিশ্রুতি কি পূরণ হয়েছে?
জুন মাসে প্রকাশিত লেখায় খায়রুল অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ের বাজেট বক্তৃতা পর্যালোচনা করেছেন৷ এতে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে স্যানিটেশনের কভারেজ এক শতাংশ কমেছে৷ খায়রুল ইসলাম তাঁর নিবন্ধে আরেকটি হিসেব দিয়েছেন যার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কোন মিল নেই৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের সদ্যপ্রকাশিত যৌথ প্রতিবেদন ২০১৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে উন্নত ল্যাট্রিনের হার ৫৫ শতাংশ৷’’
ছবি: PRAKASH SINGH/AFP/Getty Images
তবে কাজ চলছে
স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কাজ এগিয়ে চলেছে৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ২৪৮টি উপজেলার গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের নিকট টেকসই ও সমন্বিত ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিনসেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন, দূষিত পানি এবং অনিরাপদ স্বাস্থ্য অভ্যাসের কারণে সৃষ্ট দূষণচক্রের অবসানকল্পে কাজ করছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কারণে প্রয়োজন স্যানিটেশন
স্যানিটেশনের অভাবের কারণে পৃথিবীতে প্রতিদিন পাঁচ হাজার শিশু প্রাণ হারায়৷ যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করলে তা আশেপাশের পরিবেশে এবং পানিতে রোগ, জীবাণু ছড়ায়৷ আর সেই পানি ব্যবহার করলে মানুষের শরীরে দেখা দেয় কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ৷ এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্প ব্যবস্থা
স্বল্প খরচে নিরাপদ টয়লেট নিশ্চিতে চলছে নানাবিধ গবেষণা৷ সম্প্রতি জার্মানির বিজ্ঞানীরা এক নতুন ধরনের কমোড আবিষ্কার করেছেন যা ব্যবহার অত্যন্ত সহজ৷ আর তৈরিতে খরচও কম৷ এই কমোড থেকে রোগ, জীবাণু সহজে বাইরে যাবে না৷ বরং এতে থাকা মলমূত্র দিয়ে সার তৈরি সম্ভব হবে৷
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
আরএনএ হলো ডিএনএ-র নকল৷ জীবাণুর অভ্যন্তরে প্রোটিন তৈরি হয় এই আরএনএ অনুসারে৷ ছোট ছোট প্রোটিন তৈরির ‘কারখানা' আরএনএ-র চারপাশে জমায়েত হয়ে, আরএনএ-তে রাখা তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই অনুযায়ী প্রোটিন তৈরি করে৷ ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রার ঠান্ডা পানিতে যখন কলেরা জীবাণু ঘুরে বেড়ায়, তখন তাদের আরএনএ ‘জোড়া'-ই থাকে৷ আরএনএ-র ঠিক যে স্থানটি থেকে বিষময় প্রোটিন তৈরির তথ্য সংগৃহীত হয়, সেখানটা ভাঁজ হয়ে থাকার ফলে, প্রোটিন তৈরির কারখানাগুলি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পায় না৷
জীবাণু মানুষের পেটে গেলে, তার পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রা বেড়ে ৩৭ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়৷ তখন আরএনএ-র ভাঁজ খুলে যায় – সঠিক স্থান থেকে বিষময় প্রোটিন তৈরির তথ্য সংগৃহীত হয়৷ বিষময় প্রোটিনগুলি তৈরি হয় এবং মানুষ কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়৷ জীবজন্তুর উপর পরীক্ষায় গবেষকরা ইতিমধ্যেই কলেরার আরএনএ এমনভাবে বদলাতে পেরেছেন যে, তাপমাত্রা বাড়লেও আরএনএ-র ‘ভাঁজ'-টা খোলে না৷ অর্থাৎ কলেরা সংক্রমণ সত্ত্বেও জীবজন্তুগুলি সুস্থই থেকেছে৷ মানুষের উপযোগী এ ধরনের ওষুধ তৈরি করতে আরো কয়েক বছর সময় লেগে যাবে৷ এমন একটি পদার্থ খুঁজে বার করতে হবে, যা কলেরা-আরএনএ-র সঙ্গে এমনভাবে লেগে থাকবে যে, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেও আরএনএ-র ভাঁজ খুলবে না৷ এ ধরনের ওষুধ কলেরা প্রতিষেধক হিসেবে পানীয় জলেও মেশানো চলতে পারে৷