1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকা

৮ সেপ্টেম্বর ২০১২

এ বছরের গোড়ার দিকে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি’তে কলেরা মহামারি আকারে দেখা দেয়৷ কলেরা দমনে ‘ডক্টর্স উইদাউট বডার্স’এর কয়েকটি টিম টিকা অভিযান শুরু করে বেশ সফল হয়েছে৷

Medizin Krankheitserreger Bakterien Vibrio cholerae Stäbchenbakterium gramnegativ Erreger der Cholera Mikroaufnahme Rasterelektronenmikroskop REM-Color medicine bacteria Vcholera40K-134r
Cholera-Bakterienছবি: picture-alliance/OKAPIA KG Germany/Dr.Gary Gaugler/OKAPIA

‘ডক্টর্স উইদাউট বডার্স' এর সদস্যরা গিনির স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সহায়তায় এই টিকা অভিযানটি চালিয়েছেন৷ প্রকল্পের পরিচালক শার্ল গোদ্রি জানান, আমাদের ৩০টি টিমের সদস্যরা গড়ে প্রতিদিন ১০০০ মানুষকে টিকা দিয়েছেন৷

কলেরা এখন পর্যন্ত একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি৷ এটি ‘ভিব্রিও কলেরা' ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়৷ এর একটি লক্ষণ হল,অতিরিক্ত পেটের অসুখ বা উদরাময়৷ বার্লিনের রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ক্লাউস স্টার্ক ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কলেরা রোগটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিশেষ করে যেসব মানুষ কিছুটা দুর্বল এবং যাদের খাওয়া দাওয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সন্তোষজনক নয়, তাদেরই কোনো সংক্রমণ হলে কলেরার মত কঠিন অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ ঠিকমত চিকিৎসা দেয়া না হলে অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে৷''

কলেরায় পান করাটা জরুরি

কলেরায় আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল পদার্থ পান করা উচিত৷ রোগীর শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করা দরকার৷ কেননা কলেরায় আক্রান্তদের দেহ থেকে প্রতি দিন ১০ থেকে ২০ লিটার তরল পদার্থ বের হয়ে যায়৷

গিনিতে টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষারত নারী পুরুষ ও শিশুরাছবি: David Di Lorenzo/MSF

বার্লিনের ‘ডক্টর্স উইদাউট বডার্স'এর জেবাস্টিয়ান ডিটরিশ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সংক্রমণের পর থেকে রোগের লক্ষণগুলি দেখা দেয়া পর্যন্ত, সময়টা খুব কম৷ এটা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে৷ এর ফলে দেখা দেয় অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়রিয়া সেই সাথে বমি৷ এরপর ডায়রিয়ার সাথে শুধু পানিই বের হয়৷''

কলেরা অত্যন্ত সংক্রামক এক রোগ৷ বিশেষ করে দূষিত পানির মাধ্যমেই সংক্রমিত হয় রোগটি৷ যে সব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত নয়, সেসব দেশেই এই রোগ দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেশি৷ এসব জায়গায় নদী, পুকুর, খাল বিল বা খোলা কুয়ার পানি পান করে অনেক মানুষ৷ এছাড়া অন্যান্যভাবেও সংক্রমণ দেখা দেয়৷ ডা. ডিটরিশ'এর ভাষায়, ‘‘কলেরায় আক্রান্ত কোনো মানুষ যদি কারো সঙ্গে হাত মেলায় এবং সেই ব্যক্তি যদি খাবার তৈরি করে, তাহলে সেই খাবার খেয়েও কলেরার সংক্রমণ হতে পারে৷''

এশিয়া, আফ্রিকার অনেক দেশে কিংবা যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়া অঞ্চলগুলিতে স্বাস্থ্যকাঠামো ভাল নয়৷ তাই কোনো জায়গায় ভূমিকম্পের পর বা শরণার্থী শিবিরগুলিতে কলেরা মহামারির আকারে দেখা দেয়৷ উদাহরণ স্বরূপ হাইতির নাম করা যায়৷

টিকায় সুফল

এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে গিনিতে কলেরার ঝুঁকিপূর্ণ দুই অঞ্চলে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে৷ এই টিকা প্রচুর পানির সাথে গিলে খেতে হয়৷ এতে মানুষের শরীরে তা ভালভাবে কাজ করে৷ দ্বিতীয়বার টিকা দিতে আসাটাও খুব জরুরি৷ কেননা ভালভাবে রোগ প্রতিরোধের জন্য কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার টিকা দিতে হয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়৷ গণটিকা অভিযান কলেরা মহামারির আকারে দেখা দেয়ার সাথে সাথেই শুরু করা প্রয়োজন, যাতে রোগটি আর বিস্তৃত হতে না পারে৷

চলছে কলেরার টিকা দেওয়াছবি: David Di Lorenzo/MSF

চিকিৎসকদের টিমটি অন্যান্য বিষয়ের দিকেও নজর দিয়েছেন৷ যেমন গৃহস্থালীর কাজকর্মে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া, দূষণমুক্ত পানির ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা, স্বাস্থ্যরক্ষার সামগ্রী বিলি করা ইত্যাদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা৷

তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি গিনিবাসীদের টিকা দেয়ার স্থানে আসার জন্য উদ্দীপ্ত করা৷ এজন্য চিকিৎসক টিমটির সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাইকের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, কবে কোথায় টিকা দেয়া হবে৷ সাধারণত সহজেই সেই সব জায়গায় যাওয়া যায়৷ ডা. শার্ল গোদ্রি জানান, ‘‘যে সব অঞ্চলের মহামারি প্রতিরোধ কেন্দ্রে আমরা টিকা দিয়েছি, সেই সব জায়গায় সংক্রমণের হার একেবারে রোধ হয়েছে৷''

বাংলাদেশেও একই সমস্যা

বাংলাদেশেও দূষিত পানির মাধ্যমে কলেরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন বিদ্যুতের অপ্রতুলতা থাকে তখন অনেককেই নোংরা পানি দিয়ে গৃহস্থালীর কাজকর্ম সারতে হয়, বাধ্য হলে পানও করতে হয়৷ ফলে বেড়ে যায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা৷ ডায়রিয়ার রোগীদের মধ্যে আবার ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণু বহন করেন৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশেষ করে দূষিত পানির কারণেই ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়৷ এ ছাড়া টাইফয়েড, জন্ডিস ও চর্ম রোগসহ আরো কিছু রোগ দেখা দেয় এ কারণে৷ তাই মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপও কমে যাবে৷ উল্লেখ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক জানিয়েছেন, টিকাদানের আন্তর্জাতিক সংগঠন, ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইডেশন' বা ‘গাভি' বাংলাদেশকে ২০১৩ সাল থেকে কলেরা ও নিউমোনিয়ার দুটি টিকা দেবে৷ এর ফলে রোগ দুটিকে আয়ত্তে আনার ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ৷

প্রতিবেদন: গুডরুন হাইজে/আরবি

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ