1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণার এক বছরপূর্তী

সঞ্জীব বর্মন১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

২০০৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হাশিম তাচি কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন৷ সার্বিয়া এই ঘোষণা মেনে না নিলেও এখনো পর্যন্ত ৫৪টি দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷

স্বাধীনতার এক বছর পর উৎসবের পরশছবি: DW / Refki Alija

প্রেক্ষাপট

সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ার সর্বশেষ বিভাজনের ইতিহাসের সূত্রপাত প্রায় ২ দশক আগে৷ সেসময়ে সার্বিয়ার শাসক দলের নেতা স্লবোদান মিলোসেভিচ কসোভো প্রদেশে প্রায় ৬০০ বছর আগের এক যুদ্ধের স্মরণে দেওয়া উসকানিমূলক এক ভাষণে কসোভোর স্বায়ত্ত্বশাসনের বিরোধিতা করেছিলেন৷ ঐ যুদ্ধকে সার্ব জাতির ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এর এক বছর পর তিনি পুলিশ বাহিনী কাজে লাগিয়ে কসোভোর যেটুকু স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার ছিল, তাও খর্ব করেছিলেন৷

তখন থেকেই শুরু হয়েছিল বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের দেশ ইয়ুগোস্লাভিয়ার ভাঙনের প্রক্রিয়া৷ একে একে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷

সার্বিয়ার কসোভো প্রদেশেও এই বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা দেখা গেল৷ কসোভোর সংখ্যাগুরু আলবেনীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী এক সমান্তরাল রাষ্ট্রের ঘোষণা করে৷ সেই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট – লেখক ইব্রাহিম রুগোভা বেলগ্রেডের সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের ডাক দেন৷ কসোভোর মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে মধ্যস্থতার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার কোনোটাই সফল হয় নি৷

কসোভোর প্রধানমন্ত্রী হাশিম তাচিছবি: picture-alliance/dpa

সার্বিয়া থেকে কসোভোর বিযুক্তি

এর ঠিক প্রায় ৯ বছর পর রুগোভার নেতৃত্বে নতুন এক আন্দোলন শুরু হয়৷ ১৯৯৮ সালে UCK বা কসোভো মুক্তি বাহিনী নামের সার্বিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে৷ তাদের হামলার মাত্রা দিনে দিনে প্রবল হতে থাকে৷

বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজ কসোভোর প্রশ্নে দ্রুত হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়৷ কসোভোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বন্ধ করতে ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংগঠন OSCE-র এক উদ্যোগ বিফল হওয়ার পর ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সরাসরি সার্বিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করে৷ ঐ বছরই সার্বিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ন্যাটোর এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ন্যাটো ও জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হয় কসোভোর পুনর্গঠনের কাজ৷

যাবতীয় প্রচেষ্টা ও লাগাতার আলোচনা সত্ত্বেও সার্বিয়া ও কসোভোর নেতৃত্বের মধ্যে কোনরকম আপসের সম্ভাবনা না দেখতে পেয়ে ২০০৭ সালের শেষে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টি আটিসারি কসোভোর স্বাধীনতার এক মডেল তুলে ধরেন৷ এর আওতায় পূর্ণ স্বাধীনতা নয় – বরঞ্চ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এক সংবিধানের মাধ্যমে কসোভোর সংখ্যাগুরু আলবেনীয় জনগোষ্ঠীকে স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দেওয়া হয়৷ সেইসঙ্গে কসোভোর সংখ্যালঘু সার্বদের অধিকার ও তাদের প্রভাবও যাতে নিশ্চিত থাকে – তার আশ্বাসও দেওয়া হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে কসোভোর স্বাধীনতার এই মডেল কার্যকর করা হয়৷ সার্বিয়া অবশ্য শুরু থেকেই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এসেছে৷ এরই মধ্যে কসোভোর সংসদ যখন পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস্লাভ তাদিচ বলেন, ‘‘রাষ্ট্র হিসেবে সার্বিয়া দায়িত্বশীলভাবে কিছু পদক্ষেপ নেবে এবং সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কসোভোর একতরফা ও বে-আইনী স্বাধীনতার ঘোষণাকে খারিজ করে দেবে৷ সার্বিয়া কখনো কসোভোর স্বাধীনতা মেনে নেবে না৷’’

কসোভোর মানচিত্র

স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক

জাতিসংঘের ১২৪৪ প্রস্তাব অনুযায়ী কসোভোয় জাতিসংঘের মিশন ও ন্যাটো সুরক্ষা বাহিনী পাঠানো হয়েছিল৷ সার্বিয়া ও রাশিয়ার মতে, কসোভোর নতুন সংবিধান সেই প্রস্তাবের অবমাননা করেছে৷ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কসোভোর স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করেও আন্তর্জাতিক সমাজে এখনো ঐক্যমত অর্জিত হয় নি৷ জার্মানি ছিল প্রথম দেশগুলির অন্যতম, যারা কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়৷ জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মতে, কসোভোর বিষয়টি অন্য কোনো ঘটনার সঙ্গে তুলনীয় নয়৷

সার্বিয়ার বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে কসোভোর স্বাধীনতার স্বীকৃতি এমন এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে, যা বিশ্বের অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে – এমন আশঙ্কা করছে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র, যাদের নিজেদেরই এমন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ জার্মানি ও ফ্রান্সের মত দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিলেও স্পেন কসোভোর প্রশ্নে দূরত্ব বজায় রেখেছে৷ সেদেশের বিচ্ছিন্নতাকামী বাস্ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পেনের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়৷ জাতিসংঘের ৫৪টি সদস্য দেশ এখনো পর্যন্ত কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টির মধ্যে ২২টি রাষ্ট্রও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস্লাভ তাদিচছবি: AP

এক বছর পর

স্বাধীনতা ঘোষণার এক বছর পর কসোভো সম্পর্কে কিছুটা বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এমনকী সার্বিয়াও জাতীয়তাবাদী আবেগ সরিয়ে রেখে এই পথে এগোচ্ছে৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস্লাভ তাদিচ বলেন, তাঁর দেশ কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে না বটে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিতে কসোভোর সদস্যপদের প্রশ্নেও আপত্তিও জানাবে না৷ মনে রাখতে হবে, সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে আগ্রহী৷ কসোভোর জন্যও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সদস্য হওয়া জরুরী – তা না হলে বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সহ অন্যান্য সূত্র থেকে উন্নয়ন সাহায্য পাওয়া কঠিন হবে৷

স্বাধীনতা ঘোষণার ১ বছর পর কসোভোর মানুষ কতটা সন্তুষ্ট? সার্বিয়ার শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কি তাদের আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হয়েছে? ১৭ই ফেব্রুয়ারি – অর্থাৎ স্বাধীনতা ঘোষণার ঠিক ১ বছর পর কিছুটা উচ্ছ্বাস অবশ্যই দেখা গেছে৷ রাজধানী প্রিস্টিনার রাস্তায় উৎসবের মধ্যে এক তরুণ জানালো তার অনুভূতির কথা৷ তার মতে, ‘‘এক বছর পর আমি গর্ব বোধ করতে পারি – কারণ আমরা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পেরেছি৷ শক্তিশালী দেশগুলি আমাদের স্বীকৃতিও দিয়েছে৷ এছাড়া অবশ্য অন্য কোনো ইতিবাচক বিষয় আমি দেখতে পাচ্ছি না৷’’

উৎসবের ভিড়ে এক ট্যাক্সিচালক জানালেন, ‘‘আসলে আমার আরও প্রত্যাশা ছিল৷ বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা, অর্থনীতি – এসব ক্ষেত্রে আমি আরও উন্নতি আশা করেছিলাম৷ এখন যে দারিদ্র্য রয়েছে, তা সমাজের মধ্যে এক বোমার মত ফুলে ফেঁপে উঠছে৷’’

বৃদ্ধ এক ব্যক্তি নাচ-গান ও উৎসবের ভিড় থেকে সরে এসে মাথা নাড়তে নাড়তে নিজের ক্ষোভের কথা তুলে ধরে বললেন, ‘‘একটা বছর পেরিয়ে গেল – কিছুই তো হল না৷ না আছে নিরাপত্তা – উত্তরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই, সেখানে সার্বরাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে৷ সরকার আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই পালন করা হয় নি৷’’

বাস্তবে অবশ্য এই এক বছরে অনেক ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে৷ নিজস্ব সংবিধান, নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী, নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে উঠেছে৷ প্রিস্টিনায় অনেক দূতাবাস খোলা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সাহায্যও আসছে – এক বিশেষ দাতা সম্মেলনের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাহায্য আসছে৷ তবে এই সব সাফল্য সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া কসোভোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ