সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার নীচ দিয়ে একটি শিশুকে আরেকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক পুরুষ৷ এই ছবি চলতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ড' জয় করেছে৷ সাদা-কালো ছবিটিতে শরণার্থী সংকটের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
বুদাপেস্টভিত্তিক অস্ট্রেলীয় মুক্তপেশাজীবী আলোকচিত্রী ওয়ারেন রিচার্ডসন ছবিটি তুলেছেন৷ হাঙ্গেরির সীমান্তে একদল শরণার্থীর সঙ্গে গতবছর কয়েকদিন কাটানোর সময় ছবিটি তোলেন তিনি৷
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর বিচারকমন্ডলীর সদস্য ভন ওয়ালেস, যিনি আল জাজিরা অ্যামেরিকার একজন উচ্চ পদস্থ ‘ফটো এডিটর'৷ ছবিতে শিশু এবং তাকে ধরে রাখা পুরুষটির মধ্যেও এক কাঁটাতারের বেড়া ফুটে উঠেছে৷ বলা বাহুল্য ছবিটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মর্মস্পর্শী৷
চাঁদের আলোতে তোলা এই ছবিতে ২০১৫ সালে যুদ্ধ, খরা এবং সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের ইউরোপে আসার সংগ্রাম ফুটে উঠেছে৷ ছবিটি তোলার রাতের কথা জানাতে গিয়ে রিচার্ডসন বলেন, ‘‘সে রাতে আমরা পুলিশের সঙ্গে কার্যত ‘ইদুর-বিড়াল' খেলছিলাম৷ ভোর তিনটার দিকে চাঁদের আলোতে ছবিটি তুলতে হয়েছিল, কেননা ‘ফ্ল্যাশ' জ্বালালে তা পুলিশের নজরে আসতো৷''
রিচার্ডসন ছবিটির শিরোনাম দিয়েছেন, ‘নতুন জীবনের আশায়'৷
আয়লান এবং আয়লানকে নিয়ে ছবি...
আয়লান কুর্দি৷ সিরিয়ার সেই শিশু, যার মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা নিথর দেহ ‘মানবাধিকার’, ‘মানবতা’-কে এখনো কটাক্ষ করে৷ এখনো তাকে স্মারণ করে সবাই৷ তার ছবি আঁকা হয়৷ অধিকার আদায়ের লড়াইয়েও ফিরে ফিরে আসে আয়লান কুর্দি৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
মা ও সন্তান
রেহান কুর্দির কোলে তাঁর ছোট ছেলে আয়লান৷ কোবানির একটি বাড়িতে এখনো আছে এই ছবি, তবে ছবির দু’জন মানুষ আর নেই৷ সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যাওয়ার পথেই ফুরিয়েছে তাদের জীবন চলার পথ৷ এ খবর সারা বিশ্বকে জানিয়েছিল অন্য একটি ছবি৷
ছবি: Getty Images/Courtesy of Kurdi family
এ ছবি এখনো কাঁদায়
একটি ছবি হঠাৎ বদলে দিলো ইউরোপে অভিবাসী হতে আগ্রহীদের ভাগ্য৷ আয়লান কুর্দির এই ছবি৷ তুরস্কের উপকুলে এভাবেই পড়ে ছিল ৩ বছরের শিশুটির নিথর দেহ৷ মা-বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে আয়লানও কোবানির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল নিরাপদ জীবনের খোঁজে৷ এভাবে চিরবিদায় নিতে হয় তাকে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
আয়লান জাগিয়ে গেল
আয়লানের ওই ছবি নাড়িয়ে দেয় বিশ্ববিবেক৷ ইউরোপে আসার পথে যেখানে হাজারো মানুষ শত বাধার মুখে এক সময় হার মানতো, প্রাণ দিতো, সেখানে ধীরে ধীরে অনেকটাই খুলে গেল ইউরোপের দ্বার৷ অভিবাসন প্রত্যাশীরা অবাধে আসতে শুরু করল মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা থেকে৷
ছবি: Reuters/H. P. Bader
যেভাবে বিদায় জানালো জন্মভূমি
দুই সন্তান আর স্ত্রী-কে হারিয়ে নিরাপদ জীবনের প্রতি আগ্রহহারিয়ে ফেলেন আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি৷ তাই গ্রিস হয়ে ইউরোপের উন্নত কোনো দেশে নতুন করে জীবন শুরু করার ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরে যান সিরিয়ায়৷ তাঁর কোবানির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় স্ত্রী ও দুই সন্তানের মৃতদেহ৷ জানাযা শেষে ওই শহরেই সমাধিস্থ করা হয় তাদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
কান্না আর আহাজারি
আব্দুল্লাহ কুর্দি তাঁর পরিবারের সদস্যদের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলে কান্নার রোল উঠেছিল কোবানিতে৷ আয়লানদের জন্য কোবানি এখনো কাঁদে৷
ছবি: Reuters/R. Said
আয়লান এখন প্রতিবাদের প্রতীক...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে আয়লান এখন প্রতিবাদের প্রতীক৷ ইউরোপে যেখানেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতিবাদ, সেখানেই থাকে আয়লানের ছবি৷ অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের এই ছবিটি প্যারিসের৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরেও আয়লান
ছবির এই নারী আয়লানের আত্মীয়া, নাম ফাতিমা কুর্দি৷ সোমবার ব্রাসেলসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে ছিলেন তিনি৷ ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসন আইনের সমন্বয়ের দাবিতে আয়োজিত সেই সমাবেশেও ছিল আয়লানের ছবি৷ তবে সেই ছবি নয়, সেই ছবির আদলে হাতে আঁকা একটি ছবি দেখা যায় দেয়ালে৷ সেই ছবির পাশেই দাঁড়িয়ে ফাতিমা কুর্দি৷