1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ, সীমান্তও শান্ত

১৩ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে সীমান্তের পাঁচটি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সোমবার দিল্লিতে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কশিনারকেও তলব করা হয়৷ সীমান্ত পরিস্থিতি এখন শান্ত৷

উত্তেজনার সময় বাংলাদেশের সীমন্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি বাংলাদেশে সীমান্তে টহল বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাঝে মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়ছবি: Ahsan Zahid

পাঁচদিন আগে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। ৬ জানুয়ারির পর কুঁড়িগ্রাম ও নওগাঁ সীমান্তের ওপারেও কাঁটাতারে বেড়া তৈরির চেষ্টা করে বিএসএফ। মোট পাঁচটি পয়েন্টে কাঁতারের বেড়া নির্মাণের অভিযোগ বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে শনিবার বেড়া নির্মাণ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। 

উত্তেজনার সময় বাংলাদেশের সীমন্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি বাংলাদেশে সীমান্তে টহল বাড়িয়ে দেয়। বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষও পাহারায় অংশ নেয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তের বিনাদপুর ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম সোমবার বলেন, "এখন আর সীমান্তে উত্তেজনা নাই। শান্ত আছে। বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া তৈরি বন্ধ করেছে। বিজিবি গিয়ে বাধা দেয়ায় তারা বন্ধ করে দেয়। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা বৈঠকও করেছেন।” 

‘বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াই থাকা উচিত নয়’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘তিন দিন তারা বেড়া তৈরি করেছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বাইরে যে ফাঁকা অংশ ছিল, সেখানে তারা উঁচু বেড়া তৈরি করেছে। ওই সময়ে বিজিবির সঙ্গে এলাকার মানুষও সীমান্ত পাহারা দিয়েছি। তখন আমরা ভয়ে ছিলাম। এখন ভয় কেটে গেছে।”

সীমান্ত এলাকার কালীগঞ্জ গ্রামের তরুণ আমির আলী বলেন, "আমরা এলাকার মানুষ সবাই দিন-রাত পালা করে পাহারা দিয়েছি। আমরা ভয়ের মধ্যে ছিলাম।  এখন সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে।”

এই পরিস্থিতিতে রবিবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে রবিবার ডেকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রণয় ভার্মা বলেন,"দুই দেশের সীমান্তে থাকা প্রতিকূলতাগুলো কার্যকরভাবেই সমাধান হবে।” সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে একটি সমঝোতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।''

এসময় সীমান্তে চোরাচালানের সংকট নিরসনের প্রতিকূলতাগুলো নিয়েও কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার।

এর আগে শনিবারই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘কোনো বিরূপ ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় হাইকমিশনকে বিষয়টি জানানো হবে।''

তিনি বলেন, "সীমান্তে বিজিবি সতর্কাবস্থায় আছে। বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।”

তিনি জানান, "বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তে বেড়া দেয়া নিয়ে যেসব অসম সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিলের বিষয়ে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে বিজিবি ও বিএসএফ-এর মধ্যে ডিজি পর্যায়ে একটি বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন," বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ ও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মোট চারটি চুক্তি আছে। বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম সীমান্ত নির্দেশাবলি-১৯৭৫ অনুযায়ী, উভয় দেশের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যে-কোনো কাজ সম্পন্নের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের প্রয়োজনে শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যে-কোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে একে অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটার স্থানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে এবং ৮৮৫ কিলোমিটার স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়নি বলেও উপদেষ্টা জানান।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ভারত সরকারের নীতি এবং মাঠ পর্যায়ের কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে। ভারতীয় সরকার যে নীতির কথা বলে, মাঠ পর্যায়ে সেটা সব সময় প্রতিফলিত হয় না। ফলে সীমান্তে নানা সময়ে উত্তেজনা ও সংকট তৈরি হয়।”

তার কথা, "ভারতীয় হাই কমিশানরকে ডেকে বাংলাদেশের অবস্থান পরিস্কার করার দরকার ছিল। বাংলাদেশ স্পষ্ট করেছে যে, শূন্য রেখার ১৫০ গজের বাইরে তোমরা যা খুশি করো, কিন্তু এর ভিতরে কিছু করা যাবে না।”

তিনি বলেন, "সীমান্তে এই উত্তেজনা যেমন আছে, আবার দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের সঙ্গে আমরা ভালো সম্পর্কও দেখতে পাই। তারা নানা অকেশনে ফুল-মিষ্টিও বিনিময় করে। আমার কথা, উত্তেজনা কমে এসেছে এবং কমে যাবে। দুই দেশের মধ্যে অব্যাহত কূটনৈতিক যোগাযোগ থাকলে উত্তেজনা কমিয়ে আনা সম্ভব।” 

‘এখন আর সীমান্তে উত্তেজনা নাই’

This browser does not support the audio element.

‘‘তবে এই উত্তেজনা দুই রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। আগে ছিল রাষ্ট্রের মধ্যে। জনগণের মধ্যে উত্তেজনা কমানো দরকার। এটা বাড়তে থাকা দুই প্রতিবেশীর জন্যই ভালো না,” বলেন তিনি।

আর নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল আমিনুল করিম বলেন, "বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াই থাকা উচিত নয়। তারপরও তারা নির্মাণ করছে। সেটা নিয়ম মেনে শূন্য রেখার ১৫০ গজের বাইরেই করা উচিত। কিন্তু ভারত সেটা মানছে না। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় কানেক্টিভিটি গড়ে তুলতে চায়, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট চায়। সেটা করতে হলে তো উদারতা দেখাতে হবে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তো আর কানেক্টিভিটি হয় না। তারা এরই মধ্যে তিন হাজার ২০০ কিলোমিটার বেড়া দিয়েছে, বাকিটাও দিতে চায়। কিন্তু সেটা তো নিয়ম-নীতি, আইন ও চুক্তি মেনে দিতে হবে।''

‘‘আগের সরকারের সময় তারা তো তিন বিঘায় জিরো লাইনের ওপর কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। সেটা নাকি আগের সরকার অনুমতি দিয়েছে, যেটা আমাদের জন্য অপমানজনক,”বলেন তিনি।

তার কথা, "দুই পক্ষের সীমান্ত চুক্তি ও সীমান্ত আইন মেনে কাজ করা উচিত। কোনোভাবেই আর যেন উত্তেজনা না বাড়ে।”

ভারত ভারতের সেনাপ্রধানের প্রতিক্রিয়া

এদিকে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলবের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোমবার ভারতের সেনা প্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "দুই দেশের(বাংলাদেশ-ভারত) সেনাবাহিনী পর্যায়ের সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই। সম্পর্কে বিদ্বেষ কোনো পক্ষের জন্যই ভালো ফল আনবে না। আর রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে তখনই, যখন নির্বাচিত সরকার থাকবে। আমি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এমনকি গত ২৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সেও আমাদের কথা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সেনা প্রধান এর আগে বলেছেন, কৌশলগত কারণে ভারত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দিকেও বিষয়টা একই। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ