শিল্পী নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন দর্শকদেরও৷ এমনটাই দেখা গেল ইসরায়েলের এক টেলিভিশন রিয়েলিটি শো ‘ইসরায়েল গট ট্যালেন্টে'-এ৷ হুইলচেয়ারে নেচে মাত করলেন জাহাভা ও ওরেন৷ সেই নাচের ভিডিও এখন ভাইরাল৷
বিজ্ঞাপন
৬৩ বছর বয়সি জাহাভা নাচের টেলিভিশন রিয়েলিটি শো-তে নেচেছিলেন ৩৯ বছর বয়সি ওরেন-এর সঙ্গে৷ তাঁদের নাচে বাড়তি অনুষঙ্গ ছিল এক জোড়া হুইলচেয়ার৷ ওরেন একজন পেশাদার নৃত্যশিল্পী, কিন্তু জাহাভা হুইলচেয়ারে আটকে পড়া একজন মানুষ৷ ছোটবেলায় পোলিওর কারণে দু পায়ে চলার শক্তি হারান তিনি৷ তবে জাহাভার স্বপ্ন মরে যায়নি৷
টেলিভিশনে দেখানো সেই শো-র টিআরপি বাড়ানোর পাশাপাশি জাহাভা এখন তারকা৷ আর সেদিনের নাচ তো বলাই বাহুল্য৷ সেদিন নাচ দেখে বিচারকরা শুধু কাঁদছিলেন আর চোখের পানি মুছছিলেন৷
জাহাভা জানান, পোলিও আক্রান্ত না হলে তিনি নৃত্যশিল্পীই হতেন৷ অন্যদিকে ওরেন প্রতিবন্ধী পিতা-মাতার সক্ষম ছেলে৷ তাই হুইল চেয়ারে আটকে পড়া মানুষদের বেদনাবোধ সবসময় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াতো৷ সেই ভাবনা থেকেই অনবদ্য এক নাচের দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন সেদিনের মঞ্চে৷
মঞ্চে ওঠার আগেই জাহাভা বিচারকদের বলেন, তিনি একটি হুইলচেয়ার ব্যবহার করবেন এই নাচে, তবে সেটিতে তিনি আটকে থাকবেন না৷ অন্যদিকে ওরেন বলেন, এই মঞ্চে হুইলচেয়ার আমার জন্য শুধুই একটি নাচের অনুষঙ্গ৷ এরপরের চার মিনিট শুধুই মুগ্ধতা ও কান্নার৷
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হয়ে গেল অন্যরকম এক প্যারেড বা শোভাযাত্রা৷ প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথম এ শোভাযাত্রার নামই ছিল, ‘প্রতিবন্ধীদের গর্বের প্যারেড’৷ দেখুন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের অংশ নেয়া সেই শোভাযাত্রার কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
কেউ হুইল চেয়ারে, কেউবা ওয়াকারে...
তাঁরা হাঁটতে পারেন না৷ তাই ম্যানহাটানের রাস্তায় প্রায় সবাই এসেছিলে হুইল চেয়ার বা ওয়াকারে৷ চাকা লাগানো চেয়ারে চড়ে এবং হাঁটার জন্য তৈরি যন্ত্রের সহায়তায় হাসিমুখেই প্যারেডে অংশ নিয়েছেন সবাই৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
‘আমি শক্তিশালী’
জেরার্ড মিলস নামের এই ভদ্রলোক সবার নজর কেড়েছিলেন সঙ্গের এই প্ল্যাকার্ডের কারণে৷ হুইল চেয়ারে বসে থাকলে কী হবে, প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে নিজেকে কিন্তু শক্তিশালী হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন মিলস, দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/S. Wenig
প্রধানত খুশি
১৪ বছর বয়সি এই মেয়েটি ‘ডাউন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত৷ ওর নাম রক্সানে ফার্নান্দেজ৷ নিজেকে মোটেই প্রতিবন্ধী মনে করেনা সে৷ মায়ের দেয়া মুকুটটি মাথায় পরে এসে সে জানিয়েছে, ‘‘আমি প্রধানত খুশি৷’’ জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকেই৷ তারপরও খুশির সময় উপভোগ করতে হয়৷ খুশি থাকতে হয়৷ রক্সানের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ‘ডাউন সিনড্রোম’ তার খুশি একটুও কাড়তে পারেনি৷
ছবি: Getty Images/S. Keith
একজন ডোনাল্ড লি
দুর্ঘটনায় দুটি পা-ই হারিয়েছেন ডোনাল্ড লি৷ তাই বলে থেমে থাকেননি৷ নকল পা লাগিয়ে দিব্যি চলাফেরা করেন৷ প্যারেডেও অংশ নিয়েছেন পূর্ণ উদ্যম নিয়ে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
গর্বের জুলাই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধীদের জন্য জুলাই খুব উল্লেখযোগ্য মাস৷ ১৯৯০ সালে এ মাসেই প্রবর্তিত হয়েছিল প্রতিবন্ধী অধিকার আইন৷ সেই আইন প্রবর্তনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্ল্যাসন জুলাই মাসের চমৎকার একটি নাম দিয়েছেন- ‘প্রতিবন্ধীদের গর্বের মাস’৷ ছবিতে যাঁদের পা দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ ছড়ি হাতে তাঁরাও এসেছিলেন গর্বের মাসের বিশেষ প্যারেডে অংশ নিতে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
নিউইয়র্ক এখনো যেখানে পিছিয়ে
যাঁদের হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করতে হয়, নিউইয়র্ক এখনো তাঁদের জন্য আদর্শ নগরী হয়ে ওঠেনি৷ বিশেষ করে দূরে কোথাও যেতে চাইলে এখনো মুশকিলে পড়তে হয় তাঁদের৷ নিউইয়র্কের মাত্র চার শতাংশ ‘ক্যাব’ হুইল চেয়ারসহ যাত্রী পরিবহণে সক্ষম৷ এক্ষেত্রে লন্ডন অনেক এগিয়ে৷ সেখানে সব ট্যাক্সিতেই সেই ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
‘অ্যামেরিকার ছোট মানুষ’
এই দুজনকে শিশুর মতো দেখালেও আসলে তাঁরা পুরোপুরি মহিলা৷ শরীরের বৃদ্ধি স্বাভাবিক না হলেও সব কাজেই তাঁরা স্বাভাবিক৷ এই দুই নারী সেদিন প্যারেডে নিজেদের তুলে ধরেছিলেন, ‘‘অ্যামেরিকার ছোট মানুষ’’ হিসেবে৷