বাংলাদেশ: স্বস্তি কোথায় মানুষের?
১৯ জানুয়ারি ২০১৫রোববার রাতে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ ১৫ দিন পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হলো৷ ফলে সোমবার থেকে কার্যালয়ের সামনে কোনো পুলিশের ভ্যান বা জলকামান নেই৷ বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া এখন মুক্ত৷ দৈনিক প্রথম আলো-র শিরোনাম তাই, ‘খালেদা জিয়া অবরোধমুক্ত'৷
সরকার একটু নমনীয় হওয়ায় কি বিএনপি-র নেতৃত্বাধীন আন্দোলন কিছুটা শিথিল হবে? মানুষ আবার নিরাপদে পথ চলতে পারবে? বন্ধ হবে জ্বালাও-পোড়াও? থামবে নিরীহ মানুষের আর্তনাদ আর মৃত্যুর মিছিল? দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে বিরোধ এবং পারস্পরিক আস্থাহীনতা বিন্দুমাত্র কমেনি৷ তাই আশার আলোও দেখছেন না অনেকে৷ বরং অনেক ব্লগারের মনেও জমাট বেঁধেছে সংশয়, সন্দেহের কালো মেঘ৷ সামহয়্যারইন ব্লগে কয়েছ আহমদ বকুলের একটি লেখার শিরোনাম তাই, ‘‘আওয়ামী লীগের ফাঁদে বি এন পির পা অতঃপর...৷''
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিগত মাস ছয়েক ধরে সরকার ও আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য পর্যালোচনা করলে স্পষ্টতই অনুভব করা যায় সরকার চাইছিলো বিএনপি একটা ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের দিকে যাক৷ বিএনপি সে আন্দোলনের দিকে যায়নি বা যেতে পারেনি৷ অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও সরকার যখন সেটা করাতে পারছিলনা অবশেষে তারা বিএনপির ৫ই জানুয়ারির কার্যক্রমকে টার্গেট করে এবং এ যাত্রায় সরকার সফল৷ বিএনপি আবার তাদের পুরোনো রূপে আভির্ভূত৷''
তাঁর প্রশ্ন, ‘বিএনপিকে রাস্তায় নামিয়ে সরকারের লাভ কি?'' জবাবও তিনিই দিয়েছেন, ‘‘অনেক লাভ৷ ৫ই জানুয়ারি ২০১৪তে কী লাভ হয়েছিল আওয়ামীলীগের? একটি প্রশ্নবিদ্ধ ও সর্বজন বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছিল তারা৷ বিএনপিকে রাস্তায় নামিয়েই এই লাভ আওয়ামীলীগের, এই লাভ সরকারের৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পূর্ব আন্দোলনে ট্রেন বাস গাড়ি পুড়িয়ে যে মানুষকে মেরেছিল বিএনপি সে মানুষগুলো নিতান্তই সাধারণ মানুষ ছিল৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কারচুপির নির্বাচন ভন্ডামির নির্বাচন গণতন্ত্র হত্যার নির্বাচন জেনেও সাধারণ মানুষ নীরবে সে নির্বাচন মেনে নিয়েছিল, কারণ, মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন, একটাই হৃদয়বিদারক চিৎকার হাহাকার হয়ে বেরিয়ে এসেছিল – বিএনপি কেন সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে? বিএনপি কি ধরেই নিয়েছে এ দেশে কেবল আওয়ামীলীগের লোকজনই ট্রেন বাস গাড়িতে চড়ছে? বিএনপি যদি সাধারণ মানুষকে প্রতিপক্ষ করে পুড়িয়ে মারলো তবে একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে কেন মানুষ সরকারের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, কার জন্য দাঁড়াবে? ঠিক সেই ৫ই জানুয়ারির পূর্বাবস্থায় আবার বিএনপি৷ আবার মানুষ পুড়ানোর নারকিয়তায় তারা মেতেছে৷ ঐ নপুংশকদেরকে কে বুঝাবে সাধারণ মানুষদেরকে এভাবে তারা পুড়িয়ে মেরে দিনদিন আরো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আর বর্তমান সরকার সেটাই চাইছে৷''
আমার ব্লগে মনিরুল হক এমরান রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতো বিএনপি বা আওয়ামীলীগের করণীয় সম্পর্কে লিখেননি৷ তিনি লিখেছেন কবিতা৷ কবিতার নাম, ‘কাঁদো মানুষ কাঁদো'৷
কবিতাটি এমন,
‘‘কাঁদো মানুষ কাঁদো, পোড়া মাটির সামনে কাঁদো
কাঁদো মানুষ কাঁদো, পোড়া লাশের সামনে কাঁদো৷
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে যে প্রত্ন পেয়েছি সেও ইতিহাস
পুত্রের কফিন পিতার কাঁধেই পুড়ে যাওয়া লাশ৷
কাঁদে মানুষ কাঁদে, দুর্ভাগা দেশে আগুন শুধু হাসে৷''