কাগজ নিয়ে সৃজনশীল কাজ নতুন নয়৷ কিন্তু স্পেনের এক সংস্থা শুধু কাগজ নিয়ে বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রকল্পে কাজ করে চলেছে৷ শিল্পীদের নান্দনিক প্রতিভা দামী ব্র্যান্ডগুলিরও নজর কেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নিপুণ হাতে তৈরি কাগজ অথবা কার্ডবোর্ডের নানা ফিগার ও ফিলিগ্রি অরিগামি৷ ওয়ান্ডা বার্সেলোনা আর্ট স্টুডিও এই কাজে পারদর্শী৷ ভাঁজ বা পেস্ট করা গর্তে-ভরা ইনস্টলেশন দোকানের শো-কেস, ঘর এবং পুরো হলঘরকে কাগজের স্বপ্নরাজ্যে পরিণত করে৷ বার্সেলোনা শহরেরই ৩ শিল্পী মিলে ‘ওয়ান্ডা বার্সেলোনা' স্টুডিওয় কাগজ দিয়ে এই সৃষ্টির কাজ করেন৷ কাগজ তাঁদের বড়ই প্রিয়৷ তাঁদেরই একজন ডানিয়েল মানচিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘উপকরণ হিসেবে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব৷ সহজেই ভাঁজ করা, আঠা লাগানো যায়৷ বেশ হালকা৷'' ওয়ান্ডা বার্সোলোনার ইন্টি বেলেস বলেন, ‘‘কাগজের মতো সাধারণ বস্তুকে অসাধারণ করে তুলতে ভালোবাসি বলে আমরা প্রতিদিন, সব জায়গায় অসাধারণ কিছু কুঁজে পাই৷''
ওয়ান্ডা বার্সেলোনার তিন সদস্য হলেন স্পেনের ইরিস খোবাল এবং কলম্বিয়ার ডানিয়েল মানচিনি ও ইন্টি বেলেস৷ ২০০৭ সালে তাঁরা এই ডিজাইন স্টুডিও শুরু করেন৷ কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁরা হুগো বস-এর মতো ব্র্যান্ডের জন্য কাগজের তৈরি স্বপ্নের জগত সৃষ্টি করতে শুরু করেন৷ যেমন নিউ ইয়র্কের গুগেনহাইম মিউজিয়ামে৷
প্লাস্টিকের ব্যাগ কি শুধুই ব্যাগ?
বাজার করার জন্য একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগ হামেশাই দেখা যায় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ‘ওয়ান-টাইম’ প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গায় সুতি, চট বা কাগজের ব্যাগও হতে পারে৷ ছবিঘরে কিছু ব্যাগের নমুনা দেখুন!
ছবি: DUH
সব সময় শুধু প্লাস্টিক নয়
সুপারমার্কেটগুলিতে ফল বা সবজি কেনার সময়, এই যেমন ধরুন কলা, আপেল বা গাজর কেনার সময়, হাতের কাছেই রাখা থাকে প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ সেই ব্যাগে পছন্দের ফল বা সবজিগুলি ভরে ওজন করে নিয়ে যেতে হয় কাউন্টারে৷ এভাবেই মাথা পিছু বছরে প্রায় ৭১টি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেন জার্মানরা৷
ছবি: Fotolia/pizzicati
দূরে থাকুন
সাধারণ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলির শতকরা ১০০ ভাগই কৃত্রিম পলিথিনের, যা জীবাশ্মের অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরি৷ এই ব্যাগগুলো মোটেই পরিবেশবান্ধব নয় এবং এগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লাগে৷ এ কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ বিষয়ক কমিশন প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়৷
ছবি: picture alliance/ZB
‘অর্গানিক’ যে সব সময় ভালো, তা নয়
জৈবিক উপায়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়, এমন প্লাস্টিক ব্যাগও পাওয়া যায় আজকাল৷ তবে সেই সব প্লাস্টিকের ব্যাগ সাধারণত শতকরা ৭০ ভাগ অপরিশোধিত তেল এবং ৩০ ভাগ নবায়ণযোগ্য কাঁচামাল থেকে তৈরি৷ শুনতে ভালো লাগলেও, এ ধরণের প্লাস্টিকের ব্যাগ ‘রিসাইক্লিং’ করার ক্ষেত্রেও কিন্তু সীমাবদ্ধতা আছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
রিসাইক্লিং-এর ভাগ বেশি থাকাও যথেষ্ট নয়
একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যাগে রয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ রিসাইক্লিং পলিথিন৷ এগুলি সাধারণ প্লাস্টিক ব্যাগের তুলনায় কিছুটা যে পরিবেশবান্ধব – তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে বেশিরভাগ প্লাস্টিক ব্যাগই আবর্জনায় ফেলে দেওয়া হয়, তাই উপায় থাকলেও রিসাইক্লিং করা হয় না বা যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি
অন্যদিকে কাগজের ব্যাগ যে সব সময়ই পরিবেশবান্ধব, অর্থাৎ কৃত্রিম ব্যাগের তুলনায় ভালো – তাও কিন্তু নয়৷ কারণ, এ সব ব্যাগ তৈরিতে অনেক বেশি সময় এবং ব্লিচিং করার জন্য শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তীতে আবারো রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়৷ এতে কিছুটা হলেও দূষণ ঘটে৷
ছবি: PA/dpa
কাপড়ের ব্যাগের অন্য দিক
কাপড়ের ব্যাগ যদি সুতির হয়, তাহলে সেগুলি বেশ মজবুত হয় এবং পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু এ ধরণের ব্যাগ তৈরির জন্য একদিকে যেমন বেশি মাত্রায় কাঁচামাল প্রয়োজন হয়, তেমনই প্রয়োজন হয় বেশি পরিমাণে জ্বালানি৷ বলা বাহুল্য, এর একটা প্রভাবও পড়ে পরিবেশের ওপর৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
আছে মজবুত প্লাস্টিকের ব্যাগও
কাপড়ের ব্যাগের তুলনায় কৃত্রিম বা পলিয়েস্টারের ব্যাগ কিন্তু কম মজবুত নয়৷ ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ বা ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ – এমন ব্যাগ ছাড়াও বাজারে কয়েকবার ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম প্লাস্টিকের ব্যাগও পাওয়া যায়৷ এই যেমন ছবির ব্যাগটি৷ তবে এগুলো কতটা পরিবেশবান্ধব – সেটা বলা কঠিন৷
ছবি: DUH
বিজয়ী হচ্ছে...
তাই সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হচ্ছে পলিয়েস্টারের তৈরি এই হাল্কা ব্যাগগুলি৷ এগুলির ওজন মাত্র ৩০ গ্রাম এবং ভাঁজ করলে এগুলো একেবারে হাতের মুঠোয় রাখা সম্ভব৷ এই ব্যাগ দেখতে ছোট এবং ওজনে কম হলেও প্রায় ১০ কেজি ওজনের জিনিস বহন করতে পারে৷
ছবি: DUH
8 ছবি1 | 8
তাঁরা ক্রিস্টিয়াঁ ডিয়র, অ্যার্মেস, কারোলিনা এরেরা এবং সারা-র জন্যও কাজ করেছেন৷ ইন্টি বেলেস বলেন, ‘‘এই উপকরণ আমরা যত ভালো করে চিনেছি, যত বেশি এ নিয়ে কাজ করেছি, তত বেশি আবিষ্কার করেছি – যেমন এর ক্ষমতা, এর রূপান্তরের কায়দা ইত্যাদি৷ আমরা দেখলাম, এর সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই কোনো প্রকল্প সম্পর্কে প্রথমে তিন ভাবে ভাবতে হয়৷ স্পেস বা জায়গা, বস্তু এবং অনুভূতি কী হবে, তা বুঝতে হয়৷''
ক্যাটালোনিয়া রাজ্যের রাজধানী বার্সোলোনার কেন্দ্রস্থলেই ওয়ান্ডা বার্সেলোনার স্টুডিও৷ প্রথমে তাঁরা শুধু স্পেনের মধ্যেই কাজ করেছেন৷ এখন তাঁদের অনেক আন্তর্জাতিক গ্রাহক হয়েছে, যাদের মধ্যে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের অভাব নেই৷ ইন্টি বেলেস বলেন, ‘‘লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলি আমাদের কাছে আসে, কারণ আমরাই একমাত্র এই কাজ করি৷ আমাদের সৃষ্টির পেছনে যে কারিগরি জ্ঞান ও শৈল্পিক বোধ রয়েছে, তা অনন্য৷ তারা এর মূল্য বোঝে৷ আমরা শুধু একটা টুকরো কাগজ ব্যবহার করি না, আমরা আমাদের সময় লগ্নি করে হাতে করে সেটিকে একেবারে আলাদা কিছুতে রূপান্তরিত করি৷ সাধারণকে অসাধারণ করে তুলি৷ এই সময়, এই শৈল্পিক কাজ ওয়ান্ডাকে অনবদ্য করে তুলেছে৷''
এক সাম্প্রতিক প্রকল্পের জন্য ওয়ান্ডা বার্সেলোনার সদস্যরা জার্মানিতে এসেছিলেন৷ বন শহরে কার্ল লাগারফেল্ড ব্র্যান্ডের জন্য একটি ঘর সৃষ্টি ও ডিজাইনের দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয়েছিল৷ জার্মান ডিজাইনারের সৃষ্টির উপর ঝুলছে দোমড়ানো-মোচড়ানো কিছু স্কেচ৷ এই কাজ শেষ করতে ২০ দিন লেগেছে৷ ডানিয়েল মানচিনি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের পর আমরা সংবাদ মাধ্যম আমাদের বেশ গুরুত্ব দিয়েছে৷ ওয়েবসাইটের তুলনায় সোশাল মিডিয়ায় বেশি সাড়া পেয়েছি৷ এত পরিচিতির ফলে বুঝতে পারছি, যে এই প্রকল্পই সবচেয়ে বড় ছিল৷''
বিখ্যাতরা ছোটবেলায় যেমন আঁকতেন
আজ তাঁরা বিখ্যাত৷ কিন্তু ছোটবেলায় কেমন আঁকতেন তাঁরা? তাঁদের সেসময়কার কাজেকর্মে কি বোঝা গিয়েছিল যে, তাঁদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল৷ ছবিঘরে এই বিষয়টাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
ইয়োনাথান মেসে
ছয় বছর বয়সে এই ছবিটি এঁকেছিলেন জার্মান শিল্পী ইয়োনাথান মেসে৷ এখন তাঁর বয়স ৪৪৷ শিশু অবস্থায় যিনি ললিপপ আর লণ্ঠনের ছবি এঁকেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেন৷ মেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর শিল্পকর্মে নাৎসি প্রতীকের উপস্থিতি ছিল৷ এজন্য তাঁকে আদালতেরও মুখোমুখি হতে হয়৷ অবশ্য পরে সেটা খারিজ হয়ে যায়৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
কাটিয়া স্ট্রুনৎস
জার্মানির কাটিয়া স্ট্রুনৎস ১২ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে জঙ্গলের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ একপাশে হাতির পিঠে টারজান আর অন্যপাশে বাঘকে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে গাছগুলোতে তিনি বেশ রংয়ের ব্যবহার করেছেন৷ অবশ্য স্ট্রুনৎসের এখনকার তৈরি ভাস্কর্যগুলোতে রংয়ের ব্যবহার কমে এসেছে৷
ছবি: Courtesy Katja Strunz
টাল আর
যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়ার কারণেই হয়ত শিল্পী টাল আর-এর ছোটবেলায় আঁকা এই ছবিতে সশস্ত্র মানুষ, ট্যাংক আর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির একটি আর্ট অ্যাকাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Courtesy: TAL R / Copyright Paradis
আক্সেল গাইস
বর্তমানে জার্মানির অন্যতম নামকরা শিল্পী আক্সেল গাইস৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে আঁকা তাঁর এই ছবিটি ভালো করে দেখুন৷ কুকুরের চুল কাটছেন একজন নাপিত৷ আর ওদিকে আয়নায় কুকুরের মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ মনে আছেতো, ছবিটা কিন্তু এঁকেছেন ছয় বছরের একটা ছেলে!
ছবি: Courtesy Axel Geis
উভে হেনেকেন
ছবিটি যখন এঁকেছিলেন তখন উভে হেনেকেনের বয়স আট৷ তিনি হতে চেয়েছিলেন নৃতত্ববিদ৷ কিন্তু খেয়াল করে দেখুন ছবির এই মেয়েটির দুই কান থেকে গাছ বের হচ্ছে, অর্থাৎ তিনি যে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন এটা তার প্রমাণ৷ হেনেকেনের এখনকার ছবিগুলোতেও সেই ফ্যান্টাসি জগৎ আর রূপকথারই পরিচয় পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Uwe Henneken and Galerie Giselal Capitain, Cologne
নোর্বার্ট বিস্কি
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সাত লবছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে বিস্কি ‘ফ্রেস্কো’ (ভেজা প্লাস্টারে জল রংয়ের ব্যবহার) আঁকেন, যেগুলোতে কিশোরদের জীবনের গল্প ফুটে ওঠে৷
ছবি: VG Bild-Kunst, Bonn, Courtesy Norbert Bisky
ফিয়া লেভান্ডোভস্কি
গ্রিম ভাইদের জনপ্রিয় রূপকথাগুলোর অন্যতম ‘লিটল রেড রাইডিং হুড’৷ মাত্র চার বছর বয়সে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ফিয়া লেভান্ডোভস্কি৷ বর্তমানে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Via Lewandowsky, Copyright VG Bild-Kunst, Bonn 2014
7 ছবি1 | 7
এত ব্যস্ততার মধ্যে কিছু সময় পেলে ওয়ান্ডা বার্সেলোনা প্রডাক্ট ডিজাইনে হাত পাকাতে চায়৷ শোবার ঘরেও কাগজের স্বপ্নময় জগত সৃষ্টি করতে চায় তারা৷