কাগজের সঙ্গে শিল্পকলার সম্পর্ক অনেক৷ কাগজের ওপর ছবি আঁকা যায়, কাগজের ওপর বই ছাপা হয়৷ স্পেনের আলিকান্টের শিল্পী মালেনা বালকার্সেল পুরনো বই-এর পাতা কেটে তৈরি করেন এক রূপকথার রাজত্ব৷
বিজ্ঞাপন
শল্যচিকিৎসকরা যেমন অস্ত্রোপচার করেন, মালেনা বালকার্সেল তেমন কাগজ কেটে এক স্বপ্নের জগৎ সৃষ্টি করেন৷ মালেনা বলেন, ‘‘কাগজের মজা হলো এই যে, কাগজ কাটা যায় আর....কাগজ কেটে চমৎকার সব মূর্তি সৃষ্টি করা যায়৷''
মূর্তি বলতে গোটা ল্যান্ডস্কেপ, বা বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত কিংবা দৃশ্য৷ স্পেনের শিল্পী মালেনা সপ্তাহের পর সপ্তাহ পরিশ্রম করে এই কাগজের দুনিয়া সৃষ্টি করেন৷ মালেনা শোনালেন কিভাবে ‘‘রিসাইক্লিং আর ডু-ইট-ইয়োরসেলফ-এর যখন ধুম উঠল, তখন আমার কাছে প্রধানত পুরনো বই ছিল৷ আমি পড়তে ভালোবাসি, কিন্তু আমার এমন কিছু বই ছিল, যা আমি আর তখন পড়ি না৷''
কিন্তু শুধু নিজের পুরনো বই কেটে আর মালেনার কাজ চলছে না৷ কাজেই মালেনা তাঁর কুকুর অ্যাটিলাকে নিয়ে নিয়মিত বেরোন পুরনো বইয়ের খোঁজে৷ যান আলিকান্টে শহরের পুরনো বই-এর দোকান, এমনকি অন্যান্য পড়ুয়াদের কাছে৷ পুরনো বই যোগাড় করে নিয়ে আসেন তাঁর ফ্ল্যাটে: সেখানে তারা শিল্পকর্ম হিসেবে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে৷
পুরনো বইয়ের পাতা কেটে শিল্প
04:23
মালেনার তাঁর কাগজের ভাস্কর্যের জন্য আইডিয়ার কোনোদিনই অভাব ঘটেনি: ‘‘গ্রিসের প্রাচীন কিংবদন্তি অথবা ইতিহাসের সব ব্যক্তিত্ব কিংবা ছোটদের রূপকথা, যেমন আঁতোয়া দ্য সাঁজুপেরির ‘ছোট্ট রাজপুত্র', যেটা আমি এখন তৈরি করছি৷ অথবা রেড রাইডিং হুড, তাও আমি বার দু'য়েক করেছি৷ কিংবা অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড৷ রূপকথা বা ইতিহাস থেকে যা না নিই, তার সবটাই আমার নিজের কল্পনা৷''
আলিকান্টে হলো মালেনা বালকার্সেল-এর প্রেরণার উৎস৷ শহরটির তিন হাজার বছরের ইতিহাসের অনেক চিহ্ন বর্তমান, ঐশ্বর্য ও ধ্বংস, সেই সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের উপকূল৷ একজন শিল্পীর পক্ষে সাগর বা নদীর কাছাকাছি থাকাটা জরুরি৷ বাড়িতে নিজের স্টুডিওতে বসে মালেনা প্রেরণাকে শিল্পকর্মে পরিণত করেন – প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে নজর রেখে৷ খরিদ্দারদের সেটা ভালো লাগে৷
মালেনা বালকার্সেল-এর কাগজের শিল্পকলার নাম ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি৷ ইতিপূর্বে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ভাষাশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন৷ মাত্র তিন বছর আগে তিনি কাগজ কেটে শিল্পসৃষ্টি শুরু করেন৷ মালেনা বালকার্সেল তাঁর প্রতিভাকে মজা ও ব্যবসাবুদ্ধির সঙ্গে মিশিয়ে আশ্চর্য সাফল্য পেয়েছেন৷
কাগজের নৌকায় আনন্দভ্রমণ
ছোটবেলায় কাগজ দিয়ে নৌকা তো অনেকেই বানিয়েছেন৷ বড় হয়ে বানিয়েছেন? না, না, ছোট নয়৷ রীতিমতো যাত্রিবাহী নৌকা বানিয়েছেন কখনো? জার্মানির কয়েকজন শিক্ষার্থী কাগজের নৌকা বানিয়ে আনন্দভ্রমণও সেরে ফেলেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
ওরা ১০ জন
জার্মানির এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী যা করে দেখালো, তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো৷ গত বছর থেকে ব্রেমারহাফেনের মেরিটাইম মিউজিয়ামে কাগজ আর কার্ডবোর্ড নিয়ে নৌকা বানানো শুরু করেছিল তারা৷ সঙ্গে অবশ্য নৌকা তৈরিতে পারদর্শী আক্সেল ডোরমানও ছিলেন৷ তাঁর তত্ত্বাবধানে ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশির ভাগ কাজ করেছে৷ কষ্ট হয়েছে, সময়ও লেগেছে অনেক৷ তৈরি শেষ হলে ক্রেনে উঠিয়ে নৌকাটি নিয়ে আসা হয় নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
‘নঙর ছাড়িয়া নায়ের দে রে দে মাঝি...’
নৌকা বানিয়ে রেখে দিলে তো হবে না৷ ওরা কাগজ আর কার্ডবোর্ড দিয়ে নৌকাটা বানিয়েছে তো ভ্রমণের আনন্দ উপভোগের জন্য৷ অবশেষে এলো সেই দিন৷ আক্সেল ডোরমান এবং মেরিটাইম মিউজিয়ামের কর্মকর্তা গেরো ক্লেমকে-কে সঙ্গে নিয়ে পাক্কা মাঝিদের মতো নৌকা ভাসালো দশজন কিশোর-কিশোরী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
তিন বছরের পরিকল্পনা
কাগজের নৌকা আগেও বানানো হয়েছে৷ তবে সেগুলো ছিল ছোট এবং স্বল্পস্থায়ী৷ সপ্তাহখানেক পানিতে রাখার পর আপনা-আপনিই নৌকার নানা অংশ ভিজে খসে খসে পড়তো৷ এবারের নৌকা সেগুলোর চেয়ে বড়৷ শুধু তাই নয়, ৩ দশমিক ২০ মিটার দীর্ঘ এই নৌকা টিকবেও বেশি দিন৷ গেরো ক্লেমকে আশা করছেন, তিন বছর অন্তত টিকবে এটি এবং মাঝে মাঝে এটা পানিতে ভেসেও বেড়াবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
যেভাতে তৈরি হলো....
প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা নৌকাটি তৈরি করাটা ছিল বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মতো৷ আক্সেল ডোরমান এবং গেরো ক্লেমকে-র নেতৃত্ব এবং প্রেরণায় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলও হয়েছে গোর্চ-ফোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
৯ হাজার কাগজ আর ৮০টি বোর্ড
নৌকার কাঠামোর একটি অংশ অবশ্য কাঠ দিয়ে তৈরি৷ কাঠ একেবারেই ব্যবহার না করলে তো নৌকাটি মানুষের ওজনই নিতে পারতো না৷ যা হোক, ওই কয়েক টুকরো কাঠের বাইরে আর কী লেগেছে জানেন? খবরের কাগজের ৯ হাজারটি পৃষ্ঠা এবং ৮০ টুকরা ধূসর রঙের কার্ডবোর্ড৷ ছবিতে ক্লেমকে-র সঙ্গে কাগজে কাগজ জোড়া দিচ্ছে লিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
কর্মযজ্ঞ
নৌকা তৈরির মূল কাজটা হয়েছে মেরিটাইম মিউজিয়ামের এই কক্ষে৷ এখানেই ৯ হাজার কাগজে আঠা লাগিয়ে লাগিয়ে দাঁর করানো হয় মূল কাঠামো৷ কাগজের ৩৪টি স্তর আঠা দিয়ে লাগিয়ে তৈরি করা হয় নৌকাটি৷ তৈরি শেষে নির্ধারিত দিনে ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রেমারহাফেন শহরের নদীতে৷ আর তারপর? সেই আনন্দভ্রমণ!