অরিগামিসহ কাগজ দিয়ে শিল্পের নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ রুশ বংশোদ্ভূত এক শিল্পী কাগজ ব্যবহার করে অভিনব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে চলেছেন৷ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনেও তাঁর সৃষ্টি কাজে লাগানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রথম দর্শনে এই শিল্পকর্মের মর্ম বোঝা যায় না৷ কয়েকশ' কাগজের টুকরো জুড়ে গোটা চিত্রটি সৃষ্টি করা হয়েছে৷ রং ও আকারের সমাহার লক্ষ্য করলে পোর্ট্রেটের গভীরতা টের পাওয়া যায়৷ প্রায় ১০ বছর ধরে কাগজ-শিল্পী ইয়ুলিয়া ব্রডস্কায়া এমন ত্রিমাত্রিক ছবি সৃষ্টি করে চলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কাগজ সত্যি অসাধারণ মাধ্যম৷ অত্যন্ত নমনীয়, নানাবিধ প্রয়োগ সম্ভব৷ অনেক কিছু করা যায়৷ ভাঁজ করা অথবা কাটা যায়৷ ব্যবহার করতে দারুণ লাগে৷''
কাগজই যখন শিল্পমাধ্যম
03:37
নিজের সই নিয়ে পরীক্ষার সময় ইয়ুলিয়ার মাথায় কাগজ দিয়ে ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম সৃষ্টির আইডিয়া আসে৷ গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে তিনি সেই কাজে হাত দেন৷ তারপর মোটিফগুলি আরো জটিল হতে থাকে৷
লন্ডনের উত্তরে সেন্ট অ্যালবান্স শহরে নিজের স্টুডিওতে রুশ বংশোদ্ভূত এই শিল্পী কাজ করেন৷ তিনি তথাকথিত ‘কুয়িলিং' প্রযুক্তি ব্যবহার করেন৷ ভিত্তি হিসেবে ভাঁজ করা, পাকানো অথবা বাঁকানো কাগজ থাকে৷ তারপর সেগুলি আঠা দিয়ে লাগানো হয়৷ খুঁটিনাটি বিষয়গুলি খেয়াল রেখে তিলে তিলে কাজ করতে হয়৷ ইয়ুলিয়া বলেন, ‘‘এই কৌশল অথবা কাগজ নিয়ে কাজ করার মূল চ্যালেঞ্জ হলো সময়৷ অনেক সময় লাগে, বেশ পরিশ্রম করতে হয়৷ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতেই কয়েক দিন বা সপ্তাহ সময় লাগে৷ কারণ, অনেক খুঁটিনাটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়৷ তাই অনেক ধৈর্য লাগে৷''
কাগজের নৌকায় আনন্দভ্রমণ
ছোটবেলায় কাগজ দিয়ে নৌকা তো অনেকেই বানিয়েছেন৷ বড় হয়ে বানিয়েছেন? না, না, ছোট নয়৷ রীতিমতো যাত্রিবাহী নৌকা বানিয়েছেন কখনো? জার্মানির কয়েকজন শিক্ষার্থী কাগজের নৌকা বানিয়ে আনন্দভ্রমণও সেরে ফেলেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
ওরা ১০ জন
জার্মানির এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী যা করে দেখালো, তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো৷ গত বছর থেকে ব্রেমারহাফেনের মেরিটাইম মিউজিয়ামে কাগজ আর কার্ডবোর্ড নিয়ে নৌকা বানানো শুরু করেছিল তারা৷ সঙ্গে অবশ্য নৌকা তৈরিতে পারদর্শী আক্সেল ডোরমানও ছিলেন৷ তাঁর তত্ত্বাবধানে ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশির ভাগ কাজ করেছে৷ কষ্ট হয়েছে, সময়ও লেগেছে অনেক৷ তৈরি শেষ হলে ক্রেনে উঠিয়ে নৌকাটি নিয়ে আসা হয় নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
‘নঙর ছাড়িয়া নায়ের দে রে দে মাঝি...’
নৌকা বানিয়ে রেখে দিলে তো হবে না৷ ওরা কাগজ আর কার্ডবোর্ড দিয়ে নৌকাটা বানিয়েছে তো ভ্রমণের আনন্দ উপভোগের জন্য৷ অবশেষে এলো সেই দিন৷ আক্সেল ডোরমান এবং মেরিটাইম মিউজিয়ামের কর্মকর্তা গেরো ক্লেমকে-কে সঙ্গে নিয়ে পাক্কা মাঝিদের মতো নৌকা ভাসালো দশজন কিশোর-কিশোরী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
তিন বছরের পরিকল্পনা
কাগজের নৌকা আগেও বানানো হয়েছে৷ তবে সেগুলো ছিল ছোট এবং স্বল্পস্থায়ী৷ সপ্তাহখানেক পানিতে রাখার পর আপনা-আপনিই নৌকার নানা অংশ ভিজে খসে খসে পড়তো৷ এবারের নৌকা সেগুলোর চেয়ে বড়৷ শুধু তাই নয়, ৩ দশমিক ২০ মিটার দীর্ঘ এই নৌকা টিকবেও বেশি দিন৷ গেরো ক্লেমকে আশা করছেন, তিন বছর অন্তত টিকবে এটি এবং মাঝে মাঝে এটা পানিতে ভেসেও বেড়াবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jasperse
যেভাতে তৈরি হলো....
প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা নৌকাটি তৈরি করাটা ছিল বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মতো৷ আক্সেল ডোরমান এবং গেরো ক্লেমকে-র নেতৃত্ব এবং প্রেরণায় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলও হয়েছে গোর্চ-ফোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
৯ হাজার কাগজ আর ৮০টি বোর্ড
নৌকার কাঠামোর একটি অংশ অবশ্য কাঠ দিয়ে তৈরি৷ কাঠ একেবারেই ব্যবহার না করলে তো নৌকাটি মানুষের ওজনই নিতে পারতো না৷ যা হোক, ওই কয়েক টুকরো কাঠের বাইরে আর কী লেগেছে জানেন? খবরের কাগজের ৯ হাজারটি পৃষ্ঠা এবং ৮০ টুকরা ধূসর রঙের কার্ডবোর্ড৷ ছবিতে ক্লেমকে-র সঙ্গে কাগজে কাগজ জোড়া দিচ্ছে লিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
কর্মযজ্ঞ
নৌকা তৈরির মূল কাজটা হয়েছে মেরিটাইম মিউজিয়ামের এই কক্ষে৷ এখানেই ৯ হাজার কাগজে আঠা লাগিয়ে লাগিয়ে দাঁর করানো হয় মূল কাঠামো৷ কাগজের ৩৪টি স্তর আঠা দিয়ে লাগিয়ে তৈরি করা হয় নৌকাটি৷ তৈরি শেষে নির্ধারিত দিনে ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রেমারহাফেন শহরের নদীতে৷ আর তারপর? সেই আনন্দভ্রমণ!
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
6 ছবি1 | 6
ইয়ুলিয়া ব্রডস্কায়া উদ্ভিদ জগত থেকে প্রেরণা পান৷ প্রত্যেক শিল্পকর্মের সূচনা ঘটে একটা স্কেচের মাধ্যমে৷ তারপর খুঁটিনাটি বিষয়গুলি নিয়ে কাজ শুরু হয়৷ বিশেষ ধরনের ছুরির সাহায্যে তিনি কাগজ কাটেন৷ তারপর সেই অংশগুলি দিয়ে শিল্পকর্মের উপকরণ সৃষ্টি করেন৷
নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি শিল্পকর্মগুলি তুলে ধরেন৷ বিজ্ঞাপন শিল্পও ইয়ুলিয়া-র শিল্পকর্ম সম্পর্কে সচেতন হয়ে পড়েছে৷ তিনি এক মার্কিন বিমান সংস্থার জন্য কাজ করেছেন৷ যেমন, জাপানের এক সুগন্ধী প্রস্তুতকারক সংস্থার জন্যও শিল্প সৃষ্টি করেছেন তিনি৷ এক মার্কিন গাড়ি কোম্পানিও তাঁর গ্রাহক৷ এমনকি ডাকটিকিটেও তাঁর মোটিফ স্থান পেয়েছে৷
কিছুকাল আগে লন্ডন শহরের কেন্দ্রস্থলে তাঁর একটি শিল্পকর্মের অতিকায় সংস্করণ প্রদর্শিত হয়েছে৷ এক পোশাকের দোকানের শোকেসে সেটি দেখা গেছে৷ সেটি ছিল পরবর্তী দিশায় প্রথম পদক্ষেপ৷ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইয়ুলিয়া ব্রডস্কায়া বলেন, ‘‘আরেকটু বড় আকারে আমি কাজ করতে চাই৷ কারণ, কমপ্যাক্ট বা নিবিড় শিল্পশৈলি হিসেবে আরো বড় আকারে প্রভাব রাখতে পারে৷ তাই বড় মাত্রায় সৃষ্টি করা আমার পরবর্তী লক্ষ্য৷''
অন্য কোনো মাধ্যম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান না ইয়ুলিয়া৷ তিনি তাঁর পছন্দের উপকরণ পেয়ে গেছেন৷ কাগজের মাধ্যমেই নিজের সৃজনশীল সত্তা সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেন তিনি৷