মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন৷ আচ্ছা আপনি কী একটা কথা জানেন?
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিক প্রভাষ আমিনকে উদ্ধৃত করি৷ উনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘গত ১০ মার্চ পুরান ঢাকা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল৷ ৫৪ দিন পর ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করেছে৷ তিনি কি নিজে থেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন, নাকি কেউ তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এই ৫৪ দিন তিনি কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন, কীভাবে তিনি পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ভারতে গেলেন, এই লকডাউনের মধ্যে ফিরে আসতে গেলেন কেন, বাংলাদেশের লোকজন পালিয়ে ভারতেই যায় কেন?’
আপনাকে আরেকটু মনে করিয়ে দেই, সাংবাদিক কাজল গুম হওয়ার আগে পাপিয়ার খদ্দেরদের বিষয়ে খোঁজ খবর করছিলেন বলে শুনেছি৷ ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওনার আরেকটা পরিচয় উনি পরিবেশবাদী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের হাজবেন্ড৷ গবেষক এবং শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান সিজার নিঁখোজ হন ২০১৭ তে, তিন মাস পর ফিরে আসেন৷ একই বছর সাংবাদিক উতপল এবং ব্যবসায়ী অনরিুদ্ধ কুমার নিখোঁজ হন নারায়ণগঞ্জ থেকে, তিন মাস পর ফিরে আসেন৷ এইসব নিখোঁজ বা প্রাপ্তি সংবাদ কি আপনার জানা মাননীয়?
আপনি সরকার কীভাবে চালাবেন, তা নিশ্চয় আপনারই সিদ্ধান্ত৷ আমাদের কৌতূহল এই লুকোচুরি খেলার জন্যও কি কর্তাব্যক্তিরা আপনার অনুমোদন নেন? তাদের জন্য কী ফাইল তৈরি হয়? সেই ফাইল সই হতে হতে উপরে উঠে আবার নিচে নামে? নাকি এসব বিষয় আপনাকে জানানো হয় না? আপনি পরে সাফল্য ব্যর্থতা দেখে পুরস্কার দেন শুধু? কারা ঠিক করে তবে এইসব? অনেক ক্ষমতা কি তাদের? তারা চাইলে কি যে কাউকে গুম করতে পারে? আড়ি পাততে পারে যে কোনো ফোনে? এসব কাজ করার নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা রয়েছে তাদের? কে তাদের বস?
অথবা আপনি বা আপনার সরকার বলবে, এইসব ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থা বা সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই৷ কিন্তু আপনি কী কাকতাল খেয়াল করেন, যারা সরকার বা ক্ষমতাবানদের বিব্রত করতে পারে তাদের কপালেই এমনটা ঘটে?
একটি প্রস্তাব দিয়ে শেষ করি, কী করলে হারিয়ে যেতে হয় বা কী করলে হারিয়ে গেলে আবার ফিরে আসা যায় তা আমাদের জানানো যেতে পারে৷ আমরা তো আপনার সব কিছুই মেনে নিয়েছি, এটাও না হয় মেনে নিবো৷ শুধু জানবো এটা করলে হারিয়ে যাব বা হারিয়ে ফিরবো৷
দেশে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন
বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা বেড়েই চলছে৷ এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ১০ ঘটনা নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/J. Thys
হত্যা
রাজনৈতিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রসী কর্মকাণ্ড বিষয়ে সোচ্চার মেক্সিকোর সাংবাদিক মিরোস্লাভা ব্রিচ ভেলডুসিয়া গত মার্চ মাসে খুন হয়৷ জানা যায়, এ ধরণের সামাজিক অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দেয়া হচ্ছিল তাঁকে৷
ছবি: EPA
অষ্টমবারের মতো গ্রেপ্তার!
অষ্টমবারের মতো গ্রেপ্তার হলেন ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা৷ গত শুক্রবার ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় তাঁকে৷ পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি৷ তার আগে, মানহানির অভিযোগ এনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আটক করা হয়েছিল তাঁকে৷ গত সপ্তাহে মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করে সরকার৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
একদিনেই বিচারের রায়!
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানোর অভিযোগে ভিয়েতনামের নারী সাংবাদিক ট্রান থি গা’র বিচার করা হয়৷ বিচারের রায় একদিনেই দেয়া হয়েছে এবং এতে তাঁকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ সরকারের দুর্নীতি ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ভিডিও প্রতিবেদন করেছিলেন থি গা৷
ছবি: Reuters
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নয় বছর ধরে কারাগারে বন্দি আছেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কিরগিজস্তানের সাংবাদিক আজিমজন আসকারভ৷ মানবাধিকারের বিষয়ে তাঁর করা কিছু প্রতিবেদন রুষ্ট করে দেশটির সরকারকে৷
ছবি: Sherzod Askarov
বিব্রতকর অবস্থায় ভারতীয় সাংবাদিক
ভারতীয় নারী সাংবাদিক রানা আইয়ুব দেশটির বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কাজ করেন৷ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি৷ তাঁর ছবি ফটোশপ করে পর্নোগ্রাফি বানিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ সাথে দেয়া হচ্ছে তাঁর মোবাইল নম্বরও৷
ছবি: Marie Claire South Africa
আইনি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে না
ডিসেম্বর মাসে নিকারাগুয়ার পুলিশ দেশটির ‘১০০% নেটিসিয়াস’ নামে টেলিভিশন চ্যানেলে হানা দিয়ে মিগুয়েল মুরা ও লুসিয়া পিনেডা উবেনা নামের দুই সাংবাদিককে আটক করে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়৷ মামলা চলছে তাঁদের বিরুদ্ধে, তবে যথাযথ আইনি সহযোগিতা পাননি এ দুই সাংবাদিক৷ (ছবিতে মিগুয়েল মুরাকে দেখা যাচ্ছে)
ছবি: 100% Noticias
গ্রেপ্তারের হুমকি
আটকে থাকা সহকর্মীদের মুক্তির জন্য লড়াই করে যাওয়া দক্ষিণ সুদানের জুবা মনিটর সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক আন্না নিমিরানো প্রতিনিয়তই গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে থাকেন৷ সহকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ লড়াইয়ের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে সরকার৷
ছবি: IWMF
বিচার ছাড়াই আটকে থাকা
মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত এক পরিবারের ছবি তোলার অপরাধে আটক করা হয় দেশটির সাংবাদিক আমাডে আবুবাকারকে৷ গত জানুয়ারি মাসে আটক হওয়া এ সাংবাদিককে এখনও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি৷ (ছবিতে মোজাম্বিকের গণমাধ্যমকর্মীদের দেখা যাচ্ছে)
ছবি: DW/A. Sebastiao
অপহরণের শিকার
অপহরণ, নজরদারি ও মানসিক নির্যাতনসহ সব অত্যাচারই সহ্য করতে হয়েছে কলম্বিয়ার প্রবীণ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্লাউডিয়া ডুকুকে৷ ক্লাউডিয়াকে নির্যাতনের অপরাধে সরকারের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তকাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত৷
ছবি: DW
কারাগারে নির্যাতন
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুদান সরকার দেশটির আল-তায়ার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ওসমান মারঘানিকে আটক করে৷ আটক অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে বলে জানা যায়৷ কেন তাঁকে আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলেননি কর্তৃপক্ষ৷ আটক হওয়ার আগে, দেশটির সরকারবিরোধী আন্দোলন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shalzy
বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ডয়চে ভেলে
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে সোচ্চার ডয়চে ভেলে৷ এরই অংশ হিসেবে ‘ওয়ান ফ্রি প্রেস কোয়ালিশন’ নামে গণমাধ্যম উন্নয়ন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে ডয়চে ভেলে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে প্রতিমাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়ান ফ্রি প্রেস কোয়ালিশন৷ সাংবাদিক নির্যাতনের ১০টি ঘটনা নিয়ে এপ্রিলের এ সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে তারা৷