1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাজাখস্তানে বিক্ষোভে ব্যাপক হতাহত

৬ জানুয়ারি ২০২২

বৃহস্পতিবারও ব্যাপক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে কাজাখস্তানের বিভিন্ন শহরে৷ বিক্ষোভ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও তলব করা হয়েছে৷ রুশ নেতৃত্বাধীন ছয় সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের জোটও সেনা পাঠিয়েছে কাজাখস্তানে৷

Kasachstan Almaty | Proteste & Ausschreitungen
ছবি: REUTERS

বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে ১৮০ দিনের স্থগিতাদেশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাজাখ সরকার৷ কিন্তু তাতেও বিক্ষোভকারীদের শান্ত করা সম্ভব হয়নি৷

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কাজাখ সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি৷ তবে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে আলমাটি শহরে অন্তত দুই হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভে এক ডজনের বেশি পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন৷ এক পুলিশ সদস্যের মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে৷ আলমাটি শহরের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শহরের প্রধান চত্ত্বরে সাঁজোয়া যানে সেনা সদস্যদের প্রবেশ করতে দেখেছেন তারা৷

ছবি: Alexander Platonov/AFP

ঘটনার পেছনে কী?

কাজাখস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ চলছে৷ সোভিয়েত-পরবর্তী যুগে রাশিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীলই ছিল৷ এখন হঠাৎ কী ঘটেছে?

রোববার পশ্চিম কাজাখস্তানের শহর জানাওজেনে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন৷ স্থানীয়দের কাছে অটোগ্যাস নামে পরিচিত তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করছিলেন তারা৷ এরপর দ্রুতই এ বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ৷

সাবেক রাজধানী আলমাটিতেও বিক্ষোভ হয়েছে, প্রেসিডেন্টের একটি প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ অনেক পৌর এলাকায় পৌরভবনে ভাঙচুর এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷ গোলাগুলি এবং বিস্ফোরণের খবরও অনেক জায়গা থেকে পাওয়া গেছে৷

প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ বুধবার বিক্ষোভের মূল বিষয় নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন৷ ভারপ্রাপ্ত সরকার পদত্যাগ করেছে, প্রেসিডেন্ট টোকায়েভ সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ চলা এলাকাগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন৷

কী ঘটতে চলেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, দীর্ঘদিন ধরে ‘স্থিতিশীল স্বৈরাচার' হিসাবে পরিচিত কাজাখস্তানে এমন ব্যাপক মাত্রায় রাজনৈতিক অস্তিরতা কখনও দেখা যায়নি৷ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে৷ কাজাখস্তান সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র এবং এখনও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং যোগানের ঘাটতি

জানাওজেন শহরেই ১০ বছর আগে তেল কারখানার কর্মীদের ধর্মঘট সহিংস রূপ নিয়েছিল৷ কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পর হতাহতের ঘটনাও ঘটেছিল৷ বিশ্বের একমাত্র শান্তিপূর্ণ এবং উদারপন্থি স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিতিও তখনই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল৷

২০১১ সালের বিক্ষোভের ছিল বেতন বৃদ্ধির দাবিতে, এবার শহরের নাগরিকেরা রাস্তায় নেমেছেন অটোগ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করে৷ গাড়ির জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হওয়া এই গ্যাসের দাম নতুন বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে৷ সদ্য পদত্যাগ করা সরকার বলেছিল, বাড়তি চাহিদার পাশাপাশি যোগানে স্বল্পতাও দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ৷

ছবি: Pavel Mikheyev/REUTERS

কাজাখস্তান দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে জ্বালানি খাতে৷ গত বছর পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ হয় দেশটি, জরুরি শাটডাউনও করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ৷ বাড়তি বিদ্যুতের যোগানের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে কাজাখস্তান৷ এখন দেশটি নিজেদের প্রথম পরমাণুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷

গত শরতে খাদ্যদ্রব্যের দাম হুট করে অনেক বেড়ে যায়৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বাধ্য হয় গবাদিপশু, আলু ও গাজর রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে৷

তিন দশকের শাসনের সমাপ্তি

কাজাখস্তানে এমন এক সময় অস্থিরতা তৈরি হলো, যখন দেশটি একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ তিন দশক ধরে দেশটি শাসন করেছেন নুরসুলতান নাজারবায়েভ৷ কমিউনিস্ট শাসনামলে তিনি কাজাখ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টি অব কাজাখস্তানের প্রধানও ছিলেন৷

সোভিয়েত-পরবর্তী যুগে নাজারবায়েভই কাজাখস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন৷ তার কর্তৃত্ববাদি শাসনের ছাপ রয়েছে পুরো দেশ জুড়েই৷ কিন্তু তারপরও পশ্চিমা দেশগুলোকে বিনিয়োগে রাজি করাতে পেরেছিলেন তিনি৷ তেল এবং গ্যাস খাতে এই বিনিয়োগের ফলে জনগণের ভাগ্যেও কিছুটা অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছিল৷

সাবেক রাজধানী আলমাটি থেকে সরিয়ে প্রতিবেশি কিরগিজস্তানের সীমান্তবর্তী আস্তানাকে নতুন রাজধানী ঘোষণা করেন নাজারবায়েভ৷ শহরটির নাম বদলে ‘নিজের সম্মানে' নুরসুলতান করেন নাজারবায়েভ৷

৮১ বছর বয়সি নাজারবায়েভ সোভিয়েত-পরবর্তী বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্টর পরিচালনা করেছেন৷ অবশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তিনি পদত্যাগ করেন৷ স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন নিজের উত্তরাধিকার সুসংহত করতেই তার এই উদ্যোগ৷

ছবি: Mariya Gordeyeva/REUTERS

নাজারবায়েভের পর ৬৮ বছর বয়সি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন৷ কিন্তু কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেশটির নিরাপত্তা পরিষদ এবং ক্ষমতাসীন নুর ওটান পার্টির দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভ৷

কেবল দুই মাস আগে, ২০২১ সালের নভেম্বরে দলের দায়িত্ব টোকায়েভের হাতে ছেড়ে দেন নাজারবায়েভ৷ বুধবার অবশেষে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বও টোকায়েভের হাতে আসে৷

মস্কো উদ্বিগ্ন, জোটের সেনা কাজাখস্তানে

চলমান বিক্ষোভের কারণে টোকায়েভের হাতে ক্রমান্বয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা ঝুঁকিতে পড়েছে৷ অন্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রই কাজাখস্তানের ঘটনাক্রমের দিকে নজর রাখছে৷ নজর রাখছে রাশিয়াও৷

বেলারুশের পরই রাশিয়ার সবচেয়ে কাছের মিত্র কাজাখস্তান৷ ২০২০ সালে নির্বাচনের পর বেলারুশে ব্যাপক বিক্ষোভের পর কাজাখস্তানেও এখন একই ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ দুই দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ গভীর৷

২০১০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের নেতৃত্বে রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তান মিলে ইউরেশিয়ান কাস্টমস কাউন্সিল গঠন করে৷ ২০১৫ সালে আরো দুই সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তান এতে যোগ দেয়ায় এটি অর্থনৈতিক ইউনিয়নে রূপ লাভ করে৷

ছবি: Russian Defence Ministry/AFP

সাবেক কাজাখ প্রেসিডেন্ট নাজারবায়েভের সঙ্গে পুটিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ ডিসেম্বর মাসেও রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সোভিয়েত-পরবর্তী রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলনে দুই নেতার দেখা হয়েছে৷

বেলারুশে বিক্ষোভ দমনে রুশ পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হয়েছিল৷ এবারও বেশ দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছে মস্কো৷ এবার পুলিশ সদস্য নয়, বরং ছয় সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের জোট কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি ওরগানাইজেশন- সিএসটিও এর সেনা সদস্যদেরই মোতায়েন করা হয়েছে কাজাখস্তানে৷ রাশিয়ার নেতৃত্বে এই জোটে রয়েছে বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান৷

কাজাখস্তানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে' সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে রুশ সরকার৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘বন্ধু রাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এমন ঘটনা বিদেশি শক্তির উসকানিতে এবং প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের ব্যবহার করে দেশটির স্থিতিশীলতা নষ্টে পরিচালিত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি৷''

রুশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, এরই মধ্যে দেশটিতে বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কাজাখ সরকার৷ জার্মান এয়ারলাইন লুফতহানসা আলমাটিতে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইদুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়াও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

রোমান গনশারেংকো/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ