প্রবাসীদের জন্য জার্মানিতে ভালো কাজের সুযোগ থাকলেও জার্মানদের সঙ্গে তাঁদের মিশতে সমস্যা হয় বলে একটি জনমত জরিপে উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইন্টারনেশনস-এর করা ফিফথএক্সপাট ইনসাইডার সার্ভে অনুযায়ী, বেশি ভাড়া, কিন্ডারগার্টেনের স্বল্পতা ও জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি জার্মানদের মতো প্রবাসীদের জন্যও চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু এগুলো প্রবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়, বিদেশিদের প্রতি জার্মানদের বন্ধুসুলভ আচরণের ঘাটতিই তাদের কাছে বড় সমস্যা৷
জার্মানিতে কর্মরত বিদেশিদের মতামত নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে৷
জার্মানরা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়– এ বিষয়টি এখানেই প্রথমবারের মতো উঠে আসেনি৷ দীর্ঘ দিন ধরে তাঁদের অবন্ধুসুলভ আচরণ নিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা বলে আসছেন প্রবাসীরা৷
এবারের জরিপের ভিত্তিতে করা প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক দেশের তালিকায় জার্মানির অবস্থান অনেক নীচে নেমে গেছে৷ ৬৮টি দেশের মধ্যে ৩৬তম অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, যেখানে ২০১৪ সালে তাদের অবস্থান ছিল দ্বাদশ৷
জার্মান সংস্কৃতির কিছু মিথ
জার্মানির সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক প্রচলিত ধারণা আছে৷ কোনোটি ভুল, কোনোটি আংশিক ভুল৷ এমন কিছু ধারণা ও বাস্তবতা নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Gauthier Dance Company/R. Brocke
রুপালি পর্দার প্রতি আকর্ষণ
জার্মানিতে সিনেমা দেখতে যান কত লোক বলুন তো? শুনে চমকে যাবেন না৷ একেকজন দু’বছরে গড়ে মাত্র তিনবার৷ ১৯৫০ সালে যেখানে বছরে ৮০ কোটি দর্শনার্থী সিনেমায় যেতেন, সেখানে এখন যান বছরে মাত্র ১২ কোটি ১০ লাখ৷
ছবি: Fotolia
বার্লিন কি ‘সৃজনশীলতার শহর’?
বার্লিন শহরের প্রতি হাজার বাসিন্দার জন্য ১১ জন আঁকিয়ে আছেন৷ রাজধানীতে গোটা জার্মানির অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় শিল্পীর সংখ্যা বেশি, ৩৭০ জন৷ তাই ছবির প্রদর্শনীও হয় সবচেয়ে বেশি৷ এমনকি এখানে ৫ ভাগের প্রায় এক ভাগ ব্যবসা সংস্কৃতি নির্ভর৷
ছবি: DW
অর্কেস্ট্রার চারনভূমি
জার্মানি হলো অর্কেস্ট্রার স্বর্গরাজ্য৷ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অর্কেস্ট্রা দল আছে৷ এখন ১৩১টি পাবলিক অর্কেস্ট্রা দলে প্রায় ১০ হাজার মিউজিশিয়ান কাজ করেন৷ সবচেয়ে পুরোনো অর্কেস্ট্রা দলটি ১৫০৩ সালে প্রথম পারফর্ম করে৷
ছবি: Fotolia/Alexey Klementiev
এত নাট্যমঞ্চ আর কোথাও নেই
সরকারি তহবিলেই জার্মানিতে চলে ১৪২টি নাট্যমঞ্চ৷ নাউমবুর্গে সবচেয়ে ছোট থিয়েটারটির ধারণক্ষমতা ৮০ জন এবং এতে ১১ জন স্টাফ কাজ করেন৷ আর সবচেয়ে বড় থিয়েটারটি হামবুর্গে, যেখানে রয়েছে ১,২০০টি সিট৷ আবার স্টুটগার্টে নাটক, ব্যালে ও অপেরার জন্য যে পারফর্মিং আর্ট সেন্টারটি আছে, তার হলটির ধারণক্ষমতা ১,৪০০৷ এখানে বছরে শো হয় ৯০০টি৷ কাজ করেন ১,৩৫০ জন কর্মী৷
ছবি: Gauthier Dance Company/R. Brocke
ঐতিহ্যবাহী অপেরা
ঐতিহ্যবাহী অপেরা শোয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক পিছিয়ে নেই জার্মানি৷ পৃথিবীর মধ্যে জার্মানি বছরে ৫২৭টি অপেরা শো হয় বার্লিনে, যা পুরো জার্মানির মধ্যে সর্বোচ্চ, তবে পৃথিবীর মধ্যে নয়৷ মস্কোতে বছরে ৫৮২টি ও ভিয়েনায় ৫৩৫টি অপেরা শো হয়৷ তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপেরা হাউস কিন্তু বৈরুতে৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Karmann
শিল্পকর্ম ব্যবসা
যুক্তরাষ্ট্রের পরে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি আর্ট গ্যালারি ও ডিলার আছে৷ সংখ্যায় ৯,৮০৪টি৷ তবে ছবি বিক্রিবাট্টায় খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই দেশটি৷ ছবি বিক্রি থেকে সারা পৃথিবীতে যা আয় হয়, তার মাত্র ২ ভাগ হয় জার্মানিতে৷ এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীন অনেক এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
বইয়ের পসরা
বছরে ৯০ হাজারেরও বেশি বই আসে জার্মানির বাজারে৷ পাশাপাশি রাখলে এটা একটি আড়াই কিলোমিটার লম্বা লাইব্রেরির আকার ধারণ করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rüsche
সংগীত উৎসব
জার্মানির সবচেয়ে বড় সংগীত উৎসব বখুম টোটালে প্রতি বচর আট লাখেরও বেশি দর্শনার্থী আসেন৷ তবে বাণিজ্যিক উৎসব বলতে সবচেয়ে বড় হলো রক আম রিং উৎসব৷ এখানে বছরে ৮৭ হাজার সংগীতপ্রেমী যোগ দেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Frey
ভালোবাসার সংগীত
জার্মানির অর্কেস্ট্রাগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ অ্যামেচার মিউজিশিয়ান কাজ করেন৷ এর বাইরে আরো ৬৪ হাজার পেশাদার মিউজিশিয়ান আছেন৷
ছবি: Fotolia/David Sanchez
স্থাপত্য কলা
ইউনেস্কোর তালিকায় দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হলো কোলন ক্যাথিড্রাল৷ বছরে ৬০ লাখ দর্শনার্থী এই গোথিক স্থাপত্যটি দেখতে আসেন৷ এছাড়াও অসম্ভব সুন্দর সব স্থাপত্যে ভরা মধ্য ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: Fotolia
10 ছবি1 | 10
এ বিষয়ে ইন্টারনেশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাল্টে সিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জার্মানিতে অবস্থানরতদের মধ্যে যাঁরা এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের ৫৬ শতাংশই স্থানীয়দের থেকে বন্ধু পেতে সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন৷ আর বিশ্বব্যাপী মতামত দাতাদের মধ্যে এই সমস্যার কথা বলেছেন মাত্র ৩৬ শতাংশ৷’’
অভিবাসন নিয়ে সাধারণের মধ্যে বিতর্ক বিদেশিদের এদেশে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
বার্লিনভিত্তিক জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিক রিসার্চ (ডিআইডাব্লিউ)-এর প্রধান মারসেল ফ্রাৎশার মনে করেন, জার্মানির দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে এবং সে কারণে বিদেশি কর্মীরা এদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷
বিদেশিদের প্রতি আরো সহশীল আচরণ করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে কয়েক মিলিয়ন মানুষ না এলে জার্মানির এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি হতো না৷’’
এই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিশ্বের যে কোনো দেশে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ তাঁরা তখনই জার্মানিকে বেছে নেবেন, যখন দেখবেন ভালো কাজের সঙ্গে সমাজেও মিশে যেতে পারছেন৷
‘‘তাঁদের এই পথ করে দেওয়ার জন্য আমাদের আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে৷’’
ইন্টারনেশনের জরিপে ২০১৮ সালে প্রবাসীদের সবচেয়ে পছন্দের দেশের তালিকায় সবার উপরে আছে বাহরাইন৷ স্বস্তিদায়ক কর্মপরিবেশের পাশাপাশি সেখানে বসবাসও সহজ মনে করেন প্রবাসীরা৷ জীবনযাপনের সুবিধার কারণে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তাইওয়ান৷
১৮৭টি দেশে বসবাসরত ১৮ হাজারের বেশি ব্যক্তির কাছে অন্য একটি দেশে বসবাসের ক্ষেত্রে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিল জরিপে৷ জার্মানি থেকে এক হাজার ৬৯২ জন জরিপে অংশগ্রহণ করেন৷
জেনিফার ভাগনার/এএইচ
অদ্ভুত নামের সব জার্মান খাবার
জার্মান খাবারের স্বাদ কেমন তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে৷ কিন্তু নামের দিক দিয়ে জার্মান খাবারের জুড়ি মেলা ভার৷ অদ্ভুত ও হাস্যকর নামের কিছু জার্মান খাবার নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Fotolia/tinadefortunata
কাল্টের হুন্ড (ঠাণ্ডা কুকুর)
জার্মানিতে খাবার হিসেবে কুকুর ব্যবহার হয় না৷ বরং পোষা প্রাণী হিসেবে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক৷ ফলে যাঁরা ঠাণ্ডা কুকুর বলতে কুকুরের মাংসের রেসিপি ভাবছেন, তাঁদের ভুল হচ্ছে৷ কাল্টের হুন্ড এক ধরনের ডেজার্ট৷ বাটার কুকির সাথে ঠান্ডা চকোলেট মিলিয়ে তৈরি করা হয় এ খাবার৷
ছবি: Fotolia/tinadefortunata
ফাল্শের হাসে (ভুল খরগোশ)
পাউরুটির মধ্যে যে কোনো কিছু ঢুকিয়ে দিলেই এই মজার খাবার তৈরি হয়ে যায়৷ শূকর, গরু, ডিম, এমনকি শুধু পেঁয়াজ দিয়েও মজার খাবার বানানো যায়৷ কিন্তু ফাল্শের হাসেতে কোনো খরগোশের মাংস থাকে না৷ বরং আলু দিয়ে চারপাশ মুড়িয়ে উপরে একটু সস দিয়ে খরগোশের আকারে সাজিয়ে তা পরিবেশন করা হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মুকেফুক (ভুয়া মোকা)
নাম শুনে কফি মনে হলেও আসলে কফির বিকল্প পানীয় হিসেবেই জনপ্রিয় মুকেফুক৷ বার্লি থেকে বানানো এই পানীয়কে কফির বিকল্প হিসেবে ধরে নেয়া হয়৷ এই নামের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ তবে অনেকেই মনে করেন, ফরাসি শব্দ ‘মোকা ফোঁ’ অর্থাৎ ‘ভুয়া মোকা’ থেকে এর উৎপত্তি৷ অর্থাৎ, নামে মোকা হলেও আসলে তা মোকা নয়৷
ছবি: Bilderbox
বিনেনশ্টিশ (মৌমাছির হুল)
এই খাবার আসলে ভ্যানিলা পুডিং দিয়ে আলমন্ড কেক৷ কিন্তু কেন এর নাম মৌমাছির হুল দেয়া হলো, তার কোনো যৌক্তিক কারণ পাওয়া যায় না৷ লোকে বলে, ষোড়শ শতকে আন্ডেরনাখ শহরে আক্রমণ করে লিনৎস শহর৷ যখন সেনারা এগিয়ে আসছিল, আন্ডেরনাখে চলছিল মধু সংগ্রহের মৌসুম৷ মৌচাক ছুঁড়ে দিয়ে লিনৎসের সেনাদের তাড়িয়ে দেন আন্ডেরনাখবাসী৷ সে বিজয় উদযাপন হয়েছিল এই কেক দিয়েই৷
ছবি: Fotolia/Andrea Klinger
হিমেল উনড অ্যাড (স্বর্গ ও মর্ত্য)
নাম শুনে কখনোই মনে হয় না খাবারটি আসলে এক ধরনের সসেজ৷ জার্মানদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এ খাবারে এছাড়াও থাকে পেঁয়াজ ভাজি, আলু ভর্তা আর আপেল সস৷ সম্ভবত আপেলকে স্বর্গীয় ফল এবং আলুকে পৃথিবীর খাবার ধরে নিয়েই এমন নামকরণ৷
ছবি: cc-by-sa/L.Richarz
আরমার নাইট (গরিব যোদ্ধা)
অ্যামেরিকানরা যাঁকে ফ্রেঞ্চ টোস্ট বলে, জার্মানিতে প্রায় একইরকম খাবারের নাম আরমার নাইট৷ পুরনো সাদা পাউরুটি দুধ, ডিম, চিনি এবং ভ্যানিলায় চুবিয়ে প্যানে ভাজলেই তৈরি আমাদের গরিব যোদ্ধা৷ ধারণা করা হয়, মধ্যযুগে গরিব মানুষ যখন মাংস জোগাড় করতে পারতো না, তখন মাংসের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয় এই খাবার৷
ছবি: Fotolia/Jérôme Rommé
স্প্যাগেতিআইস (স্প্যাগেতি আইসক্রিম)
আইসক্রিমের মধ্যে নুডলস শুনলে বেশ জঘন্য লাগার কথা৷ কিন্তু জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়৷ তবে ভয় পাবেন না৷ এই খাবারে কোনো নুডুলস ব্যবহার হয় না৷ বরং ভ্যানিলা আইসক্রিমকে চেপে নুডুলসের মতো চিকন সুতার আকার দেয়া হয়৷ এর ওপর যোগ করা হয় হুইপড ক্রিম, স্ট্রবেরি সস এবং হোয়াইট চকোলেট স্প্রিংকলস৷