কাটালুনিয়ার বাসিন্দাদের শনিবার দিন শুরু হয়েছে এক নতুন প্রেসিডেন্টের অধীনে৷ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই কাটালুনিয়ার সংসদ ভেঙে দিয়ে স্বায়িত্তশাসিত অঞ্চলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
কাটালুনিয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সেখানে আগামী ২১ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাখোই৷ কাটালুনিয়ার সংসদ শুক্রবার স্বাধীনতা ঘোষণা করলে স্পেন তা বাতিল করতে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে৷ সংশ্লিষ্টি অঞ্চলে আর্টিকেল ১৫৫ প্রয়োগের ব্যাপারে স্পেনের সিনেটে ভোটাভুটি হয়৷ সেখানে ২১৪ জন সদস্য কাটালুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ছিলেন মাত্র ৪৭ জন৷ আর ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন দু'জন৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
7 ছবি1 | 7
রাখোই অবশ্য বারংবারই বলেছেন যে, কাটালুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার কোনো ইচ্ছার তাঁর ছিল না৷ বরং তিনি চেয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চল স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থেকে অন্যান্য দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসুক৷ কিন্তু গত পহেলা অক্টোবর স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে স্বাধীনতার বিষয়ে গণভোটের আয়োজন করে আঞ্চলিক সরকার৷ আর শুক্রবার সেখানকার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনের নেতৃত্বে আঞ্চলিক সংসদ স্পেন থেকে আলাদা হয়ে যেতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে৷ এই ঘোষণার পরপরই স্পেন সরকার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়৷ কাটালুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর রাখোই জানিয়েছেন, সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা এবং বৈধ কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নিশ্চিত করাই হচ্ছে তাঁর লক্ষ্য৷
এদিকে, স্পেন সরকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পুজদেমন এবং তাঁর মন্ত্রিসভার ১২ জন সদস্যদকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷ পাশপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অমাণ্য করার অভিযোগ আনার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে৷ সেখানকার পুলিশ প্রধানকেও অব্যাহিত দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া, আগামী সপ্তাহে পুজদেমনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ আনা হতে পারে৷ স্পেনের আইন অনুযায়ী, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷
উল্লেখ্য, কাটালুনিয়া ইস্যুতে স্পেন সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণাকে ইইউভুক্ত কোনো রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে না বলেও জানা গেছে৷