রাজ্য সরকার ও রাজ্য বিধানসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ডাকার পরও কাটালুনিয়ার সংকট কাটছে না৷ প্রাক্তন মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যকে আটক করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কারলেস পুজেমনসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় সমন জারি করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কার্যতদেশ থেকে পালিয়ে বেলজিয়াম চলে গেছেন কাটালুনিয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পুজেমন৷ সঙ্গে ৪ জন মন্ত্রী৷ সেখানে গিয়ে এক আইনজীবী নিয়োগ করে স্পেনের আইন এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি৷ এবার স্পেনের কর্তৃপক্ষ পুজেমন ও ৪ প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় সমন জারি করে তাদের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করলো৷ এবার বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি বিবেচনা করে তাঁদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ আপত্তির কোনো কারণ না দেখলে ৬০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণ করতে হবে৷ পুজেমনের আইনজীবী তেমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদনের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
কাটালুনিয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে স্পেনের আদালতে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদোহ ও সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগআনা হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷ বিচারপতি কারমেন লামেলা আদালতে অভিযুক্তদের হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কাটালুনিয়ার প্রাক্তন প্রশাসনের ৮ সদস্যকে এর মধ্যেই মামলার স্বার্থে আটক করা হয়েছে৷ তাঁদের জামিনের আবেদন করার উপায় নেই৷ নবম সদস্য ৫০,০০০ ইউরো জমা রেখে জামিন পেয়েছেন৷ উল্লেখ্য, মোট ২০ জনকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
দেশ ছেড়ে চলে গেলেও কাটালুনিয়ায় পুজেমনের এখনো কিছু প্রভাব রয়েছে৷ টিভিথ্রি চ্যানেলে তিনি এক বার্তায় তাঁর প্রশাসনের ৮ সদস্যের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷ আসন্ন দীর্ঘ ‘নিপীড়ন'-এর বিরুদ্ধে তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন৷ তিনি আরও বলেন, পুরোটাই বড় এক ভুল এবং গণতন্ত্রের উপর বিশাল আঘাত আনা হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার বার্সেলোনা শহরে হাজার হাজার মানুষ প্রাক্তন মন্ত্রীদের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী মহলও এমন ‘প্রতিশোধমূলক' পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের এমন কড়া নীতির বিরুদ্ধে অনেকে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন৷ কাটালুনিয়ার বর্তমান সংকটের জন্য যারা দুই পক্ষকেই দায়ী করছেন, তাঁদের কাছে প্রাক্তন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একতরফা শাস্তির প্রচেষ্টা অন্যায় বলে মনে হচ্ছে৷
অন্যরা অবশ্য দেশের আইন ভেঙে একের পর এক পদক্ষেপের জন্য পুজেমন ও তাঁর মন্ত্রীদের দায়ী করছেন৷ বেলজিয়ামে পালিয়ে যাবার কারণেও তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷