কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে তৈরি হওয়ার সংকট সামাল দিতে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোই৷ কিন্তু এই সংকট থেকে ইউরোপের শিক্ষা নিতে হবে বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের বারবারা ভেসেল৷
বিজ্ঞাপন
বার্সেলোনার পরিস্থিতি এখন এমন, যা অসহায় মানুষের অনুভূতি মনে করিয়ে দেয়৷ ক'দিন আগেই ঐ শহরে পুলিশের সঙ্গে স্বাধীনতাপন্থিদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ স্বাধীনতা বিরোধীরাও সেখানে বিক্ষোভ করেছে৷ কিন্তু তারপর কী? কাটালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কারলেস পুজেমন এখন সময়ক্ষেপণ করছেন৷ মাদ্রিদও কোনো ছাড় দিচ্ছে না৷ উলটো স্বাধীনতাকামী শীর্ষ দুই নেতাকে সোমবার কারাদণ্ড দিয়েছেন স্পেনের এক আদালত৷ তাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে কাটালুনিয়ার নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোরত পুলিশকে বাধা দিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ৷
Crisis in Catalonia
12:03
অক্টোবরের শুরুতেকাটালুনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে৷ বার্সেলোনার আঞ্চলিক সরকার স্বাধীনতাকামীদের অনুভূতি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে৷ কার্লেস পুজেমন ও তাঁর সঙ্গীরা যে স্পেন সরকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিজমের অভিযোগ এনেছে, তা হাস্যকর৷
ইউরোপের অন্য দেশের সরকারগুলোকে ভাবতে হবে কীভাবে কাটালুনিয়ার পরিস্থিতি আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গেল৷ পপুলিস্ট মুভমেন্টকে উপেক্ষা করা ও তাদের দাবি ছুড়ে ফেলে দেয়া কখনও সহায়ক হতে পারে না৷ কারণ এর ফলে তারা মনে করতে শুরু করে যে, যা করার নিজেদেরই করতে হবে৷ স্পেনেও তাই হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের কঠোর মনোভাব কাটালুনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিয়েছে৷ এক্ষেত্রে ব্রিটেন গণতান্ত্রিক উপায়ে ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবি সামাল দিয়েছে৷
ইউরোপের ভূমিকা
কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার সমর্থকরা মনে করেছিলেন, ইউরোপ হয়ত একসময় তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে৷ কিন্তু এটি ছিল শিশুদের মতো ভাবনা৷ স্বাধীনতাকামীরা খুব ভুল হিসেব করেছিলেন৷ কারণ বিভিন্ন দেশের জাতীয় সরকার নিয়ে ইইউ গঠিত৷ ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানানোর কোনো কারণ নেই ইইউর৷ ব্রাসেলসের কোনো প্রতিনিধি সংকটের সমাধান করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আসবে – এমনটা ভাবা অকল্পনীয়৷
তবেকাটালুনিয়ার সংকট থেকে ইইউ নেতাদের শিক্ষা নিতে হবে৷ কারণ পপুলিজম বিষয়টি ভবিষ্যতেও থাকবে৷ অস্ট্রিয়ার নির্বাচনের ফলাফল তার আভাস দিচ্ছে৷ ফলে পপুলিজমের উত্থান সম্পর্কে আগাম খবর পেতে ইউরোপীয় স্তরে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই জাতীয় সরকারগুলোকে নিজেদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে হবে৷ এভাবে একত্রে কাজ করতে না পারলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পপুলিজম, ইসলামোফোবিয়া, ব্রেক্সিট – এ সবের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷ এবং এতে করে ইউরোপের অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে৷
বারবারা ভেসেল/জেডএইচ
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷