কাতালানদের প্রতি সর্বশেষ স্পেনীয় চরমপত্রের মেয়াদ ফুরানোর পর সংবিধানের ১৫৫ নম্বর সূত্রটি প্রয়োগের কথা বিবেচনার জন্য একটি ‘অসাধারণ বৈঠকের' আয়োজন করছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যে, তাঁর সরকার স্পেনের সংবিধানের ১৫৫ নম্বর সূত্র অনুযায়ী, ব্যবস্থা নিতে চলেছেন – যা স্পেনের ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনো ঘটেনি৷ এই পন্থায় কাটালান এলাকার আঞ্চলিক স্বশাসন স্থগিত রাখা হবে ও নতুন প্রাদেশিক নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হবে৷
মাদ্রিদ সরকারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হবে কাটালুনিয়ার স্বশাসনের বৈধতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা৷
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়েছে যে, ১৫৫ নম্বর সূত্র প্রয়োগ ও আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ নেবার জন্য আগামী শনিবার মন্ত্রীসভার একটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে৷ মন্ত্রীসভা পদক্ষেপগুলি অনুমোদন করলে, প্রস্তাবটি স্পেনীয় সেনেট, অর্থাৎ স্পেনীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠানো হবে৷ গোটা প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে৷
অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার রাখয় সরকারের একাধিক সদস্য বিরোধী সমাজতন্ত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছেন৷
কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে, ১৫৫ নম্বর সূত্র প্রয়োগ করার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো, ‘‘কাটালুনিয়ার নাগরিকসহ স্পেনীয়দের সাধারণ স্বার্থ সুরক্ষিত করা এবং স্বশাসিত সমাজটিতে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা৷'' অপরদিকে পুইদেমন হুমকি দিয়েছেন যে, ১৫৫ নম্বর সূত্র প্রয়োগ করা হলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা মুলতুবি রাখার নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
7 ছবি1 | 7
কেন্দ্রীয় সরকারের চরমপত্রের মেয়াদ ছিল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটা (গ্রিনউইচ মান সময় সকাল আটটা) অবধি৷ সেই মেয়াদ যখন শেষ হচ্ছে, তখনও কাটালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইদেমন তাঁর অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করেছেন৷ পরিবর্তে পুইদেমন পুনরায় স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ডাক দিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার যদি ‘‘সংলাপে বাধা সৃষ্টি ও নিপীড়নের পন্থা চালিয়ে যান'', তাহলে বার্সেলোনার প্রাদেশিক সংসদ সরকারিভাবে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিতে পারে বলে পুইদেমন সাবধান করে দেন৷ ‘‘(কাটালান) সংসদ ১০ই অক্টোবরের স্বাধীনতা ঘোষণার উপর যে ভোট অনুষ্ঠান করেনি'', এবার তাই করা হবে বলে পুইদেমন ঘোষণা করেন৷
ইতিমধ্যেই স্বাধীন?
বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় চরমপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু পুইদেমন এখনও ‘স্পষ্ট এবং সহজ' হ্যাঁ কিংবা না'র মাধ্যমে মাদ্রিদ সরকারকে জানাননি, তিনি কাটালুনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন কিনা৷ কাজেই কেন্দ্রীয় সরকার পূর্বঘোষিত অভিপ্রায় মতো সংবিধানের ১৫৫ নম্বর সূত্রকে সক্রিয় করতে চলেছেন৷
পুইদেমনের রাজনৈতিক দিকনির্দেশ যতোই দৃঢ় বলে মনে হোক না কেন, বস্তুত কাটালুনিয়ার মানুষ স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত৷ বিগত কয়েক বছরে অঞ্চলটিতে স্বাধীনতার প্রবক্তা ও বিরোধীরা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন – আগামীতেও যা ঘটতে চলেছে, বলে প্রকাশ৷