প্রাথমিক প্রতিরোধের পর কাটালুনিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কার্যত স্পেনের ফেডারেল সরকারের শাসন মেনে নিয়েছে৷ আগাম নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে তারা৷ এদিকে বরখাস্ত হওয়া মুখ্যমন্ত্রী বেলজিয়ামে চলে গেছেন৷
বিজ্ঞাপন
কাটালুনিয়ার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বরখাস্ত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে চলে গেলেন কারলেস পুজেমন৷ স্পেনের সরকারি কৌঁশুলি তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, দেশদ্রোহ ও সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ এনেছেন৷ এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের রায় দিতে পারে৷
এমনই প্রেক্ষাপটে নিজের প্রাক্তন প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে বেলজিয়ামে চলে গিয়েছেন পুজেমন৷ সেখানে এক আইনজীবী নিয়োগ করে সম্ভবত রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ তবে তাঁর আইনজীবী এমন প্রচেষ্টার কথা অস্বীকার করেন৷ উল্লেখ্য, বেলজিয়ামের বিচ্ছিন্নতাকামী ফ্লেমিশ অঞ্চলের নেতারা কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রচেষ্টার প্রতি সহানুভুতিশীল৷ তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ হিসেবে বেলজিয়াম কীভাবে অন্য একটি সদস্য দেশের নাগরিককে আশ্রয় দিতে পারে, সে বিষয়টি দুর্বোধ্য রয়েছে৷
এদিকে কাটালুনিয়া রাজ্যের আগাম নির্বাচনে অংশ নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী দল৷ মাদ্রিদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মুখ্যমন্ত্রী পুজেমন ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী ওরিয়ল জুনকেরাস ব্রাসেলস চলে যাবার পরেও তাঁদের দুই দল এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শিবিরে বিভাজনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ রাজ্য বিধানসভার সদস্যরাও মাদ্রিদের সিদ্ধান্ত কার্যত মেনে নিয়েছেন৷মাদ্রিদের শাসনের বিরুদ্ধে গণ অসহযোগ আন্দোলনের ডাকেও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না৷ কাটালুনিয়া রাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়নি৷ দুটি জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন কমে চলেছে৷ বর্তমানে মাত্র ২৯ থেকে ৩৩ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতা চান৷ জুলাই মাসে তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪১ শতাংশ৷
পরিস্থিতি আবার শান্ত হওয়ায় স্পেনের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা কমে গেছে৷ কিন্তু সমৃদ্ধ কাটালুনিয়া রাজ্যের অর্থনীতি বেশ নাজেহাল হয়ে পড়েছে৷ কাটালুনিয়ার শিল্প-বাণিজ্য জগতের একটা বড় অংশ মাদ্রিদের সরাসরি শাসনকে স্বাগত জানিয়েছে৷ ফলে আগামী নির্বাচনের পর পরিস্থিতির উন্নতির আশা রয়েছে৷
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷