‘লেগো’ খেলনার কথা কে না জানে? ছোট ছোট অসংখ্য টুকরা জোড়া লাগিয়ে গাড়ি, জাহাজ, শহর – কত কিছুইনা বানায় শিশুরা৷ সম্প্রতি ইউক্রেনের এক কোম্পানি কাঠের টুকরা দিয়ে তৈরি খেলনা সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
কোম্পানিটির নাম ইউগিয়ার্স৷ এর প্রতিষ্ঠাতা হেনাডি শেসটাক৷ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কিয়েভে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এখন সারা দুনিয়ায় খেলনা বিক্রি করছে তারা৷
প্লাস্টিকের খেলনার এই যুগে কাঠের তৈরি খেলনা বিক্রি করে সফল হতে হলে সব পরিকল্পনা নিখুঁত হতে হয়৷ এ জন্য মাঝেমধ্যে কয়েকবারের চেষ্টার প্রয়োজন হয়৷
পরিকল্পনা শেষে লেজার দিয়ে পাতলা প্লাইউড থেকে টুকরোগুলো কাটা হয়৷ ক্রেতারা সেগুলো ঘরে নিয়ে গিয়ে চাপ দিয়ে ভেঙে নির্দেশনা অনুযায়ী জোড়া লাগাতে পারেন৷
কাঠের খেলনা জনপ্রিয় হচ্ছে
05:27
নবাগত থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ– সবার জন্য প্রযোজ্য এমন ৩০টি মডেল আছে৷ তবে অনেক সময় ক্রেতারা বিশেষ অনুরোধ করেন৷ প্রতিষ্ঠাতা হেনাডি শেসটাক জানান, ‘‘আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পার্টনাররা বলেছেন, এই মডেলের মাঝখানে ব্যালেরিনার পরিবর্তে এমনকিছু বসাতে হবে, যা হয়ত খুশির প্রতীক হতে পারে৷ কারণ, ব্যালেরিনা ঐ অঞ্চলে জনপ্রিয় নয়৷ ব্যবসায়ীরা যেমনটা চান, তেমনটা দিতে হবে৷ তাহলে তাঁরা বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন৷’’
৯৭ টুকরার একটি ‘ট্রাক্টর’ মডেল বানাতে অভিজ্ঞদের পৌনে একঘণ্টা সময় লাগার কথা৷ সবচেয়ে কঠিন মডেলে আছে প্রায় ৬০০টি টুকরা৷
ইউগিয়ার্সের তৈরি পণ্যের বেশিরভাগই রপ্তানি হয়৷ বিশেষ করে বড়দিনের আগে চাহিদা বাড়ে৷ অনেক অর্থ খরচ করে বিজ্ঞাপন না দিলেও ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামের কল্যাণে তাদের খেলনা জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ প্রায় ৮০টি দেশে তাদের পণ্য বিক্রি হয়৷ অনেক বড় কোম্পানিও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? শেসটাক জানালেন, ‘‘আরও বড় ও জটিল মডেল বানানোর পরিকল্পনা নেই৷ কারণ, ক্রেতারা কতটুকু বানাতে সমর্থ, আমরা তা জানি৷ ফলে তার চেয়ে জটিল করলে তাঁরা আর বানাতে পারবেন না৷ আমরা আসলে বড় করার চেয়ে সুন্দর ডিজাইনের পণ্য বানাতে বেশি আগ্রহী৷’’
ইউগিয়ার্স-এর আসল অর্থ ‘ইউক্রেনিয়ান গিয়ার্স’৷ ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের খেলনাপ্রেমীদের মন কেড়েছে ইউক্রেনের এই কোম্পানি৷
নিকোলাস কনোলি/জেডএইচ
ছেলেদের খেলনা, মেয়েদের খেলনা
বাচ্চাদের খেলনা কেনার জন্য যে কোনো বড় দোকান বা সুপারস্টোরের ঠিক কোন অংশে ছেলেদের আর কোথায় মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে – সেটা রঙ দেখলেই বোঝা যায়৷ কিন্তু এতে করে কি লিঙ্গবিষম্য করা হচ্ছে না?
ছবি: Screenshot Lego Shop
গোলাপি মানেই...
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন৷ ছবিতে একটি সুপারস্টোরের যে অংশ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে গেলে বাচ্চা মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে৷ চারদিকে গোলাপি রঙয়ের ছড়াছড়িই সেটা বলে দিচ্ছে৷ ছেলেদের খেলনার অংশটি হলো নীল৷ খেলনার রঙে এই ভিন্নতার কারণে অনেকদিন ধরেই লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠছিল৷ তারই সূত্র ধরে মার্কিন সুপারস্টোর চেন ‘টার্গেট’ সম্প্রতি এই নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: cc-by-Josh Puetz
রঙ আর থাকবে না
গোলাপি আর নীলের এই খেলায় আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘টার্গেট’৷ টুইটারে ‘গার্লস বিল্ডিং সেট্স’ শীর্ষক প্রচারণা আর এ বিষয়ে একটি পিটিশনের পর, টার্গেট বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এখন থেকে স্টোরগুলোয় রঙ ব্যবহার করে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করবে না৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে টার্গেট৷
ছবি: AP
তবে বার্বি থাকছে...
টার্গেটের এই ঘোষণায় অবশ্য বার্বির উল্লেখ নেই৷ এর মানে, খেলনা হিসেবে ১৯৫৯ সাল থেকে মেয়ে চরিত্রের সমার্থক হয়ে ওঠা বার্বির বিক্রি বন্ধ করবে না তারা৷ বার্বির মাধ্যমে কোমলমতি মেয়ে শিশুদের মধ্যে একটি অবাস্তব নারী দেহের চিত্র তুলে ধরার সমালোচনা আছে বহুদিন ধরেই৷ অবশ্য বার্বির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে৷ যেমন চিকিৎসক, মহাকাশবিজ্ঞানী, শিক্ষক – এ সব পেশার বার্বির মধ্য দিয়ে মেয়েদের আত্মনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিঙ্গ নিরপেক্ষ বাজারজাতকরণ
এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের ‘টয়েস আর আস’ লিঙ্গ নির্ভর বাজারজাতকরণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারও আগে ২০১২ সালে ব্রিটিশ এই সুপারস্টোর তাদের সুইডেনে প্রকাশিত বড়দিনের ক্যাটালগে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ছবি ব্যবহার করেছিল, যেমন উপরের ছবিটি৷
ছবি: top-toy.com
শুধু খেলনা নয়, ক্যান্ডিতেও
ছবিটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ হাইহিল জুতা, নেল পলিশের বোতল দেখতে পাচ্ছেন? অথচ এটি কিন্তু ‘হারিবো’-র ফ্যান্টাসি সিরিজের একটি ক্যান্ডির প্যাকেট, যেখানে ডাইনোসর, গাড়ি ইত্যাদির ছবি থাকা উচিত ছিল৷ কিন্তু শুধু মেয়েদের জন্য (ছবিতে দেখুন পিংক এডিশন) বলেই এই ব্যবস্থা!
ছবি: DW/C. Bleiker
স্লিম, সুন্দরী
‘অ্যামেরিকাস নেক্সট টপ মডেল’-এর মতো প্রতিযোগিতাগুলো মেয়েদের মনে করিয়ে দেয়, মডেল মানেই স্লিম ও সুন্দর হতে হবে৷ জার্মান খেলনা প্রস্তুতকারক ‘প্লেমোবিল’ মেয়ে বাচ্চাদের জন্য এই ধরণের প্রতিযোগিতা খেলার মতো খেলনা নিয়ে এসেছে৷ আজকাল ছেলে মডেল বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও ছেলে শিশুদের জন্য এমন কোনো খেলনা এখনও বাজারে আনেনি প্রেমোবিল৷
ছবি: Screenshot playmobil.de
সাত বছরের মেয়ে বাচ্চার অভিযোগের পর
৭ বছরের শিশু শার্লটে বেনজামিন একবার ‘লেগো’-র কাছে এই বলে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, তাদের খেলনার নারী চরিত্ররা শুধু বাসায় বসে থাকে, বিচে যায় আর শপিং করে৷ এরপর লেগো ২০১৪ সালে ‘রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ নামে একটি খেলনা বের করে যেখানে মেয়েদের বিজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়৷ বাজারের আসার কিছুদিনের মধ্যেই সেটি বিক্রি হয়ে যায়৷ এর মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোভাবও বোঝা গেছে৷ অন্য কোম্পানিগুলো সেটি অনুসরণ করতে পারে৷