একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত একটি খাল খননের বিষয়ে দেশটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই খালটি কাতারকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে দেবে৷ অবশ্য গেল এক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিকভাবে একঘরেই আছে কাতার৷
বিজ্ঞাপন
কাতার-সৌদি সীমান্তের সৌদি অংশে এই খালটি খনন করা হলে নিশ্চিতভাবেই কাতার হয়ে পড়বে আলাদা একটি দ্বীপ৷ বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছিল৷
টুইট বার্তায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানি লেখেন, ‘‘সালওয়া দ্বীপ প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে তা জানতে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি৷ এই প্রকল্প এখানকার ভূগোলই পাল্টে দেবে৷''
এই খালটির খবর প্রথম প্রকাশ করে সাবক নামের একটি অনলাইন পত্রিকা৷ সৌদি রাজবংশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে এই পত্রিকাটির৷
সেখানে বলা হয়, প্রস্তাবিত খালটির দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার ও এটি ২০০ মিটার প্রস্থ হবে৷ খরচ হবে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার৷ এর একটি অংশে পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে৷
মক্কা পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, পাঁচটি ঠিকাদার কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়৷ সেপ্টেম্বরে বিজয়ী ঠিকাদার কোম্পানির নাম ঘোষণা করা হবে৷
কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতির সবশেষ উদাহরণ হলো এই খাল৷ এর আগে ইরান ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এবং তাদের সহযোগিতা করছে কাতার, এমন অভিযোগে ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব ও তার আঞ্চলিক সহযোগী দেশ আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর৷
দোহা সবসময়ই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো দাবি করেছে যে, দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানতেই এমন কাতারকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশগুলো৷
এসব দেশ গত বছর থেকেই কাতারের সঙ্গে স্থল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে৷ তাদের নাগরিকদের সেসব দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে৷ এমনকি রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা কাতার এয়ারওয়েজের বিমানগুলো এসব দেশের আকাশসীমা দিয়ে উড়তে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে৷
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷