কাতারে কোনো নদী নেই৷ বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও খুবই সামান্য৷ তাহলে খাবার ও কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য পানি কোথা থেকে আসে?
কাতারের চাহিদার ৬০ শতাংশ পানি আসে সাগরের পানি থেকেছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
কাতারের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ পানি আসে সাগরের পানি থেকে৷ এরমধ্যে খাবার পানিও আছে৷ আর বাকিটা ভূগর্ভস্থ পানি৷ এই পানি সাধারণত কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়৷
সাগরের পানি পানের যোগ্য করতে রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতি প্রয়োগ করে সেই পানিকে ডিস্যালিনেশন বা বিলবণীকরণ করা হয়, অর্থাৎ সাগরের পানি লবণমুক্ত করা হয়৷
কাতার ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এভাবে পানি লবণমুক্ত করা হয়৷ ইসরায়েলেও এই পদ্ধতি চালু আছে৷
কাতারের রাজধানীতে গেলে যা যা দেখবেন
কাতারের রাজধানী দোহায় কী কী রয়েছে যা দেখে মুগ্ধ হতে হয়? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Kamran Jebreili/AP/dpa/picture alliance
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, দোহা
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার আয়তনে খুব বড় না হলেও সেখানে আকর্ষণীয় স্থানের কিন্তু অভাব নেই৷ মাত্র ১১ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে গেলে রাজধানী দোহা ঘুরে দেখবেন না তা হয় না৷ দোহায় গেলে ছবির এই জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও দেখা খুব জরুরি৷
ছবি: nordphoto GmbH/PIXSELL/picture alliance
ওয়েস্ট বে ডিস্ট্রিক্ট
তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ কাতারের রাজধানীর চারপাশেই শুধু প্রাচুর্যের চিহ্ন৷ সবকিছু ঝকঝকে তকতকে৷ সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের (৯৮ হাজার ইউরো) দেশটির রাজধানীতে অবশ্য মাত্র ১০ ভাগ মানুষ কাতারের নাগরিক৷ সবার কাছেই দোহার অন্যতম প্রিয় এলাকা ওয়েস্ট বে ডিস্ট্রিক্ট (ওপরের ছবি)৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/dpa/picture alliance
সাংস্কৃতিক গ্রাম
ভৌগোলিকভাবে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মাঝামাঝি স্থানে কাতারের অবস্থান৷ দেশটির সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ৷ ‘কাতারা’ সাংস্কৃতিক গ্রামে গেলে তার অনেক নিদর্শন দেখা যায়৷ দোহার প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ পেরোলেই এই গ্রাম৷
ছবি: Marina Lystseva/TASS/dpa/picture alliance
বিশাল মসজিদ
মুসলিম-প্রধান দেশ কাতারে রয়েছে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর মসজিদ৷ তবে ইমাম আব্দুল ওয়াহাব জাতীয় মসজিদকে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে সুন্দর বললে ভুল বলা হবে না৷ একসঙ্গে ৩০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন এই মসজিদে৷ নামাজের সময়ের বাইরে পর্যটকরা বিশাল এ মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন৷
ছবি: Nikku/Xinhua/dpa/picture alliance
দেহ-মনে প্রশান্তি আনে কাতারের শপিং মল
কাতারের শপিং মলগুলো দারুণ৷ সেখানে শুধু কেনাকাটা না করে চাইলে নানাভাবে আনন্দও করতে পারেন৷ কোথাও রয়েছে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, কোথাও সময় কাটানো যায় বরফ দিয়ে নিজহাতে ‘স্নোম্যান’ বানিয়ে৷ গ্রীষ্মে কাতার যখন ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এক জ্বলন্ত চুল্লি, তখন এমনি এমনি শপিং মলে গিয়ে শরীর শীতলও করেন অনেকে৷
ছবি: Valery Sharifulin/TASS/dpa/picture alliance
সোপ ওয়াকিফ
কাতারের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী বাজার সোপ ওয়াকিফ৷২০০৩ সালে আগুনে পুড়ে গেলে বাজারটি নতুন করে গড়ে তোলা হয়৷ কাপড়চোপড়, হস্তশিল্প, মশলা, এমনকি স্যুভেনির কেনার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না৷
ছবি: Igor Kralj/PIXSELL/picture alliance
জাতীয় জাদুঘর
এক সময় কাতার ছিল মণি-মুক্তার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র৷ দোহায় কাতারের জাতীয় জাদুঘরটা তাই যেন মুক্তার মালার কথা স্মরণ করেই গড়েছিলেন ফরাসি স্থপতি জঁ নুভেল৷ কাতারের ইতিহাস, ঐতিহ্যের নিদর্ষন ও তথ্যের এর চেয়ে বড় ভান্ডার আর কোথাও নেই৷
ছবি: Sharil Babu/dpa/picture alliance
স্কুল অব ইসলামিক স্টাডিজ
কাতারের অনেক স্থাপনাই বিশ্বের বিখ্যাত স্থপতিদের ডিজাইনে তৈরি৷ ছবিতে দেখছেন কাতারের স্কুল অব ইসলামিক স্টাডিজ৷ এই ভবনের ডিজাইনার লন্ডন ও বার্সেলোনাভিত্তিক স্থপতি মাঙ্গেরা ইভার্স৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/dpa/picture alliance
মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট
আরব অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর কাতারের এই মিউজিয়াম অব আর্ট৷ এই ভবনটির ডিজাইনার চীনা-অ্যামেরিকান স্থপতি আইএম পেই৷
ছবি: Norbert SCHMIDT/picture alliance
উটের পিঠে মরু দর্শন
কাতারে গেলে অনেকেই উটের পিঠে বা জিপে চড়ে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ান৷ মরুভূমিতে বেদুইনদের তাঁবুর মতো তাঁবু রয়েছে অসংখ্য৷ সেখানে রাত কাটানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে বিদেশি পর্যটকদের কথা ভেবে৷
জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে পানি লবণমুক্ত করার প্রায় ১৬ হাজার প্ল্যান্ট আছে৷
পানি লবণমুক্ত করতে অনেক জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয়৷ কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েক গবেষকরা ২০১৯ সালে জানিয়েছিলেন এক হাজার লিটার পানি লবণমুক্ত করতে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রে একটি রেফ্রিজারেটর চালাতে দিনে প্রায় চার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷
এছাড়া আরও একটি সমস্যা আছে৷ পানি লবণমুক্ত করার পর যে বর্জ্য থাকে সেগুলো প্রায়ই সাগরে ফেলা হয়, যা সিউইড, কোরাল রিফ ও সিগ্রাসের জন্য ক্ষতিকর৷ তবে কিছু প্ল্যান্ট এসব বর্জ্য ভূগর্ভে পুঁতে ফেলে৷
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কাতারে পানির চাহিদা ১০ শতাংশ বাড়তে পারে৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে সেই দেশে যাওয়া প্রায় ১২ লাখ সমর্থক ও মাঠের ঘাস পরিচর্যা করতে এই পানি প্রয়োজন৷
কাতার ও ফিফা অঙ্গীকার করেছে, বিশ্বকাপের আয়োজন জলবায়ুর উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ আয়োজকরা জানিয়েছে, আট স্টেডিয়ামের টয়লেটে এবং স্টেডিয়াম ধুলামুক্ত রাখতে রিসাইকেল করা পানি ব্যবহার করা হবে৷
কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে এসব মনে রাখবেন
২০ নভেম্বর থেকে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস তাদের সমর্থকদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: Karim Jafar/AFP/Getty Images
হেইয়া কার্ড
ম্যাচ টিকিট কেনা ও থাকার জায়গা ঠিক করার পর সমর্থকদের ‘হেইয়া কার্ডের’ জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে৷ এই কার্ড ভিসা, ম্যাচের টিকিট ও বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবহারের টিকিট ও জরুরি মেডিকেল সেবা পেতে ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Mustafa Abumunes/AFP
পানীয়
কাতারে বাস করা বিদেশি নাগরিক ও খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থকরা ৩০টির বেশি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় পানীয় গ্রহণ করতে পারবেন৷ একটি বিয়ারের দাম কমপক্ষে ১০ ডলার বা এক হাজার বাংলাদেশি টাকা হতে পারে৷ এছাড়া ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা আগে ভেন্যুতে বিয়ার বিক্রি শুরু হবে৷ চলবে খেলা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত৷ ফিফার ফ্যান জোনেও বিয়ার কেনা যাবে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
মাদক
ব্রিটিশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে সমর্থকদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে, সামান্য পরিমাণ মাদক রাখার দায়ে ‘কঠোর’ শাস্তি হতে পারে৷ জেল, জরিমানা এমনকি কাতার থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
যৌন হয়রানির শিকার হলে
অনেক দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে, নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হলে কাতারি পুলিশের কাছে যাওয়ার আগে নিজ নিজ দেশের দূতাবাসে যাওয়া উচিত৷
ছবি: Karim Jafar/AFP/Getty Images
সমকামিতা প্রসঙ্গে
কাতারে সমকামিতা অপরাধ হলেও হেইয়া কার্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভিন্ন লিঙ্গের অবিবাহিত বন্ধুবান্ধব বা দম্পতিদের (সমকামীসহ) এক রুমে থাকায় কোনো বাধা নেই৷ ফিফা বলেছে, স্টেডিয়ামে এলজিবিটিদের রংধনু পতাকা নিয়ে যাওয়া যাবে৷
ছবি: Peter Dejong/AP Photo/picture alliance
ভালবাসা প্রদর্শনে সতর্কতা
কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে, বিশ্বকাপের সময় সামাজিক নৈতিকতার বিষয়ে কিছুটা নম্রতা দেখানো হবে৷ তবে ঊর্ধ্বতন আয়োজকরা সতর্ক করে বলেছেন, একজন পুরুষ ও তার স্ত্রী, কিংবা সমকামী দম্পতির দ্বারা ‘প্রকাশ্যে প্রেম/ভালবাসা প্রদর্শন’ হয়ত ‘আপত্তিকর’ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে৷