প্রত্যাশা অনুযায়ী কাতার সৌদি আরবের নেতৃত্বে কয়েকটি দেশের চাপানো শর্ত পূরণ করলো না৷ ফলে সে দেশের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিলো এই জোট৷ উত্তেজনা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে ওয়াশিংটন৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, কাতারের বৈরি নীতির মুখে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় তারা নিজেদের অধিকার, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷ কাতার তাদের চাপানো ১৩টি শর্ত পূরণ না করায় এই জোট ধরে নিচ্ছে, সে দেশ অবশ্যই সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে৷ এই অবস্থায় কাতারের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিলো এই জোট৷ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি৷
উল্লেখ্য, বুধবার এই জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, কাতারের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে না৷ জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছিল এই জোট৷
কাতারকে ঘিরে বর্তমান অচলাবস্থার ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছে মার্কিন প্রশাসন৷ কাতার ও সৌদি আরবসহ বিবাদমান সব দেশের সঙ্গেই ওয়াশিংটন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে এসেছে৷ এই অবস্থায় পক্ষপাত দেখানো তাদের জন্য কঠিন৷ তাই সব পক্ষের উদ্দেশ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংকট মেটানোর আহ্বান জানাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বৃহস্পতিবারই কাতারের সঙ্গে অ্যামেরিকার কৌশলগত সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ বিন আতিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷ তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে তাঁদের আলোচনা হয়েছে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ১০ই জুলাই কুয়েত সফর করবেন৷ তিনি সম্ভবত মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ আপাতত কুয়েত দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ওয়াশিংটনও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন যে, কাতার সংকট অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে৷ এই সংকট সমাধানে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস লেগে যেতে পারে৷ এমনকি সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷