কাতারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি জানালেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ। আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরিন ও মিশর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ অ্যালেনা ডুহান সাম্প্রতিক রিপোর্টে লিখেছেন, আঞ্চলিক ঝামেলার জেরে কাতারেরবিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমিরাত, মিশর, সৌদি আরব ও বাহরাইন। এই চার দেশ অবশ্য দাবি করে কাতার সন্ত্রাসবাদের সমর্থক এবং ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। তাই কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দিয়েছে এই চার দেশ। কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের মতে, মানুষের মানবাধিকার হরণ করে কোনো সরকারকে শিক্ষা দেয়ার নীতি ঠিক নয়।
অ্যালেনা ডুহানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কাতারের মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা জারির পরেই চারটি দেশ কাতারের সমস্ত নাগরিককে নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে। এর ফলে ওই সব মানুষেরা শুধু কাজ হারিয়েছেন তাই নয়, তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েছে। তাই এটা সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে।
কাতার গোড়া থেকেই বলে আসছে, তারা সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেয় না। জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু ওই চার দেশ তিন বছর আগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তখনই তারা জানিয়েছিল, ১০ দফা দাবি মানলে তারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। কিন্তু কাতার তা মানতে চায়নি।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
দশটি দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল, কাতারের সংবাদসংস্থাকে বন্ধ করে দিতে হবে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের মতে, এই ধরনের দাবি আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। তাঁর মতে, কাতার সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সন্ত্রাস বিরোধী আইনও করেছে।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞরা এমনিতে স্বাধীনভাবে কাজ করেন এবং তাঁদের রিপোর্ট জাতিসংঘের রিপোর্ট নয়। তবে জাতিসংঘ এই রিপোর্ট ব্যবহার করতে পারে। এই রিপোর্টটিও ২০২১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে পেশ করা হতে পারে।
অতীতে এই বিরোধ মেটানোর কিছু চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। কাতার জানিয়েছে, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রাজি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাতারের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপোস করা হবে না।