কাতার ছোট দেশ। সেখানেই ফুটবল বিশ্বকাপের বড় আসর বসছে। নিরাপত্তার জন্য পাক সেনার উপর ভরসা করছে তারা।
বিজ্ঞাপন
ফুটবলার, স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা তো আছেই, সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ উপলক্ষে ১২ লাখ মানুষ কাতার যাবেন, তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নও আছে। কাতারের পক্ষে একা এতবড় আসরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তাই তারা অন্তত ১৩টি দেশ থেকে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়োগ করছে। তবে একমাত্র পাকিস্তানই সেনা পাঠিয়েছে। অক্টোবরেই সাড়ে চার হাজার পাকিস্তানি সেনা কাতার পৌঁছে গেছেন। নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তাদের উপর খুব বেশি করে ভরসা করছে কাতার।
কাতারকে নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে যে সব দেশ সাহায্য করছে, তাদের মধ্যে আছে অ্যামেরিকা, তুরস্ক, ফ্রান্স, জর্ডন, যুক্তরাজ্য।
পাকিস্তানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, কাতার সরকারের বিশেষ অনুরোধেই সেখানে সেনা পাঠানো হয়েছে। কাতারের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই সেনা পাঠানো হয়েছে।
বিশ্বকাপ ২০২২ : যে তরুণরা মুগ্ধ করতে পারেন
বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফর্ম্যান্স তরুণ ফুটবলারদের ক্যারিয়ারে গতি এনে দিতে পারে৷ কাতার বিশ্বকাপে যেসব তরুণ ফুটবলার বিশ্ব মাতাতে পারেন তাদের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Laci Perenyi/imago images
মুসিয়ালা, ১৯ (জার্মানি)
চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির নতুন মুখ হয়ে উঠেছেন মুসিয়ালা৷ বয়স কম হলেও বায়ার্ন মিউনিখ তারকা মুসিয়ালাকে কাতার বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা যেতে পারে৷ ছয় ফুট লম্বা মুসিয়ালা একজন ড্রিবলার, স্কোরার ও অ্যাসিস্ট হিসেবে ইতিমধ্যে দারুণ ক্যারিশমা দেখিয়েছেন৷
ছবি: Robin Rudel/Sportfoto Rudel/IMAGO
গাভি, ১৮ (স্পেন)
স্পেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ফুটবলার তিনি৷ বার্সেলোনার গাভিকে স্প্যানিশ গ্রেট ইনিয়েস্তা ও জাভির সঙ্গে তুলনা করা হয়৷ ইতিমধ্যে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন তিনি৷
ছবি: Mutsu Kawamori/AFLOSPORT/IMAGO
বুকাইয়ো সাকা, ২১ (ইংল্যান্ড)
ইউরো ২০২০-এ প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি৷ ফাইনালে ইটালির বিপক্ষে তাকে পেনাল্টি নিতে দেয়া হয়েছিল৷ তবে গোল করতে না পারায় বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন সাকা৷ এখন আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন এই আর্সেনাল তারকা৷
ছবি: Micah Crook/PPAUK/Shutterstock/IMAGO
টাকেফুসা কুবু, ২১ (জাপান)
তাকে ‘জাপানের মেসি’ বলে ডাকা হয়৷ যদিও সামর্থ্য অনুযায়ী এখনও পর্যাপ্ত গোল করতে পারেননি, তবে বিশ্বকাপে স্পেন, জার্মানি ও কস্টারিকার গ্রুপ থেকে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে জাপানকে কুবুর সহায়তা পেতে হবে৷
ছবি: AFLOSPORT/IMAGO
এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, ২০ (ফ্রান্স)
অ্যাঙ্গোলার শরণার্থী শিবিরে কঙ্গোর মা-বাবার ঘরে জন্মেছিলেন তিনি৷ দুই বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা রেয়াল মাদ্রিদ দলে ছিলেন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার৷
ছবি: Dejan Obretkovic/Gonzales Photo/IMAGO
রদ্রিগো, ২১ (ব্রাজিল)
ব্রাজিল দলে সুযোগ পেলেন তিনি৷ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সামর্থ্য আছে রেয়াল মাদ্রিদের এই খেলোয়াড়ের৷
ছবি: Dave Winter/Shutterstock/IMAGO
জোভান্নি রেইনা, ২০ (যুক্তরাষ্ট্র)
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম তারকা হালান্ড (তার দেশ নরওয়ে বিশ্বকাপে খেলছে না) ডর্টমুন্ডে তার সাবেক সহকর্মী রেইনাকে ‘অ্যামেরিকান ড্রিম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ সত্যিই যদি তিনি ফিট থাকেন (প্রায়ই তিনি আহত থাকেন) তাহলে এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন৷
ছবি: John Dorton/ZUMA Wire/IMAGO
আনিস বেন স্লিমান, ২১ (টিউনিশিয়া)
তরুণ এই মিডফিল্ডার ডেনমার্কের যুব দলের হয়ে খেলেছেন৷ ২০১৯ থেকে তিনি টিউনিশিয়ার জাতীয় দলে খেলছেন৷ ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কের গ্রুপে থাকা টিউনিশিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে পৌঁছার স্বপ্ন দেখছে৷ সেই স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন স্লিমান৷
ছবি: Federico Pestellini/Panoramic/IMAGO
8 ছবি1 | 8
পাকিস্তানের পরেই আছে তুরস্ক। তারা তিন হাজার নিরাপত্তারক্ষী পাঠিয়েছে কাতারে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিশেষ করে দাঙ্গারোধী পুলিশই পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কাতারের নিরাপত্তারক্ষীদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে তুরস্ক। প্রতিয়োগিতার সময় কেমনভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি সামলাতে হবে, তা শেখানো হয়েছে তাদের।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি বকির বলেছেন, ''এই প্রশিক্ষণের উপরে খুবই জোর দেয়া হয়েছিল।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''কাতারের জনসংখ্যা বেশি নয়। তাদের কাছে তাই প্রশিক্ষিত বাহিনী খুবই জরুরি।''
আরব দেশগুলি বিদেশি শ্রমিকদের উপর খুবই বেশি করে নির্ভরশীল। কাতারও তাই। এমনকী নিরাপত্তার কাজেও তারা বিদেশের দিকে তাকিয়ে।
গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের সদস্য দেশগুলিতে দুই থেকে তিন কোটি বিদেশি শ্রমিক থাকেন। তার মধ্যে আমিরাত, বাহরিন, সৌদি আরব, ওমান, কাতার ও কুয়েতে থাকেন বেশি বিদেশি শ্রমিক। কাতারে তো প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক আছে। কাতারের নাগরিকের সংখ্যা মাত্র চার লাখ।
বকির বলেছেন, এই অবস্থায় কাতারের পক্ষে বিশ্বকাপের দুই সপ্তাহ ধরে সকলের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা অসম্ভব।
কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে এসব মনে রাখবেন
২০ নভেম্বর থেকে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস তাদের সমর্থকদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: Karim Jafar/AFP/Getty Images
হেইয়া কার্ড
ম্যাচ টিকিট কেনা ও থাকার জায়গা ঠিক করার পর সমর্থকদের ‘হেইয়া কার্ডের’ জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে৷ এই কার্ড ভিসা, ম্যাচের টিকিট ও বিনামূল্যে গণপরিবহন ব্যবহারের টিকিট ও জরুরি মেডিকেল সেবা পেতে ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Mustafa Abumunes/AFP
পানীয়
কাতারে বাস করা বিদেশি নাগরিক ও খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থকরা ৩০টির বেশি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় পানীয় গ্রহণ করতে পারবেন৷ একটি বিয়ারের দাম কমপক্ষে ১০ ডলার বা এক হাজার বাংলাদেশি টাকা হতে পারে৷ এছাড়া ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা আগে ভেন্যুতে বিয়ার বিক্রি শুরু হবে৷ চলবে খেলা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত৷ ফিফার ফ্যান জোনেও বিয়ার কেনা যাবে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
মাদক
ব্রিটিশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে সমর্থকদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে, সামান্য পরিমাণ মাদক রাখার দায়ে ‘কঠোর’ শাস্তি হতে পারে৷ জেল, জরিমানা এমনকি কাতার থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
যৌন হয়রানির শিকার হলে
অনেক দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে, নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হলে কাতারি পুলিশের কাছে যাওয়ার আগে নিজ নিজ দেশের দূতাবাসে যাওয়া উচিত৷
ছবি: Karim Jafar/AFP/Getty Images
সমকামিতা প্রসঙ্গে
কাতারে সমকামিতা অপরাধ হলেও হেইয়া কার্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভিন্ন লিঙ্গের অবিবাহিত বন্ধুবান্ধব বা দম্পতিদের (সমকামীসহ) এক রুমে থাকায় কোনো বাধা নেই৷ ফিফা বলেছে, স্টেডিয়ামে এলজিবিটিদের রংধনু পতাকা নিয়ে যাওয়া যাবে৷
ছবি: Peter Dejong/AP Photo/picture alliance
ভালবাসা প্রদর্শনে সতর্কতা
কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে, বিশ্বকাপের সময় সামাজিক নৈতিকতার বিষয়ে কিছুটা নম্রতা দেখানো হবে৷ তবে ঊর্ধ্বতন আয়োজকরা সতর্ক করে বলেছেন, একজন পুরুষ ও তার স্ত্রী, কিংবা সমকামী দম্পতির দ্বারা ‘প্রকাশ্যে প্রেম/ভালবাসা প্রদর্শন’ হয়ত ‘আপত্তিকর’ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে৷
ছবি: imago/B.König
6 ছবি1 | 6
২০১৪ সাল থেকে কাতারে সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের চার মাসের জন্য এই প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
কেন পাকিস্তান?
বকির বলেছেন, ''উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খুবই ভালো। পাকিস্তান তাদের সুরক্ষা কর্মীদের এখানে পাঠায়। প্রচুর পাকিস্তানিওকানে কাজ করতে আসে।''
১৯৯০-৯১-তে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কুয়েতের সেনার প্রযুক্তিগত ও পরামর্শদাতার ভূমিকায় ছিল।
ইসলামাবাদের ফুটবলপ্রেমী ওসামা মালিক বলেছেন, ''পাকিস্তান কখনই বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষকে কিছু জানায় না। এর পরিবর্তে পাকিস্তান কী পেয়েছে বা পাচ্ছে, সেটাও অজানা। স্থানীয় মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না।''