বিশ্বকাপ আয়োজন বিশাল এক কর্মযজ্ঞ৷ তা শেষ করে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে আয়োজক কাতার কেমন চমক দেখাবে সেই আলোচনা আসর শুরুর কয়েক মাস আগেও গুরুত্ব পাচ্ছে না৷ এখনো প্রধান দুশ্চিন্তা হয়ে আছে মানবাধিকার পরিস্থিতি৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) মূলত দুই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনে বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি জানার উদ্যোগ নিয়েছিল৷ উদ্যোগের আসল উদ্দেশ্য ছিল সার্বিক পরিস্থিতি জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলকে জানানো৷ ৯০ মিনিটের এক বৈঠক শেষে আয়োজনের প্রশংসা করে মিডফিল্ডার মাটিয়াস গিন্টার বলেন, ‘‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ৷ সেখানকার (কাতার) বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য এসব বিষয়ে আরো জানা দরকার৷''
কাতারের আয়োজকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, নির্মাণ শ্রমিকদের ভয়ঙ্কর গরমের মধ্যে কম মজুরিতে, বিরামহীনভাবে কাজ করানো এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে কোনো কর্মী অন্য কোথাও কাজ করতে চাইলেও তাকে সেই সুযোগ না দেয়া৷ নিয়োগকর্তাদের অমানবিকতার শিকার হয়ে গত এক দশকে কয়েক হাজার শ্রমিক মারা গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং নির্মাণ শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিননিধিদের কাছে এসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা-ই জানতে চেয়েছিলেন জার্মান ফুটবলাররা৷
নির্মাণ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ডিটমার শ্যাফার্স৷ ইন্টারন্যাশনাল বিল্ডিং অ্যান্ড উডওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচআই)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘রেড কার্ড ফর ফিফা- নো ওয়ার্ল্ডকাপ উইদাউট হিউম্যান রাইটস' ক্যাম্পেইন শুরু করে ফুটবলের সর্বোর্চ্চ সংস্থাকে তিনি লাল কার্ড দেখানোর বার্তা দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে৷পরে বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটি এবং কাতারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেনদরবার করে ২০২২ বিশ্বকাপে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখারও সুযোগ পান৷ ডয়চে ভেলেকে শ্যাফার্স বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে আমরা ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবেই কাতার বিশ্বকাপের কন্সট্রাকশন সাইটগুলো দেখে আসছি৷ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমরা এ পর্যন্ত মোট ২৪ বার সাইটগুলো দেখেছি৷''
কাতারে কেমন হতে পারে ফুটবল বিশ্বকাপ?
২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে৷ শরিয়া আইন মানা এই দেশে কি অন্য সব আয়োজক দেশের মতোই বিশ্বকাপে মজতে পারবেন সারা বিশ্বের ফুটবল ফ্যানরা? বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/S. Karpukhin
উৎসবের কর্তা কাতার
২০০৬ সালে এশিয়ান গেমসের আয়োজন করলেও ফুটবলের সবচেয়ে বড় উৎসব বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব কাতার এর আগে কখনো পায়নি৷ কিন্তু ২০২২ সালে সেই ভারই পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির ওপর৷
ছবি: picture-alliance
কতটা নিরাপদ কাতার?
রাজনৈতিক দিক দিয়ে বরাবরই কাতার শান্তিপূর্ণ৷ সন্ত্রাসবাদের কোনো বড় ঘটনাও সেখানে ঘটেনি৷ দেশের ভেতরে অপরাধের সংখ্যাও তেমন গুরুতর নয় বলেই আয়োজকরা বেশ নিশ্চিন্ত৷ কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপের মতো এত বড় মাপের আয়োজন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে সামলাবেন, তা নিয়ে বিশ্বের ফুটবল ফ্যানদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
আবহাওয়া কেমন হবে?
সাধারণত, ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় জুন বা জুলাইয়ের মতো গ্রীষ্মকালীন মাসেই৷ কিন্তু কাতারে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে বলেই ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে৷ তখন তাপমাত্রা থাকবে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
মদ পাওয়া যাবে কি?
ফুটবলের সাথে বিয়ারের সম্পর্ক ভালো করেই জানেন ইউরোপের ফুটবল ফ্যানরা৷ কিন্তু কাতারে শুধু হাতেগোনা কয়েকটি পানশালা ও হোটেলেই বিক্রি হয় মদ৷ সে কারণে বিশ্বকাপ চলাকালীন স্টেডিয়ামের ভেতরে বা বাইরে মদ পাওয়া যাবে কি না, এই নিয়ে সংশয় রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
কোথায় থাকবেন ফুটবল ফ্যানরা?
এমনিতেই কাতারে রয়েছে অসংখ্য হোটেল৷ ঝাঁ চকচকে পাঁচতারা হোটেল থেকে মাঝারি বা কম বাজেটের হোটেলও সেখানে প্রচুর৷ কিন্তু বিশ্বকাপ দেখতে আসবেন সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ৷ ফলে, দেশজুড়ে এখনই শুরু হয়ে গেছে অজস্র নতুন হোটেল নির্মাণের কাজ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
যাতায়াত ব্যবস্থা?
কাতারের রাজধানী দোহা’র জিন চার স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে ফুটবল বিশ্বকাপের বেশিরভাগ ম্যাচ৷ কিন্তু এছাড়াও আরেকটি স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে কয়েকটি খেলা, যার দূরত্ব শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার৷ এই সমস্যার সমাধান করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই লেগে পড়েছেন দ্রুতগামী মেট্রোরেল, নতুন রুটের বাস ও ট্যাক্সির উদ্বোধনে৷
ছবি: Reuters/S. Karpukhin
নারীদের পোশাক?
বিদেশি নারীদের পোশাকের ওপর কোনো বাধা-নিষেধ না থাকলেও দেশের নারীরা ইসলামের রীতি মেনেই সাধারণত মাথায় কাপড় দেন৷ কেউ কেউ হিজাব বা নিকাবও পরেন৷ কিন্তু অন্য নারীদের পোশাক নিয়ে নেই কোনো বিধি৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/K. Jebreili
7 ছবি1 | 7
কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় ২০১০ সালে৷ তারপর থেকে অনেক নির্মাণ শ্রমিকই স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরির সময় মারা গেছেন৷ বৈরি, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারানোদের সংখ্যা কয়েক হাজার বলেও কোনো কোনো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ শ্যাফার্স অবশ্য জানালেন বর্তমান পরিস্থিতি আগের মতো ভয়াবহ নয়, ‘‘কর্মীদের কাজের পরিবেশে একটু পরিবর্তন এসেছে৷ যেমন, এখন প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই দিতে শ্রমিকদের জন্য ‘কুলিং রুম'-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, কাজের সময় নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রামের সুযোগও দেয়া হচ্ছে শ্রমিকদের৷'' এছাড়া আগে যে পাসপোর্ট নিয়োগকর্তার কাছে জমা রেখে শ্রমিকদের একরকম জিম্মি করে রাখার ‘কাফালা আইন' ছিল, তা-ও এখন নেই বলে জানালেন বিএইচআই-এর ভাইস চেয়ারম্যান, ‘‘এখন কাফালা আইনও বিলুপ্ত হয়েছে৷ তাই শ্রমিকরা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারেন, ইচ্ছে অনুযায়ী নিয়োগকর্তা বদলানোর সুযোগও দেয়া হয় তাদের৷এছাড়া ন্যূনতম মজুরিও ঠিক করে দেয়া হয়েছে৷''
পরিবর্তন: ইউরোপেরচোখেএবংকাতারেরবাস্তবতায়...
তবে কাজের পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো, ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত এবং কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ হলেও তাতে খুশির কিছু দেখছেন না শ্যাফার্স৷ তার মতে, দুটি কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি একেবারেই কাঙ্খিত পর্যায়ে হচ্ছে না, এক, মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি তদারকিতে লোকের অভাব, দুই, শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুন্ন করা ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি না দেয়া৷ শ্যাফার্স বলেন, ‘‘কাতারে এই মুহূর্তে প্রায় নয় লাখ শ্রমিক কাজ করছেন৷ অথচ পরিদর্শক আছে মোট ২০০ জন৷ প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগণ্য৷'' নিজেদের বঞ্চনার কথা এখন একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে আর্বিট্রেশন বোর্ডকে জানানোর সুযোগও দেয়া হচ্ছে শ্রমিকদের৷ তারপরও বঞ্চনা খুব একটা না কমার কারণ জানাতে গিয়ে শ্যাফার্স বলেন, যেসব কোম্পানি অনিয়ম করে, তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না, ‘‘ তাদের শুধু জরিমানা করা হয়৷ অথচ আমার মনে হয় তাদের জেলে পাঠানো এবং কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থাও করা উচিত৷কিন্তু তা কখনো করা হচ্ছে না৷''
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Medichini
11 ছবি1 | 11
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কাটিয়া ম্যুলার-ফালবুশ মনে করেন, ‘‘বিশ্বকাপের কন্সট্রাকশন সাইটগুলোতে যে শ্রমিকরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তাদের মাত্র দুই শতাংশের অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে৷বাকি ৯৮ ভাগের জন্য পরিস্থিতি এখনো অনেক খারাপ৷''তবে তা সত্ত্বেও হতাশায় মুষড়ে পড়ার কারণ দেখছেন না শ্যাফার্স৷ তিনি বলেন, ‘‘সংস্কারে যে সময় লাগবে তা আমাদের মেনে নিতে হবে৷সবকিছু ইউরোপের চোখ দিয়ে দেখলে তো হবে না৷ আধুনিকায়নের জন্য কাতার যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে তাদের মানদণ্ডে সেগুলো বিশাল৷ আমাদের অবস্থান থেকে দেখলে সেগুলোকে খুব নগণ্য মনে হতেই পারে৷''