ইসরায়েলের হামলার চূড়ান্ত নিন্দা করেছে দোহা। হামলার নিন্দায় জার্মানি, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশ। অ্যামেরিকাও এই হামলা সমর্থন করেনি।
কাতারে ইসরায়েলের হামলাছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার কাতারে হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। আক্রমণের কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি জানিয়েছেন, হামাস নেতাদের আক্রমণের উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ঘটনার পর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে দোহা। উল্লেখ্য, কাতারের মধ্যস্থতাতেই এতদিন ধরে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছিল। এদিনের এই ঘটনার পর কাতার জানিয়ে দিয়েছে, এরপর আর আলোচনা চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, তাদের নেতারা বেঁচে আছেন। ইসরায়েলের হামলায় তারা নিহত হননি।
গাজা আলোচনা
এদিন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরহমান আল থানি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, ''এদিনের ঘটনার পর আর কোনো কিছুই বৈধ নয়।'' তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কাতার সবরকম চেষ্টা চালিয়েছে। ভবিষ্যতেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তবে এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে নেতানিয়াহুকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন শেখ মোহাম্মেদ। তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস' চালাচ্ছেন। গোটা অঞ্চলকে এমন এক অস্থিরতার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, যা আর মেরামত করা সম্ভব হবে না।
যদিও নেতানিয়াহুর বক্তব্য, এই আক্রমণ সম্পূর্ণ বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। চারজন ইসরায়েলের সেনা নিহত হওয়ার পর এবং জেরুসালেমের বাসস্ট্যান্ডে হামলার ঘটনা ঘটার পর তিনি এই আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধকে লজ্জা দিতে যেখানে বেজে ওঠে সংগীতের সুর
বিধ্বস্ত গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের কান্না, যন্ত্রণার খতিয়ান৷ তার মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন তরুণ সংগীতশিল্পীরা৷ শান্তি খোঁজেন সুর ও গানের মধ্যে দিয়ে৷ খোঁজেন আশার আলোও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
ভয়ের বিরুদ্ধে আশার লড়াই
গাজা সিটি দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে ভেঙেছে গাজা কলেজের ঘর৷ গুলিবিদ্ধ দেওয়াল, ভাঙা জানলা৷ মোহাম্মদ আবু মেহেদির কাছে এ আর নতুন কিছু নয়৷ তাই এমন পরিস্থিতিতেও তিন ছাত্রী ও এক ছাত্রকে তিনি শেখাতে পারেন গিটার৷ মেহেদি মনে করেন, এই দুর্বিষহ সময়ে সংগীত মানুষকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে পারে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
হার না মানা এক শিক্ষক
২০২৪ সালের শুরুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজায় সংগীতের ক্লাস নিতে শুরু করেন আহমদ আবু আমশা৷ এডওয়ার্ড সাইদ ন্যাশনাল কনজার্ভেটরি অব মিউসিক-এর অন্যতম শিক্ষক তিনি৷ দক্ষিণ গাজার যুদ্ধের আতঙ্কগ্রস্ত ভীত কিশোর-কিশোরীদের গান ও বাজনা শেখাতে শুরু করেন আহমদ৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
‘সংগীত আমাকে আশা জোগায়’
‘‘গান-বাজনা আমাকে আশা জোগায় ও সব উৎকণ্ঠা দূর করে৷’’ জানিয়েছে ১৫ বছরের রিফান আল কাসাস৷ ন‘বছর বয়স থেকে সে আরবি বাদ্যযন্ত্র ‘উদ’ বাজাতে শিখেছে৷ তার আশা, একদিন সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজাবে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
পরিস্থিতি ভয়াবহ
সংগীত শিক্ষকের তাঁবু থেকে বেরোলেই চোখের সামনে বিধ্বস্ত গাজা শহরের চিত্র৷ আপৎকালীন আশ্রয়শিবিরে শত শত মানুষ৷ একটু খাবার, ওষুধ, একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার৷ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত৷ কেউ কেউ ক্লাসে আসতেও পারেন না৷ দৃশ্যটি ১২ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মৃত্যু ও যন্ত্রণাকে হারাতে
ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলবাড়ির সামনে নিজের বাদ্যযন্ত্র উদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১৮ বছরের ইউসেফ সাদ৷ স্কুলের বাকি সব বাদ্যযন্ত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ১৮ বছরের এই তরুণের স্বপ্ন, ‘‘একদিন আমি নিশ্চয়ই শিশুদের সংগীতের পাঠ দিতে পারবো, যাতে তারা ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সৌন্দর্যকে বেছে নেয়৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মঞ্চ, শ্রোতা ও দর্শক
পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু সংগীত তো সবসময়েই শ্রোতাকে খুঁজে নেয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে একটি তাঁবুর মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ সে অনুষ্ঠানের শেষে প্রশংসা ও হাততালিতে ফেটে পড়ে সেই তাঁবু৷ ২০ বছরের এক তরুণ শিক্ষার্থী জানান, ‘‘সংগীতের নতুন ধরন নিয়ে জানতে আমার ভালো লাগে৷ তার চেয়েও ভালো লাগে রক (সংগীতের এক বিশেষ ঘরানা)৷’’ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
এক মুহূর্তের আনন্দ
কোনোরকমে খাড়া করা মঞ্চে শিশুদের কচি গলার গান যেন হারিয়ে দেয় প্রতিদিনের বিস্ফোরণের শব্দকে৷ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
যন্ত্রণা বনাম সংগীত
ওসামা জাহৌজ ‘নেই’ নামক একটি বাঁশি বাজান৷ মূলত আরবি, ফারসি ও তুর্কী সংগীতে এই বাঁশি বাজানো হয়৷ তার কথায়, ‘‘ বোমা বিস্ফোরণ তীব্র হলে আমি শ্বাসের ব্যায়াম করি, বা খুব নিচু লয়ে বাঁশি বাজাই৷ বাজানোর সময় মনে হয় আমি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছি৷ নেই যেন আমার যন্ত্রণাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকার দাবি
এদিকে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার সতর্কবার্তা কাতারকে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। কিন্তু বার্তা পাঠাতে তাদের একটু দেরি হয়েছিল।
কাতার জানিয়েছে, বোমা বর্ষণের শব্দ যখন শুরু হয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছায়। ঘটনা শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর অ্যামেরিকা বার্তা দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
কাতার মন্ত্রিসভার মুখপাত্রও এক্স হ্যান্ডেলে একই অভিযোগ করেছেন। অ্যামেরিকা হামলা শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ স্বীকার করেছে অ্যামেরিকা। সমাজ মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, 'কাতারকে জানাতে একটু সময় লেগেছে আমাদের।'
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একজোট
কাতারের প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত রাষ্ট্রগুলির ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এমন বর্বরোচিত কাণ্ডের জবাব দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই কাজ তার সঙ্গে আলোচনা করে করেনি। এবিষয়ে অ্যামেরিকা কিছু জানতো না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, কাতারের আমির এবং প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন, এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি সকলেই ইসরায়েলের এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে।