অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মঞ্চে তেমন সাফল্য না পেয়ে পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করে দেখাতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কাতার সংকটের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সমাধানে উদ্যোগ নিতে চাইছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গত জুন মাসে কাতার ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে কিছু দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে, এখনো তার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ একাধিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কাতার চাপের মুখে নতি স্বীকার করেনি৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া করাতে তৎপর হয়ে উঠতে চান৷ বিবাদমান দেশগুলির প্রতিনিধিদের হোয়াইট হাউসে ডেকে তিনি মধ্যস্থতা করতে চান৷ কাতারের প্রতিনিধিরা এমন বোঝাপড়ার জন্য প্রস্তুত, বলেন ট্রাম্প৷
সৌদি আরবের সঙ্গে অ্যামেরিকার ‘দারুণ সম্পর্ক' রয়েছে, তাই সুযোগ পেলে তিনি মধ্যস্থতার দায়িত্ব নিতে চান৷ ওয়াশিংটন সফররত কুয়েতের রাষ্ট্রপ্রধান সাবাহ আল আহমেদ আল-সাবাহ-র সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির গোষ্ঠী জিসিসি-র মধ্যে আবার ঐক্য আনার উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷ সন্ত্রাসবাদ সহ একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বর্তমান বিবাদ অন্তরায় হয়ে উঠছে বলে মনে করেন ট্রাম্প৷
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আবদুলরহমান আল-তানি বলেছেন, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে কোনো পূর্বশর্ত থাকলে চলবে না৷ বিশেষ করে সৌদি নেতৃত্বে জোট যে ১৩টি দাবি পেশ করেছে, তা কাতারের পক্ষে পুরোপুরি মেনে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়৷ বর্তমান মধ্যস্থতাকারী দেশ কুয়েতের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ সাবাহ-ও বলেছেন, সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব না হলেও এর একটা বড় অংশের মীমাংসা করা সম্ভব৷ তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে৷
কাতার সংকটের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়েও আশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ অতীতে একের পর এক মার্কিন প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও তিনি মনে করেন, অবশ্যই শান্তির সম্ভাবনা রয়েছে৷ ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সরাসরি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি কঠিন হলেও সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির মাধ্যমে এক আঞ্চলিক সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷ তবে ট্রাম্প দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্রের প্রতি আগ্রহ না দেখানোর ফলে ফিলিস্তিনিরা হতাশা প্রকাশ করেছে৷
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷