কাতারকে একঘরে করতে সৌদি আরব ও তার সহযোগী দেশগুলি যে কড়া অবস্থান নিয়েছে, তা কিছুটা নরম করতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন৷ এদিকে কাতারের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি শোনা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ মঙ্গলবারই তিনি ওয়াশিংটনে সৌদি আরব ও কাতারসহ আঞ্চলিক দেশগুলির শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন৷ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এই উদ্যোগ চলার কথা৷ টিলারসন প্রথমে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরহমান আল তানি, তারপর কুয়েতের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন৷ উল্লেখ্য, এই সংকট কাটাতে কুয়েত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে৷ জাতিসংঘও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করার আগ্রহ দেখিয়েছে৷
তবে কাতার সংকট শীঘ্র কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ ওয়াশিংটন সফরে এসে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর বলেন, কাতারের কাছে যে সব দাবি পেশ করা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ নেই৷ সে দেশকে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদে মদদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে৷
এদিকে গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ওমর গোবাশ বলেছেন, কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হতে পারে৷ তাছাড়া অন্যান্য দেশের উপর এ ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে৷ অর্থাৎ কাতারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে আমিরাত ও তার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে৷
এই সংকটের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশগুলি দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে৷ তুরস্ক ও ইরাক কাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ অন্যদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন কাতারকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর৷ প্রথমদিকে ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ না করলেও এখন উত্তেজনা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কারণ, এই সংকটের সঙ্গে যুক্ত সব দেশের সঙ্গেই অ্যামেরিকার গভীর ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে৷ মার্কিন নৌ ও সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের কয়েকটি দেশে মোতায়েন রয়েছে৷ তবে আদৌ কোনো সমাধানসূত্রে আসা সম্ভব হলেও সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে তা করতে হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ এই সংকটের সমাধান হওয়া পর্যন্ত গোটা অঞ্চলে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ মুলতুবি রাখার প্রস্তাবও শোনা যাচ্ছে৷
কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে বলেছেন, আরব দেশগুলি সন্ত্রাসবাদে মদদের যে অভিযোগ এনেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও একেবারই গ্রহণযোগ্য নয়৷ এই সব দাবির সপক্ষে তারা কোনো প্রমাণও পেশ করতে পারেনি৷
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷