২০১৪ ও ২০১৮ সালে ব্রাজিল ও রাশিয়া বিশ্বকাপ আয়োজনে ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম খরচ হয়েছিল৷ ২০১০ সালে কাতারকে যখন ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলার৷
বিজ্ঞাপন
শেষ পর্যন্ত সেটি কত হয়েছে সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া সম্ভব নয়৷ তবে বেশ কয়েকটি হিসাব বলছে, মোট খরচ ২০০ বিলিয়ন ডলার পেরিয়ে যাবে৷ শেফিল্ড হালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ফাইন্যান্স বিভাগের লেকচারার ড্যান প্লুমলে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ের কিছু হিসাব বলছে, খরচ ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ এটা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে, যদিও আমরা এখনও জানি না, ঠিক কত বেশি খরচ হতে যাচ্ছে৷''
যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টস ফাইন্যান্স কনসাল্টেন্সি ‘ফ্রন্ট অফিস স্পোর্টস'-এর হিসেবে খরচ ২২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রধান হাসান আল থাওয়াদি জানিয়েছেন, ২০১০ সালে আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর অবকাঠামো খাতে খরচ ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে৷
বিশ্বকাপ ২০২২ : যে তরুণরা মুগ্ধ করতে পারেন
বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফর্ম্যান্স তরুণ ফুটবলারদের ক্যারিয়ারে গতি এনে দিতে পারে৷ কাতার বিশ্বকাপে যেসব তরুণ ফুটবলার বিশ্ব মাতাতে পারেন তাদের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Laci Perenyi/imago images
মুসিয়ালা, ১৯ (জার্মানি)
চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির নতুন মুখ হয়ে উঠেছেন মুসিয়ালা৷ বয়স কম হলেও বায়ার্ন মিউনিখ তারকা মুসিয়ালাকে কাতার বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা যেতে পারে৷ ছয় ফুট লম্বা মুসিয়ালা একজন ড্রিবলার, স্কোরার ও অ্যাসিস্ট হিসেবে ইতিমধ্যে দারুণ ক্যারিশমা দেখিয়েছেন৷
ছবি: Robin Rudel/Sportfoto Rudel/IMAGO
গাভি, ১৮ (স্পেন)
স্পেনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ফুটবলার তিনি৷ বার্সেলোনার গাভিকে স্প্যানিশ গ্রেট ইনিয়েস্তা ও জাভির সঙ্গে তুলনা করা হয়৷ ইতিমধ্যে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন তিনি৷
ছবি: Mutsu Kawamori/AFLOSPORT/IMAGO
বুকাইয়ো সাকা, ২১ (ইংল্যান্ড)
ইউরো ২০২০-এ প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি৷ ফাইনালে ইটালির বিপক্ষে তাকে পেনাল্টি নিতে দেয়া হয়েছিল৷ তবে গোল করতে না পারায় বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন সাকা৷ এখন আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন এই আর্সেনাল তারকা৷
ছবি: Micah Crook/PPAUK/Shutterstock/IMAGO
টাকেফুসা কুবু, ২১ (জাপান)
তাকে ‘জাপানের মেসি’ বলে ডাকা হয়৷ যদিও সামর্থ্য অনুযায়ী এখনও পর্যাপ্ত গোল করতে পারেননি, তবে বিশ্বকাপে স্পেন, জার্মানি ও কস্টারিকার গ্রুপ থেকে পরবর্তী রাউন্ডে যেতে জাপানকে কুবুর সহায়তা পেতে হবে৷
ছবি: AFLOSPORT/IMAGO
এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, ২০ (ফ্রান্স)
অ্যাঙ্গোলার শরণার্থী শিবিরে কঙ্গোর মা-বাবার ঘরে জন্মেছিলেন তিনি৷ দুই বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা রেয়াল মাদ্রিদ দলে ছিলেন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার৷
ছবি: Dejan Obretkovic/Gonzales Photo/IMAGO
রদ্রিগো, ২১ (ব্রাজিল)
ব্রাজিল দলে সুযোগ পেলেন তিনি৷ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সামর্থ্য আছে রেয়াল মাদ্রিদের এই খেলোয়াড়ের৷
ছবি: Dave Winter/Shutterstock/IMAGO
জোভান্নি রেইনা, ২০ (যুক্তরাষ্ট্র)
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম তারকা হালান্ড (তার দেশ নরওয়ে বিশ্বকাপে খেলছে না) ডর্টমুন্ডে তার সাবেক সহকর্মী রেইনাকে ‘অ্যামেরিকান ড্রিম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ সত্যিই যদি তিনি ফিট থাকেন (প্রায়ই তিনি আহত থাকেন) তাহলে এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন৷
ছবি: John Dorton/ZUMA Wire/IMAGO
আনিস বেন স্লিমান, ২১ (টিউনিশিয়া)
তরুণ এই মিডফিল্ডার ডেনমার্কের যুব দলের হয়ে খেলেছেন৷ ২০১৯ থেকে তিনি টিউনিশিয়ার জাতীয় দলে খেলছেন৷ ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কের গ্রুপে থাকা টিউনিশিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে পৌঁছার স্বপ্ন দেখছে৷ সেই স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন স্লিমান৷
ছবি: Federico Pestellini/Panoramic/IMAGO
8 ছবি1 | 8
শুধু বিশ্বকাপআয়োজনের খরচ কত সেটা নিশ্চিত করে বের করতে না পারার কারণ কাতার সরকার ‘কাতার ন্যাশনাল ভিশন ২০৩০'-এর আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ আগেই শুরু করেছিল৷ বিশ্বকাপের দায়িত্ব পাওয়ার পর সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো আগে বাস্তবায়ন করা হয়৷ যেমন নতুন মেট্রো ব্যবস্থা চালু, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নতুন রাস্তা, প্রায় একশ নতুন হোটেল ও অবকাশ যাপনের সুবিধাদি নির্মাণ করা হয়েছে৷
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে৷ সরকার বলছে, এতে সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে৷ মোট আটটি স্টেডিয়ামে খেলা হবে৷
২৮ লাখ মানুষের দেশে এতগুলো স্টেডিয়ামের প্রয়োজন নেই৷ তাই বিশ্বকাপ শেষে তিনটি রেখে বাকিগুলো অন্য কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল ফাইন্যান্স স্পেশালিস্ট কিরেন ম্যাগোয়ার মনে করছেন, নতুন অবকাঠামো দেখিয়ে ভবিষ্যতে কাতার হয়ত ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগের ফাইনালের মতো খেলা আয়োজন করতে চাইতে পারে৷
আর্থার সুলিভান/জেডএইচ
বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কার, কতখানি?
খেলাধুলার তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা স্ট্যাটস পারফর্ম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বকাপে কোন দলের জেতার সম্ভাবনা কতখানি তা জানিয়েছে৷ ভবিষ্যদ্বাণী করতে বাজির দর ও দলগুলোর অতীত ও বর্তমান পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়েছে৷
এটি খেলাধুলার তথ্য বিশ্লেষণকারী একটি সংস্থা৷ স্প্যানিশ ফুটবল লিগ লা লিগা, প্রচারমাধ্যম ইএসপিএন, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম খেলার পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ তুলে ধরতে স্ট্যাটস পারফর্মের তথ্য ব্যবহার করে৷
বিশ্বকাপ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কয়েকটি বেটিং কোম্পানির বাজির দর ও স্ট্যাটস পারফর্মের নিজস্ব টিম ব়্যাংকিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে কাতার বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কার কতখানি, তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এছাড়া প্রতি ম্যাচের সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করে কে, কোন স্থান অর্জন করে নকআউট পর্যায়ে যেতে পারে এবং সেখানে কে, কার বিরুদ্ধে খেলতে পারে সেই সব বিবেচনা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে৷
পাঁচবারের (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২) বিশ্ব সেরা ব্রাজিল এবার ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে বলে স্ট্যাটস পারফর্মের ভবিষ্যদ্বাণী বলছে৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়েও এক নম্বরে আছে নেইমাররা৷ স্ট্যাটস পারফর্ম বলছে, সেলেসাওদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ১৫.৮ শতাংশ৷
ছবি: Isabella Bonotto/AFP
এরপরেই আছে আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার সমর্থক ছাড়াও এবার আরও অনেকে ফুটবলের বিস্ময় মেসির হাতে শিরোপা দেখতে চাইছেন৷ ভবিষ্যদ্বাণী বলছে তাদের সেই সম্ভাবনা ১২.৬ শতাংশ, সে হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনার তালিকায় ব্রাজিলের পরেই আছে দুবারের (১৯৭৮ ও ১৯৮৬) জয়ী আর্জেন্টিনা৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দলটি আছে তিন নম্বরে৷ এছাড়া টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত আছে আলবিসেলেস্তেরা৷
ছবি: Odd Andersen/AFP
তিনে ফ্রান্স
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সে এবারও তারকার অভাব নেই৷ এমবাপ্পে ছাড়াও আছেন সদ্য ব্যালন ডি আর জয়ী বেনজেমা৷ লিওনেল মেসিও ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের ফেভারিট বলেছেন৷ তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, ফিফা ব়্যাংকিংয়ে চার নম্বরে থাকা ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা ১২.২ শতাংশ৷ ১৯৯৮ সালেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স৷
ছবি: Bertrand Guay/AFP
স্পেন চারে
২০১০ সালে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন৷ স্ট্যাটস পারফর্ম বলছে, এবার তাদের সেরা হওয়ার সম্ভাবনা ৯.১ শতাংশ৷ কারণ কোচ লুইস এনরিকে ও অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটসের দলে আছে গাভি, তোরেস, মোরাতা, কারভাহালের মতো ফুটবলার৷
ছবি: Paul White/AP Photo/picture alliance
পাঁচে ইংল্যান্ড
১৯৬৬ সালের পর থেকে ‘ফুটবলের ঘরে ফেরার’ অপেক্ষায় আছেন ইংলিশ সমর্থকরা৷ গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিল থ্রি লায়নসরা৷ এবার দলে আছেন হ্যারি কেন, রহিম স্টারলিং, ফিল ফোডেনের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বড় দলে খেলা সব ফুটবলার৷ তাই আবারও আশায় বুক বাঁধছেন সমর্থকরা৷
ছবি: Martin Rickett/PA Wire/picture alliance
জার্মানি ছয়ে
ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার (১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি৷ তবে এবার ফেভারিটের তালিকায় নেই হানসি ফ্লিকের দল৷ গত বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারেনি জার্মানি৷ ইউরো ২০২০-এ শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিল ‘ডি মানশাফট’৷ ফিফা ব়্যাংকিংয়েও দশের মধ্যে নেই জার্মানি৷
ছবি: Markus Ulmer/ULMER/IMAGO
সাতে নেদারল্যান্ডস
১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ সালে ফাইনালে উঠেছিল নেদারল্যান্ডস৷ তবে একবারও কাপ হাতে নিতে পারেনি৷ এবার কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে লুই ফান খালের দলের?
ছবি: Olaf Kraak/AFP
পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক
স্ট্যাটস পারফর্মের ভবিষ্যদ্বাণীর তালিকায় আট, নয় ও দশ নম্বরে আছে পর্তুগাল, বেলজিয়াম ও ডেনমার্ক৷ তারা একবারও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি৷ রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ নিয়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পেরেছিল বেলজিয়াম৷ তবে তাদের সামর্থ্য ক্রমশ কমে যাওয়ায় ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন এবারও অধরা থেকে যেতে পারে ক্যাভিন ডি ব্রোইনেদের৷