কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলো ঐ অঞ্চলের কূটনৈতিক সংকট নিরসনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশটিকে কিছু দাবি পূরণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে৷ এর মধ্যে অন্যতম আল-জাজিরা চ্যানেল বন্ধ করা৷
বিজ্ঞাপন
‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা' অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা পাঁচ আরব দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, মিশর ও বাহরাইন সংকট সমাধানে তাদের ১৩টি দাবির একটি তালিকা দোহায় পাঠিয়েছে৷ দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কাতারকে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, দাবির অন্যতম হলো আল-জাজিরা চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া এবং ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করা৷ কুয়েতের মাধ্যমে এই দাবি-দাওয়াগুলো জানানো হয়েছে৷ কুয়েত দেশগুলোর মধ্যে সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করছে৷ ১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্ধের পর এই প্রথম বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কাতারকে৷
দাবি দাওয়ার মধ্যে রয়েছে কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেওয়া এবং দেশটিতে অবস্থান করা ওই পাঁচ দেশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের হস্তান্তর৷ তবে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করবে না, কেননা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য সেখানে সেনা ঘাঁটি অত্যাবশ্যকীয়৷ এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্ক ছিন্নের পর থেকে তুরস্ক কাতারে রপ্তানির পরিমাণ তিনগুণ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রী৷
ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে ‘মদদ দিচ্ছে' এই অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন প্রতিবেশী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর কাতারের সঙ্গেসম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়৷ সেইসঙ্গে কাতারের সব নাগরিকের দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ওই পাঁচ দেশ থেকে এই ঘোষণা আসে৷
এদিকে প্রতিবেশীদের অভিযোগ অস্বীকার করে কাতার এই সিদ্ধান্ত ‘দুঃখজনক ও ভিত্তিহীন' বলে দাবি করে আসছে৷
ভারতকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে সৌদি আরব
স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিপ্রি)-র প্রতিবেদনে শঙ্কা জাগানো ইঙ্গিত৷ সারা বিশ্বে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় বেড়েই চলেছে৷ চলুন দেখা যাক ২০১৫ সালে অস্ত্র খাতে ব্যয়ে কোন দেশ কোন অবস্থানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Xinhua/P. Thapa
অস্ত্র কেনায় ২০১৫-র সেরা সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গণতন্ত্র নেই৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নিয়মিত৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরব সরকারের উদ্যোগ এবং আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই৷ অস্ত্র ক্রয়ে ৩ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ২০১৫ সালের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হয়ে গেছে সৌদি আরব৷ ২০১৪ সালে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত, সৌদি আরব ছিল দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: AFP/Getty Images
সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে ভারত
বরাবরের মতো এখনো রাশিয়ার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রয় করে ভারত৷ সিপ্রি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশও ভারত৷ ২০১৫ সালেও এই খাতে ৩ হাজার ৭৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তারা৷ ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এক বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় সবার ওপরে ছিল ভারত৷ এবার শীর্ষে উঠে এসেছে সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images
অবাক করেছে অস্ট্রেলিয়া
আগের বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারকদের তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: U.S. Navy photo/courtesy Lockheed Martin/Getty Images
চতুর্থ মিশর
মিশরও দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত৷ সে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে অস্ত্র ক্রয়ও বাড়ছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ১ হাজার ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সে বছরের সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মিশর৷ এক বছর আগে ২২তম স্থানে তারা!
ছবি: dapd
পঞ্চম স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত!
সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্সের পরই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে তাদের মোট ব্যয় ১ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ডলার৷ ব্যয় বাড়িয়ে এক বছরে ১১ তম স্থান থেকে এক লাফে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ecpad Handout
ইরাকও আছে অস্ত্র ক্রয়ের প্রতিযোগিতায়
ইরাকের মানুষ রক্তপাতহীন একটি দিন কবে পাবে কে জানে! এখন যে যুদ্ধ চলছে সেখানে ইরাকি সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ সুন্নি মুসলমানদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ফলে অস্ত্র ক্রয় আরো বেড়েছে৷ ২০১৫ সালেই এই খাতে মোট ১ হাজার ২১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ ফলে ২০১৪ সালের শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ১৫তম স্থান পাওয়া ইরাক ২০১৫ সালে ৯ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
চীন পিছিয়েছে
২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা দেশগুলোর তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল চীন৷ পরের বছর ১ হাজার ২১৪ মিলিয়ন ব্যয় করেও সপ্তম স্থানে নেমে গেছে তারা৷ এটা অবশ্য শুধু এক বছরে অস্ত্র আমদানিতে মোট ব্যয়ের হিসেব৷ চীন শুধু অস্ত্র আমদানি করে না, বিক্রিও করে৷ শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার পরই তাদের স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Color China Photo/Z. Lei
ভিয়েতনামও আছে
২০১৪ সালে এক বছরে অস্ত্রখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল ভিয়েতনাম৷ উন্নয়নশীল এই দেশটি ২০১৫ সালে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও এক ধাপ পিছিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look
অস্ত্র ক্রয়ে সমস্যা নেই গ্রিসের!
চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে গ্রিসে৷ অন্যদিকে অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রবণতাও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ৭৬২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গ্রিস৷ ফলে এক বছরে অস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷ আগের বছর ৩৩তম স্থানে ছিল গ্রিস৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
এক ধাপ পিছিয়েছে পাকিস্তান
২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে মোট ৭৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে পাকিস্তান৷ বৈরি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে দু’হাজার মিলিয়নের চেয়েও কম ব্যয় করে তারা এখন তালিকার দশম স্থানে৷ ২০১৪ সালে নবম স্থানে ছিল পাকিস্তান৷