মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিবাদমান দেশগুলির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বুধবার সৌদি আরবে আলোচনায় বসছেন৷ এদিকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কাতার৷
বিজ্ঞাপন
কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে মঙ্গলবার এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ এই বোঝাপড়ার আওতায় দুই দেশ যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেবে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন বন্ধ করার যে ডাক দিয়েছিলেন, কাতার সবার আগে সেই ডাকে সাড়া দিয়েছে বলে দাবি করছে৷
কাতারকে ঘিরে বর্তমান সংকট কাটাতে পারস্য উপসাগর অঞ্চল সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন৷ এমনকি তিনি খোলাখুলি কাতারের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন৷ টিলারসন বলেন, বর্তমান সংকটের ক্ষেত্রে কাতারের সরকার ‘ন্যায়সংগত' আচরণ করছে৷ অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে তিনি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশরের যৌথ অবস্থানের সমালোচনা করলেন৷ টিলারসন অবশ্য আশা করছেন যে, সংকটের সমাধান করতে কিছু অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে৷ তিনি কাতার থেকে প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ কুয়েতে ফিরে গেছেন৷
বুধবার সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে টিলারসন বিবাদমান সব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ এমনকি কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন তানিও সেখানে উপস্থিত থাকবেন৷ তিনি বাকি দেশগুলির উদ্দেশ্যেও এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ডাক দিয়েছেন৷
ওয়াশিংটন ও দোহার এই ঘনিষ্ঠতা ভালো চোখে দেখছে না ৪ দেশের জোট৷ তারা কাতারের উপর চাপ বজায় রাখতে চায়৷ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ তাদের এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, কাতারের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়৷ কাতারের কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন, সমর্থন ও আশ্রয় দেবার ক্ষেত্রে বাস্তবে কী করছে, এই ৪টি দেশ তার উপর কড়া নজর রাখবে৷ কাতারের অঙ্গীকারের উপর আস্থা রাখতে নারাজ এই দেশগুলি৷ মিশর জেদ্দাহ শহরে এই আলোচনার কথা ঘোষণা করে বলেছে, ৪টি দেশ ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাতারের সঙ্গে সমন্বয় করে চলবে৷
এদিকে মার্কিন প্রশাসনের কূটনৈতিক উদ্যোগকে জটিল করে তুলেছে ফাঁস হয়ে যাওয়া কিছু গোপন চুক্তির নথিপত্র৷ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েত এবং পরে বাহরাইন ও আমিরাত মিলে এক গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল৷ মিশর ও ইয়েমেনসহ এইসব দেশের বিরোধী ও বৈরি গোষ্ঠীগুলিকে মদত না দেবার ক্ষেত্রে বোঝাপড়া হয়েছিল সেই চুক্তিতে৷ কাতার সেই অঙ্গীকার লঙ্ঘন করায় বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছে মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএন৷
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷