জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে৷ এই রায় দ্রতই কার্যকর করা হবে৷ তবে কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা এ রায়ের রিভিউ আবেদন করবেন৷
বিজ্ঞাপন
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে গত ৫ই ফেব্রুয়রি প্রথমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল৷ এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এবং আসামি উভয়পক্ষ আপিল করে৷ গত ১৭ই সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়৷ সেই ৯৭০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে৷
ফেব্রুয়ারি মাসে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়কে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে গণজাগারণ মঞ্চ৷ তাদের আন্দোলনের মুখেই আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয়৷ এর আগে শুধুমাত্র আসামিপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল৷
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, এখন নিয়ম অনুযায়ী আপিল বিভাগ থেকে রায়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে যাবে৷ সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রায়টি পাঠানো হবে কারাগারে৷ এরপরই কারা-কর্তৃপক্ষ রায়টি কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে৷ তিনি বলেন, কারাগারে রায়টি যাওয়ার পর কাদের মোল্লা কারা-কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন৷ তিনি যদি এ আবেদন জানান, তাহলে কয়েকটি দিন সময় লাগলে পারে৷ তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে৷ আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড হয়েছে৷ তাই এখানে আপিলের কোনো সুযোগ নেই৷ নেই রিভিউ আবেদনের সুযোগও৷
ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে৷ এ বছর প্রথম রায়ে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযাগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় ‘বাচ্চু রাজাকার’ নামে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদকে৷
ছবি: AP
কাদের মোল্লার ‘বিজয়প্রতীক’, দেশজুড়ে বিক্ষোভ
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিতি পাওয়া কাদের মোল্লাকে৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় এবং রায়ের পর কাদের মোল্লা আঙুল উঁচিয়ে বিজয়প্রতীক দেখানোয় শুরু হয় বিক্ষোভ৷
কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে প্রবল অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দিলে আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষেরও আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়৷ এর আগে শুধু আসামিপক্ষের আপিল করার সুযোগ ছিল৷ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের পর জামায়াতে ইসলামীও বিক্ষোভে নামে৷ দলটি মনে করে, এ রায় যথার্থ হয়নি৷ সেই থেকেই শুরু রায়ের প্রতিবাদে হরতাল৷
ছবি: Reuters
সাঈদির ফাঁসির আদেশ
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল৷ প্রতিবাদে হরতাল ডাকে জামায়াতে ইসলামি৷ জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়৷ সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর-মন্দির লুট, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ স্টেশনে হামলা,অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ – সবই ঘটেছে, অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে তখন৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি দাবি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার কয়েকজন ব্লগারের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয় মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত-এ ইসলাম৷ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁদের ‘নাস্তিক’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন এ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে৷ চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখে সরকার৷
ছবি: Reuters
অবশেষে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ
মঙ্গলবার সংশোধিত আপিল আইনের আওতায় গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসি দিয়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় দেয় আপিল বিভাগ৷রায় ঘোষণার আগে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
উৎসবের আনন্দ
এ রায়ে আবার জেগে ওঠে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর৷ ‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ শুনে সেখানে আবার নামে মানুষের ঢল৷ অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি হতে চলেছে – এটাই তাঁদের আনন্দ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
জামায়াতের হরতাল, বিক্ষোভ
কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ রায়কে ‘ভুল’ দাবি করে, অভিযুক্ত সব নেতার মুক্তির দাবিতে এ হরতাল ডেকেছে তারা৷ আবার বিক্ষোভে নেমেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা৷কাদের মোল্লার আইনজীবী জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যালোচনার জন্য আবেদন করা হবে৷ তবে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ রায় পর্যালোচনার কোনো সুযোগ নেই৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
তবে কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে৷ রায়ের কপি পাওয়ার পর, তারা তা রিভিউয়ের আবেদন করবেন৷ তিনি বলেন, রিভিউ পিটিশনের সুযোগ সাংবিধানিক অধিকার৷ এই অধিকার অন্য কোনো আইন বলে কেড়ে নেয়া যায় না৷ আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা নেই যে, মৃত্যুদণ্ড কিভাবে কার্যকর করা হবে৷ তাই এক্ষেত্রে, জেলকোড অনুসরণ করতে হবে৷ আর জেলকোড অনুযায়ী রায়ের কপি পাওয়ার পর ২১ দিনের আগে এই রায় কার্যকর করা যাবে না৷
ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে যে, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কারাগারে নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং স্পর্শকাতর জায়গার নিরপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷