ছাত্র আন্দোলনকে পথ দেখাচ্ছেন গুরমেহের
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭সম্প্রতি ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ' বা এবিভিপি ও ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন' বা আইসা-র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে শিরোনামে আসে দিল্লির রামজস কলেজ৷ এই কলেজে আইসা সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে এবিভিপি কর্মী, সমর্থকদের বিরুদ্ধে৷ এ ঘটনায় ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছে বিজেপির ছাত্র সংগঠনটি৷ আর তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজের ছাত্রী গুরমেহের কৌরের টুইট৷
গুরমেহের কার্গিল শহিদ ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংহের মেয়ে৷ স্বভাবতই জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে দেশপ্রেমের ধ্বজাধারী বিজেপি৷
গত মঙ্গলবার এবিভিপি-র সঙ্গে অন্য ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষাবিদদের একাংশের নতুন গোলমাল বেধেছিল৷ দিল্লির রামজস কলেজে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার কথা ছিল পুলিশের খাতায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহী' জেএনইউ-এর ছাত্র নেতা উমর খালিদের৷ তাতেই আপত্তি জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ শুরু করে এবিভিপি৷ ফলে শেষমেশ ওই অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়৷ পরের দিন, বুধবার এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বিরোধী এসএফআই ও আইসা প্রতিবাদ মিছিল বার করে৷ কিন্তু, সেই মিছিলের ওপর লাঠি, রড নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে এবিভিপি-র বিরুদ্ধে৷ হামলায় ছাত্রদের পাশাপাশি আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষকও৷ ঘটনার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে সরব হন শিক্ষাবিদদের একাংশ৷ প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়ছে ফেসবুক, টুইটারেও৷
রাস্তায় নামেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা একাধিক কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা৷ কার্গিল শহিদের মেয়ে গুরমেহেরের বক্তব্য, ‘‘জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা এবিভিপি-র কাছে শিখতে রাজি নই আমি৷'' তাঁর মতে এবিভিপি যা করেছে তা ‘নৃশংস', ‘বিরক্তিকর' এবং ‘গণতন্ত্রের উপর হামলা'৷
গুরমেহেরের জন্ম জলন্ধরে৷ কার্গিলের প্রান্তে দেশের জন্য লড়াই করে বাবা যখন শহিদ হন, গুরমেহের তখন মাত্র দু'বছরের৷ এখন তিনি লেডি শ্রীরাম কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ গত বুধবার রামজস কলেজে দুই ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষের ঘটনার পরই ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেন গুরমেহের৷ তাতে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে রয়েছেন তিনি৷ প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী৷ আমি এবিভিপি-কে ভয় পাই না৷ আমি একা নই৷ দেশের প্রত্যেক পড়ুয়া আমার সঙ্গে আছে৷''
তাঁর আবেদন, এবিভিপি-র ভূমিকা নিয়ে তাঁর সঙ্গে যাঁরা একমত তাঁরাও একইভাবে প্রতিবাদ করুক৷ গুরমেহেরের মতো প্ল্যাকার্ড হাতে সেল্ফি তুলে তা প্রোফাইল পিকচার করুক৷ ‘স্টুডেন্টস এগেইনস্ট এবিভিপি' নাম দিয়ে ওই বক্তব্যগুলি পোস্ট হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থনের ঢেউ আছড়ে পড়ে৷
এদিকে, এই ফেসবুকে পোস্টের কারণে সোশ্যাল মিডিয়াতেই ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে গুরমেহেরকে৷ গুরমেহের জানিয়েছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ প্রোফাইল পিকচার খুললেই দেখা যাবে অনেকেই সেখানে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন৷ এমনকি আমাকে দেশবিরোধী আখ্যাও দেওয়া হচ্ছে৷ হুমকি দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণের৷ রাহুল নামে এক যুবক কমেন্ট করে জানিয়েছে, কীভাবে সে আমাকে ধর্ষণ করতে চায়৷''
কার্গিল শহিদের মেয়ের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে মুখ খোলেননি বিজেপি নেতারা৷ তবে রামজস কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় সাবিত্রীভাই ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিভিপি ও এসএফআই সদস্যরা৷
ওদিকে, এই ঘটনার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আসরে নেমে পড়েছেন দিল্লির মু্খ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিবাল৷ তিনি দাবি করেছেন, ‘‘দিল্লি পুলিশ বিজেপির এজেন্ট হিসেবে পড়ুয়াদের উপরে হামলা করেছে৷'' এখন জেএনইউ-এ কানাইয়া কুমার বিতর্কের পর নতুন ছাত্র-বিরোধ কতদূর গড়ায় সেদিকেই নজর রাখছে সব মহল৷
বন্ধু, আপনিও কি গুরমেহেরের পাশে আছেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷