1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কানের ব্যাধি টিনিটাস

গুডরুন হাইসে/আরবি৮ ডিসেম্বর ২০১২

কানে একটানা শোঁ শোঁ, খড় খড় বা ঠক ঠক শব্দ হলে চিকিত্সা বিজ্ঞানে তাকে টিনিটাস বলা হয়৷ শব্দটা হঠাৎ করে আসে, আবার অনেক সময় চলেও যায়৷ তবে পাকাপাকিভাবে থেকেও যায় অনেকের কানে৷ ভুক্তভোগী ছাড়া সমস্যাটা কাউকে বোঝানো যায় না৷

Mann hält sich mit verzerrtem Gesicht die Ohren zu
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online

সারা বিশ্বে অনেক মানুষই টিনিটাসে ভুগছেন৷ কানের ভেতরের এই আওয়াজ বাইরে থেকে আসে না বলে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করাও দুরূহ৷ জার্মান টিনিটাস-লিগ'এর প্রধান প্রফেসর গ্যারহার্ড গ্যোবেল বলেন, ‘‘টিনিটাস এমন কোনো শব্দ নয়, যা মাপা যায়৷ এমনকি শ্রবণের নার্ভ যদি মস্তিষ্ক থেকে বিছিন্ন করে ফেলা হয়, তাহলেও শব্দটা শোনা যায়৷ অর্থাৎ এটা একটা ‘ফ্যানটম' বা কল্পনাপ্রসূত আওয়াজ৷''

কারো টিনিটাস শুরু হলে লক্ষ্য রাখতে হবে, এটা কিছুদিন পর দূর হয়ে যাচ্ছে, নাকি স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছে৷ প্রথম তিনটি মাসই বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ অনেক সময় টিনিটাস যে কারণে হয়েছে, তার চিকিত্সা করালে অসম্ভব বিরক্তিকর শব্দটিও দূর হয়ে যায়৷

জার্মানিতে প্রতি বছর তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ টিনিটাসে আক্রান্ত হন৷

টিনিটাস রোগ নয়, বরং রোগের উপসর্গ বলে গণ্য৷ কিন্তু একটানা শব্দ থেকে নানারকমের অসুখ বিসুখ দেখা দিতে পারে, যেমন ডিপ্রেশন বা বিষাদ কিংবা ভীতি৷

হই-হট্টগোল ও মানসিক চাপ

অনেক ক্ষেত্রে টিনিটাস শুরু হয় অনবরত শোনা আওয়াজ বা হঠাৎ বিকট কোন শব্দ থেকে৷ এ রকমটি হয় টিনিটাসে ভোগা ৩০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে৷ জার্মান টিনিটাস লিগ'এর তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত স্ট্রেস বা মানসিক চাপই এর কারণ৷ ৭৩ বছর বয়স্ক কুর্ট হেল্মবোল্ড এ রকমই একজন ভুক্তভোগী ব্যক্তি৷ তিনি সেলস ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন, যা ছিল অনেক চাপের৷ ১৯৯৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে এক টানা শোঁ শোঁ শব্দ তাঁর কানে বেজেই চলেছে৷

হেল্মবোল্ড'এর ভাষায়, ‘‘আপনি যদি গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে হাই ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনের নীচে দাঁড়ান, তাহলে বাঁশির শব্দের মত একটা আওয়াজ আসতে পারে৷ এইরকমই একটা আওয়াজ আমার কানে বাজতে থাকে৷'' আসলে ভুক্তভোগী ছাড়া কাউকে এটা বোঝানো যাবে না৷ ১৯৯৮ সালে হেল্মবোল্ড ভুক্তভোগীদের নিয়ে একটি পারস্পরিক সাহায্যের গ্রুপ গড়ে তোলেন৷ তাঁর স্ত্রীও সমস্যাটা ভালভাবে বুঝতে পারেন, কেননা তিনি নিজেও টিনিটাসে ভুগছেন৷

ছবি: Fotolia/Alexander Raths

টিনিটাস-এর সমস্যা মস্তিষ্কে, কানে নয়

শ্রবণের পদ্ধতিটা অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল৷ ছোটখাট ত্রুটিই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে৷ যে কোনো আঘাতই শ্রবণশক্তির হানি করতে পারে৷ যে কোনো আওয়াজেই অতি সংবেদনশীলতা বা টিনিটাস দেখা দিতে পারে৷ অন্তঃকর্ণের ক্ষতি হলে ত্রুটিপূর্ণ সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়৷ এর সঙ্গে মানসিক চাপ বা বাইরের হট্টগোল যোগ হলেও টিনিটাস হতে পারে৷ এছাড়া কানের অসুখ-বিসুখ হলেও এই সমস্যাটা দেখা দিতে পারে৷

টিনিটাস হওয়ার আর একটা কারণ কানে কম শোনা৷ আশেপাশের শব্দ কম শোনার কারণে টিনিটাস পুরোভাগে চলে যায়৷ এ ক্ষেত্রে শ্রবণযন্ত্র সাহায্য করতে পারে৷ এর ফলে স্বাভাবিক শব্দ পৌঁছায় মস্তিষ্কে এবং টিনিটাসের শোঁশোঁ বা খড়খড় শব্দ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে৷

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আঘাত থেকে টিনিটাস

ঘাড়ে খিঁচুনি, চোয়ালের হাড় বা মেরুদণ্ডে আঘাতের ফলেও কানে আওয়াজ সৃষ্টি হতে পারে৷ একারণে চিকিত্সার কয়েকটি বিভাগ, যেমন নাক-কান-গলা ও অস্থির চিকিৎসক এবং ফিজিও থেরাপিস্টরা একযোগে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারেন৷ এমনকি দন্তরোগের বিশেষজ্ঞরাও চোয়ালের কোনো অসুবিধার কারণে টিনিটাস হয়েছে কিনা, তা রোগীদের সহযোগিতায় বের করার চেষ্টা করেন৷

কুর্ট হেল্মবোল্ড বলেন, ‘‘টিনিটাসে আক্রান্তরা ২৪ ঘণ্টাই আওয়াজ শোনেন৷ এটা তারা বন্ধ করতে বা এড়িয়ে যেতেও পারেন না৷ কেউ কেউ বলেন, আমার মাথায় যেন কোনো ড্রিল মেশিন চলছে৷ কিংবা অনেকে বলেন ওয়াশিং মেশিন চলার কথা৷ এই ভাবে নানা রকম শব্দের কথাই শোনা যায় টিনিটাসের রোগীদের কাছে৷''

হেল্মবোল্ড তাঁর কানের শব্দের সঙ্গে একটা আপোশ করে নিয়েছেন৷ ঘুমের সময় টিনিটাস প্রবল হয়ে উঠলে হালকা সংগীত ছেড়ে দেন তিনি৷ চারিদিক একেবারে নিস্তব্ধ হলে টিনিটাস প্রকট হয়ে ওঠে৷ কেননা এই পরিবেশে শব্দটি থেকে মনযোগ ফেরানো যায় না৷

গ্যোবেল ব্যাখ্যা করে জানান, ‘‘এ যেন ঘন অন্ধকারে ছোট্ট টি-লাইটের মত৷ যা কিছুতেই চোখ এড়িয়ে যায় না৷ কিন্তু আমি যদি জানালা খুলে ফেলি বা ঘরে আলো জ্বালিয়ে দেই, তাহলে হয়তো এতে হাত পুড়িয়ে ফেলতে পারি৷ কেননা চারিদিক আলোকিত হওয়ায় টি-লাইটটি চোখে পড়বে না৷ নীরব পরিবেশে টিনিটাসও অনেকটা এই রকম অনুভূত হয়৷''

বিশ্বব্যাপী সমস্যা

টিনিটাস বিশ্বজোড়া এক সমস্যা৷ এজন্য ‘ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অফ টিনিটাস অ্যাসোসিয়েশনস' একটি ইন্টারনেট সাইট খুলেছে৷ শুরুতেই ১৬টি দেশের পতাকা দেখা যাবে৷ একটি পতাকায় ক্লিক করলেই উঠে আসবে সেই দেশের ভাষায় টিনিটাস সম্পর্কে নানা তথ্য, ফিনল্যান্ড থেকে তুরস্ক, ইটালি থেকে পোল্যান্ড পর্যন্ত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ