1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কান উৎসবে কলকাতার মেয়ে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়৬ মে ২০১৩

এ বছরের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে কলকাতার মেয়ে শ্রীময়ী ভট্টাচার্যের প্রথম ছবি ‘শ্যাডোজ’৷ স্বপ্নরা আসলেই সত্যি হয়, বলছেন উচ্ছ্বসিত শ্রীময়ী৷

ছবি: Sreemoyee Bhattacharya

ছবির দৈর্ঘ্য নেহাতই কম৷ মাত্র ১২ মিনিট৷ তার মধ্যেই একটা চিরন্তন সমস্যার ছায়াকে ধরতে চেয়েছেন প্রথমবারের পরিচালিকা শ্রীময়ী ভট্টাচার্য, তাঁর শ্যাডোজ ছবিতে৷ ছবির অন্তর্লীন কথাটা হল, জীবনে নতুন কিছু সংযোজন করতে চাইলে, আগে তার জন্যে জায়গা করতে হয়৷ বাড়িতে নতুন আসবাবকে জায়গা দিতে গেলে কখনও যেমন পুরনো আসবাব সরিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ে, যেমন নতুন জামা কেনার আগে ওয়ার্ডরোব থেকে পুরনো জামা বাতিল করতে হয়, অনেকটা সেরকমই৷

তবে ব্যাপারটা সবসময় এতটা সহজ এবং অনায়াস নাও হতে পারে৷ নতুন সম্পর্ককে জায়গা দিতে নষ্ট পুরনো সম্পর্ককে স্মৃতির শেকড় ছিঁড়ে সরিয়ে দিতে হলে, সেটা পুরনো আসবাব বা জামা বাতিল করার থেকে অনেক বেশি কষ্টকর৷ অথবা মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অতীতের নাছোড় কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা, যেটা ভাল কিছু ভাবতে দেয় না, ভয় দেখায়, সংশয়ে ফেলে, দুর্বল করে দেয়, কখনও সময় আসে তার থেকে মুক্ত হওয়ার৷

কাহিনিচিত্র তৈরির সেটে পরিচালক শ্রীময়ী ভট্টাচার্যছবি: Sreemoyee Bhattacharya

শ্রীময়ী অবশ্য বলছেন, তাঁর ছবি অনেক বেশি সাসপেন্স থ্রিলার ঘরানার৷ তবে গল্পটা তিনি পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের নরউইচে বিপন্ন শিশুদের একটি সরকারি স্কুল থেকে৷ পেশায় এঞ্জিনিয়ার, একটি ভারতীয় সফটওয়্যার সংস্থার চাকুরে শ্রীময়ী কাজের সূত্রেই থাকতেন নরউইচে৷ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা আজকাল তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন কর্মসূচির অংশ হিসেবে যেমন নানা সমাজসেবামূলক প্রকল্পে অংশ নেয়, তেমনই এক প্রকল্পের সুবাদে নরউইচের ওই স্কুলটিতে গিয়েছিলেন শ্রীময়ী৷ ওখানকার বাচ্চাদের ক্লাসঘরের দেওয়ালে ছবি এঁকে ওদের জীবনে কিছুটা রঙ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য৷ কিন্তু সেখান থেকে শ্রীময়ী কিছু অন্ধকারের গল্পও শুনে আসেন, কিছু বিপর্যস্ত শৈশবের গল্প৷

এর পাশাপাশি, ইংল্যান্ডের রেনডান্স ফিল্ম স্কুলে ফিল্ম ডিরেকশনের একটি সপ্তাহান্তিক ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন শ্রীময়ী৷ সবে সেটা সম্পূর্ণ অন্যতর কারণে৷ শ্রীময়ী নিজেই বলছেন যে, চলচ্চিত্র-উৎসাহী বলতে যা বোঝায়, তেমনটা তিনি কখনও ছিলেন না৷ বরং তাঁর আকৈশোর সখ্যতা কবিতার সঙ্গে৷ কবিতা লিখতেন, কলকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুরা মিলে লিটল ম্যাগাজিনও বার করেছেন৷ কিন্তু নিজের বাংলাভাষী শহরটার বাইরে, দেশের বাইরে গিয়ে তাঁর প্রথম উপলব্ধি হল, কবিতা আজকাল আর কেউ পড়ে না৷ বাংলা কবিতা তো পড়েই না৷ আর চারপাশের মানুষেরা যদি অন্য ভাষা, অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা লোক হয়, তাদের কাছে নিজের মনের কথা উজাড় করে দেওয়া যায় না৷ প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে ওঠে না তাদের সঙ্গে৷ সেই বিপন্নতা কাটিয়ে উঠে যোগাযোগ গড়ে তোলার তাগিদ থেকেই শ্রীময়ীর এক নতুন প্রকাশভঙ্গী, একটা নতুন ভাষার দরকার হয়ে পড়েছিল৷ এবং তাঁর মনে হয়েছিল, চলচ্চিত্রই হতে পারে সেই মাধ্যম, যেটা নির্দিষ্ট কোনও ভাষা বা সংস্কৃতির আঙ্গিকে আটকে থাকবে না৷ সেই অর্থে শ্যাডোজ-ই শ্রীময়ীর সেলুলয়েডে লেখা প্রথম কবিতা৷

ছবির দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ মিনিটছবি: Sreemoyee Bhattacharya

কিন্তু কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচনের ব্যাপারটা ঘটে গেল কীভাবে? শ্রীময়ীর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে, কান থেকে ডাক এসেছে৷ তবে নিজের ছবিটা নির্বাচনের জন্য কানে পাঠানোর সময়ই কিন্তু কান যাতায়াতের উড়ান বুক করে রেখেছিলেন৷ যদি শেষ পর্যন্ত শ্যাডোজ নির্বাচিত না হতো? তা হলে কী হতো জানি না, হাসতে হাসতে বললেন শ্রীময়ী৷ তবে কান উৎসবে নিজের প্রথম ছবিটা পাঠাবেন, সেটাই তো কোনওদিন ভাবেননি৷ নেহাত ভূতটা মাথায় চেপে বসেছিল তাই৷ ছবির শুটিং শেষ আর কানে ছবি পাঠানোর শেষ তারিখের মধ্যে এক সপ্তাহের ফারাকও ছিল না৷ চার দিন – চার রাত, না ঘুমিয়ে, প্রায় অভুক্ত থেকে ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শেষ করেছিলেন৷

কাহিনিচিত্রের একটি দৃশ্যছবি: Sreemoyee Bhattacharya

শ্যাডোজ-এর শুটিং এবং পরবর্তী সম্পাদনা ইত্যাদি কাজ পুরোটাই হয়েছে বিদেশে৷ ছবির অভিনেতা আর কলাকুশলীরাও প্রায় সবাই বিদেশি৷ তবে শ্রীময়ীর আলোকচিত্রী উপমহাদেশের, জন্মসূত্রে পাকিস্তানি উসমান ফারুক৷ আরও একটা কলকাতা-সংযোগ আছে শ্যাডোজ-এর৷ এই ছবির সুরারোপ করেছেন অভীক মিত্র৷ আর ক্যামেরার পিছনে শ্রীময়ী নিজে তো ছিলেনই৷

৬ মে কান রওনা হচ্ছেন পরিচালিকা৷ ফিরে আসার পর কলকাতাতে একটা স্ক্রিনিং হবে শ্যাডোজ-এর৷ কিন্তু আরও একটা ব্যাপার ঘটতে পারে৷ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পেশা এবং চাকরিবাকরি ছেড়ে পুরোপুরি চলচ্চিত্রে আত্মসমর্পণ করতে পারেন শ্রীময়ী ভট্টাচার্য৷ বাবা-মা কি শুনেছেন পরিকল্পনার কথা? ওঁরা সবসময় আমাকে সব ব্যাপারে উৎসাহ দেন৷ উজ্জ্বল শোনাল শ্রীময়ীর গলা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ